বিডিলনিউজ: বহুল আলোচিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন (সংশোধন) বিল আজ রবিবার জাতীয় সংসদে পাস হবে। এ বিলটি পাস হলে শাহবাগের গণজাগরণের প্রজন্ম সেনাদের দাবি পূরণে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপীল করতে পারবে বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষ। সংশোধিত আইনটি ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
গত বুধবার প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে বিলটি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। ওই দিন বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এক দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। ওই দিন সন্ধ্যাতেই বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ, বাদী ও বিবাদীপক্ষকে আপীল করার সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব করে কমিটি। এছাড়া ৩০ দিনের মধ্যে আপীল এবং ৬০ দিনের মধ্যে আপীল নিষ্পত্তির প্রস্তাব করা হয়। মূল সংশোধন বিলে সংক্ষুব্ধ যে কোন ব্যক্তি আপীল করার সুযোগ পাবেন বলা হলেও কমিটির সুপারিশে তা রহিত করা হয়। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বিলের রিপোর্ট উত্থাপন করা হয়। কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া বিলের রিপোর্ট উত্থাপন করেন। আজ রবিবার বিলটি পাস হবে বলে জানা গেছে।
কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ২১ (২) উপধারায় বলা হয়েছে, সরকার অথবা বাদী-বিবাদী পক্ষ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের খালাস কিংবা দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপীল করতে পারবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বিবাদীপক্ষের আপীল করার সুযোগ মূল আইনে আগে থেকেই ছিল। তবে বাদী বা রাষ্ট্রপক্ষের আপীলের বিধান ছিল না। কুখ্যাত কাদের মোল্লার ৬টি মামলার মধ্যে ৫টিতে অভিযোগ প্রমাণিত উল্লেখ করে দুটিতে যাবজ্জীবন ও তিনটিতে ১৫ বছর করে কারাভোগের শাস্তি দেন ট্রাইব্যুনাল। আর একটি অভিযোগে কাদের মোল্লাকে খালাস দেয়া হয়। অবশ্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত তরুণ সমাজ ওই রায় প্রত্যাখ্যান করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- দেয়ার দাবি জানায়। তারা শাহবাগে এক অভূতপূর্ব গণজাগরণ সৃষ্টি করে। যা বিশ্বব্যাপীও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তাদের আবেগ-অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সরকার আইনটিতে সংশোধন আনার উদ্যোগ নেয়। বিলটি পাস হলে দ-াদেশ ও খালাস দুটি ক্ষেত্রেই আপীল করতে পারবে রাষ্ট্রপক্ষ ও বাদী।
অন্যদিকে আইনী প্রক্রিয়ায় বিশৃঙ্খলা এড়াতে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের আপীল করার সুযোগ বাদ দেয়া হয়েছে। কমিটির মতে, যে কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির আপীলের সুযোগ রাখলে যে কোন মামলায় হাজার হাজার আপীল হতে পারে। এতে পুরো বিচার-প্রক্রিয়া বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়তে পারে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সব নাগরিককে আইনের সমান আশ্রয় লাভের যে অধিকার দেয়া হয়েছে, ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করার ক্ষেত্রে ২১ (১) ধারায় তা প্রতিফলিত হয়নি। সে জন্য ট্রাইব্যুনালের বিচারের ক্ষেত্রে উভয়পক্ষের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে আইনে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ কারণে ২১ (২) ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
দণ্ডিত ব্যক্তির আপীলের জন্য ২১ (১) উপধারায় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তি দ্রুত বিচার লাভের অধিকারী। এ কারণে সংশোধনীতে আপীল নিষ্পত্তির মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে।
Discussion about this post