নিজস্ব প্রতিবেদক: সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে বহুল প্রত্যাশিত ও কাঙ্ক্ষিত সংলাপ শুরু হবে। সংলাপে আ’লীগের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন নেতৃত্ব দেবেন। এতে সরকারি দল সংবিধানের আলোকে এবং ঐক্যফ্রন্ট সাত দফাকে গুরুত্ব দেবে।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা আলোচনায় বসবেন।
বুধবার প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২২ সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়। এর আগে ঐক্যফ্রন্টের ১৬ সদস্যের তালিকা সরকারের কাছে হস্তান্তর করে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২২ সদস্যের দলে রয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সংলাপে উপস্থিত থাকবেন। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল্লাহ এবং ড. আবদুর রাজ্জাক আলোচনায় অংশ নেবেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু এমপি, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এবং আইন সম্পাদক শ. ম. রেজাউল করিমও থাকছেন এ সংলাপে। ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদ একাংশের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাসদ আরেক অংশের কার্যকরী সভাপতি মাঈনুদ্দীন খান বাদল সংলাপে অংশ নেবেন।
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি সংলাপে অংশ নেবেন। বাকিরা হলেন- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার মুহম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার এবং মির্জা আব্বাস। জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির পক্ষে সংলাপে প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনজন। তারা হলেন- দলটির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, সহসভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন। গণফোরামের নেতাদের মধ্যে থাকবেন দলটির নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু। নাগরিক ঐক্যের পক্ষে থাকবেন দলটির উপদেষ্টা এসএম আকরাম ও আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার প্রতিনিধিত্ব করবেন সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহম্মেদ ও আ ব ম মোস্তফা আমিন। এছাড়াও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও অংশ নেবেন সংলাপে।
এ রাতে দেশি এবং বিদেশিদের নজর থাকবে গণভবনের দিকে। শেষ পর্যন্ত সংলাপ সফল হয় কিনা তা দেখার অপেক্ষায় পুরো জাতি। ছাড় দিয়েও হলে দুই পক্ষকে সমাধানে পৌঁছা উচিত বলে মনে করছেন সব শ্রেণী-পেশার মানুষ। সংলাপ সফল হবে এমন প্রত্যাশার মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার এই সংলাপকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্টজনরা। আলোচনা শেষে নৈশভোজের আয়োজন রয়েছে। এর মেন্যুতে থাকছে ড. কামালের পছন্দের চিজ কেকসহ ১৭ পদের খাবার।
তবে এ ডিনারে অংশ নেবে না ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। এ প্রসঙ্গে ফ্রন্টের নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা ডিনারে অংশ নেব না। আমরা তো সংলাপে যাচ্ছি, ডিনার করতে তো যাচ্ছি না। সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে প্রধানমন্ত্রীর ডিনারে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। তাদের এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি ফ্রন্টের নেতাদের জানালে তারাও এতে সম্মতি জানান।
সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটের এটাই প্রথম সংলাপ। এ উপলক্ষে দু’পক্ষেরই প্রস্তুতি চূড়ান্ত। নানা কৌশল নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন। সাত দফার ভিত্তিতেই আলোচনা করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ সরকারের ওপরই বেশি জোর দেয়া হবে। এর পাশাপাশি সরকার চাইলে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখাও দিতে পারেন তারা। খালেদা জিয়ার সাজার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরবেন। সাত দফা দাবি না মানলে বিকল্প ভাবনাও কি হবে সেটাও চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। অন্যদিকে সরকার সাত দফা দাবি এড়িয়ে ফ্রন্টকে বিকল্প প্রস্তাব দিতে পারে।
আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, আলোচনার শুরুটা সৌহার্দ্য ও শুভেচ্ছাসিক্ত হবে। আওয়ামীলীগের তরফ থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের ২টি প্রশ্ন ও ৩টি প্রস্তাব দেয়া হতে পারে। ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে প্রথম সংলাপে তাদের কোনোভাবেই নিরাশ করতে চায় না আওয়ামী লীগ। নির্বাচন নিয়ে বেশ কয়েকটি বিষয়ে সহমতে আসতে চান শাসক দলের নেতারা। আগামী নির্বাচন, নির্বাচনকালীন সরকার ও পরবর্তী সরকার নিয়ে ড. কামাল হোসেনকে তিনটি প্রস্তাব দেয়া হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচনকালীন সরকারে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব দেয়ার সম্ভাবনা আছে। গুরুত্বপূর্ণ ৩টি মন্ত্রণালয় দেয়ার কথা থাকতে পারে ওই প্রস্তাবে। সম্ভাবনা আছে নির্বাচন পরবর্তী ঐকমত্যের সরকারে তাদের অংশগ্রহণের প্রস্তাব দেয়ার। কাক্সিক্ষত মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নিতে চাইলে আলোচনাও করতে পারবেন আমন্ত্রিত নেতারা। আর এই দুই প্রস্তাবে সম্মতি এলে নির্বাচন ও অংশগ্রহণ নিয়ে আরেকটি সমঝোতার প্রস্তাব দেয়া হতে পারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে।
সংলাপ সফল করতে দু’পক্ষকে সহনশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা বলেন, আলোচনার আগেই দেয়াল তোলা যাবে না। তেমনি কোনো বিষয়ে অনড় থাকা যাবে না। ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। উভয় পক্ষের সদিচ্ছা থাকলেই ভালো কিছু হতে পারে। গণমানুষের প্রত্যাশা সংলাপের মাধ্যমে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হোক। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হোক। আলোচনা থেকে দেশের ভালো হয় এমন কিছু বেরিয়ে আসুক। তরুণ সমাজ মনে করছেন দু’পক্ষ যেহেতু বসছে কাজেই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসার সম্ভাবনাই বেশি। তাদের মতে, উভয়পক্ষ ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়ে বসলেই সম্মানযোগ্য সমাধান আসতে পারে।
নৈশভোজের মেন্যু : আজ সংলাপে অংশ নেয়া নেতাদের পছন্দের খাবার দিয়ে নৈশভোজের টেবিল সাজানো হবে। এ লক্ষ্যে আগেই নেতাদের পছন্দের খাবারের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। আয়োজনের কমতি রাখেনি গণভবন। অনেকটা রাজসিক আয়োজন ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। ড. কামালের বিশেষ পছন্দের খাবার চিজ কেকসহ ১৭ ধরনের খাবার দিয়ে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের আপ্যায়ন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এ চিজ কেক আনা হচ্ছে হোটেল র্যাডিসন থেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী-১ (এপিএস-১) এবং প্রটোকলের চৌকস কর্মকর্তারা এসব খাবার প্রস্তুতের তদারকি করছেন। খাবারের ব্যবস্থাপনায় থাকছে পর্যটন কর্পোরেশন। খাবারের মেন্যুতে থাকছে পিয়ারু সর্দারের মোরগ পোলাও, চিতল মাছের কোপ্তা, রুই মাছের দো-পেঁয়াজা, চিকেন ইরানি কাবাব, বাটার নান, মাটন রেজালা, বিফ শিক কাবাব, মাল্টা, আনারস, জলপাই ও তরমুজের ফ্রেশ জুস, চিংড়ি ছাড়া টক-মিষ্টি স্বাদের কর্ন স্যুপ, চিংড়ি ছাড়া মিক্সড নুডলস, মিক্সড সবজি, সাদা ভাত, টক ও মিষ্টি উভয় ধরনের দই, মিক্সড সালাদ, কোক ক্যান এবং চা ও কফি।
Discussion about this post