নাহরিন তানিয়া
আমরা সরকার কি করলো এ বিষয়ে সব সময় সমালোচনা করি। এটা করা খারাপ না, এ থেকে ভালো কিছু নিয়ে সরকার সংশোধন হতে পারে কিন্তু আমরা তথা দেশের নাগরিক কেমন কিছু বিষয় না বলেই পারছি না।
ঢাকা শহরের রাস্তার উপর যে ময়লা গুলো থাকে সেটা তো আমরাই ফেলি অথচ এই আমরা দেশের বাইরে গেলে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে ময়লা ফেলি কারণ সে দেশে আইন ভঙ্গ করলে উপায় নাই।
আবার গাড়ির হর্ণ। আমাদের ড্রাইভারই গাড়ি জ্যাম এ দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই এমনভাবে হর্ণ বাজায় যে দুই পাখা লাগিয়ে উড়ে যাওয়ার উপায় থাকলেও হর্ণ বাজাতে বাজাতে যেতো আর আমরা খুশি হয়ে বাহ্বা দিতাম। অথচ দেশের বাইরে গেলে দেখি শুনশান নিরবতা রাস্তায়। কারণ তারা জানে হর্ণ বাজালে ধরা হবে।
এক ঢাকা শহরে বাহনের কোন শেষ নাই সব রাস্তাই যে যার মতো ঢুকে পরে ইচ্ছে হলে গাড়ি থামায় ইচ্ছে মতো পাকিং করে আবার ইচ্ছে হলে গাড়ি চালাতে শুরু করে। রাস্তায় বাস গুলো এমন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে যেন ঐ ড্রাইভার বা বাস মালিকের চৌদ্দ বংশ ঐ রাস্তার মালিক।
অফিসে গিয়ে ঘুষখোরদের আমরাই লোভ দেখাই আমি না দিলে আরেকজন দিবে কাজ করাতেই হবে এবং তা ঘুষ দিয়ে। তাই আমাদের সততা এখানে প্রশ্নবিদ্ধ।
যারা লঞ্চ এ যাতায়াত করেন বিশেষ করে বরিশাল ও ঐ অঞ্চলের মানুষেরা। তারা যায় লঞ্চ এ আর মনে করে টাইটানিক জাহাজে যাচ্ছে। বালিশ কাঁথা খাবার দাবার সব নিয়ে উঠে। খেয়ে পুরো লঞ্চ নোংরা করে। অথচ লঞ্চ এ খাবারের জায়গা আছে।
আমাদের সরকারি অফিস গুলো আছে যারা চাকরী করেন তারা বেতন বাদে যে ঘুষ পায় তার কিছু অংশ যদি নিজের টেবিল মেঝে পরিষ্কার করতো কিছুটা হলেও শান্তি পেতাম। টেবিল চেয়ার দেখলে মনে হয় দাদার আমলে রেখে গিয়েছে উনারা প্যারাক মেরে বসে দিন কাটাচ্ছে কোন মতে।
আমরা বাঙালি কিন্তু এই বাংলা ভাষাকে আমরা কতো ভাবে ইনিয়ে বিনিয়ে উচ্চারণ করি। মনে হয় যতো অনিহা ওখানেই। অথচ ইংরেজী শেখার জন্য বলার জন্য কতো দৌড় ঝাপ।
এবার আমাদের দেশের কাপড় রেখে আমি শুনেছি কলকাতায় ঈদের শপিং করতে গিয়েছে কোটি কোটি টাকা নিয়ে এবার। অথচ আমরা কি বলতে পারবো? ইন্ডিয়ার কেউ পূজার মাকেটিং করেছে ঢাকায় এসে?
আমাদের দেশের অনেক ভালো ডাক্তার আছে কিন্ত টাকার লোভ এর কারনে অনেকে সেবা দিতে পারছে না। সারারাত অপারেশন সারাদিন চাকরি সন্ধ্যায় রোগী দেখা এ যেন টাকা নামক সোনার হরিণের লোভ শেষ করে ফেলছে তাদের। তাই দিশা না পেয়ে ইন্ডিয়া দৌড়াচ্ছে মানুষ। অথচ সেখানে আমাদের দেশের চাইতে খারাপ ডাক্তার দেখাচ্ছে। তাতে কি সেই ডাক্তাররা তো আর দুই ঘন্টা ঘুমায় না। না টাকার ব্যাগ বাড়ি নিয়ে যেতে হয়। মাথা ঠান্ডা করে রোগী দেখে।
আমাদের দেশে খাবার সবাই জানি স্বাস্থ্যকর না। তারপরও আমাদের সেই দামী ফল খেতে হবে। অথচ আমাদের দেশের ফল আছে একটু ধৈর্য্য ধরে সেটা খাই।
আইন আছে, অভিযোগ কেন্দ্র আছে, জানাই, তা না চোখ বুজে চলি।
আমাদের দেশের মানুষের আইন মানা, সচেতনতা, দেশপ্রেম কম,আমরা আত্মকেন্দ্রিক, সাধারন জ্ঞান কম পরচর্চা বেশি করি আর অন্যের উপর দোষ চাপানোর প্রবণতা বেশি। নিজে শুধরালে যে দেশের উপকার এ দেশের মানুষের উপকার আমাদের উপকার এটা আমরা বুঝি না শুধু সরকার সব করে দিবে আর আমরা জঙ্গল বানাবো এ চিন্তা করলে মধ্যম আয়ের দেশ হবে ঠিকই আমরা অধম হয়েই রইবো।
লেখক: আইনজীবী ও সংস্কৃতি কর্মী
Discussion about this post