ভয়াবহ পাহাড় ধসের পর রাঙামাটিতে চালু করা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) থেকেই এসব আশ্রয়কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এসব কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া পাহাড় ধসের শিকার মানুষদেরও প্রায় সবাই চলে গেছেন নিজেদের বাড়িতে। যারা এখনও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রয়েছেন তারা বলছেন, সরকারি সহায়তায় তাদের পুনর্বাসন সম্ভব হবে না বলেই তারা আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়ছেন না।
গত ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে। এরপর ক্ষতিগ্রস্তরা দীর্ঘদিন ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন। এসব মানুষদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু সহায়তাও দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ মানুষই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে চলে গেছেন। কেবল জিমনেশিয়াম আশ্রয়কেন্দ্রে ১৮টি ও হাসপাতাল ছাত্রবাসের আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে দুইটি পরিবার।
রুপনগর এলাকার সুমি আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রশাসন শুধু ছয় হাজার টাকা, দুই বান্ডিল ঢেউটিন আর ৩০ কেজি চাউল দিয়ে বিদায় করে দিলো। আমার ঘর সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছিল। এই সহায়তা দিয়ে আমার কী হবে? আমাদের পুনবার্সনের কথা ছিল। কিন্তু সেটাও না করে একেবারে খালি হাতে আমাদের বিদায় করে দিলো।’
এখনো যারা আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে চলে যাননি, তাদের মধ্যে ভেদভেদী এলাকার হিরো বড়ুয়া বলেন, ‘আমরা ঘরবাড়ি কিছুই নাই। আমার যাওয়ার কোনও জায়গা নাই। প্রশাসন যা দিয়েছে, তা আমার কোনও কাজেই আসবে না। আমার বিষয়টি আবার বিবেচনার জন্য আবেদন করেছি প্রশাসনের কাছে।’
রাঙামাটি জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা বিশ্বনাথ মজুমদার বলেন, ‘আগেই ঘোষণা ছিল যে ৭ সেপ্টম্বরের মধ্যে সব আশ্রয়কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে। এখনও কিছু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। তাদের ব্যাপারে কোনও সিন্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমাদের পক্ষে আর আশ্রয়কেন্দ্রে খাবারের ব্যবস্থা করা সম্ভব না।’
রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু সাহেদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী আশ্রয়কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের টিম মাঠে আছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কেউ বসতঘর নির্মাণ করছে কিনা, সেই ব্যাপারে তারা তদারকি করবেন।’
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুন রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড় ধসে ১২০ জন নিহত হন। এরপর থেকে ক্ষতিগ্রস্তরা রয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। পরে গত ৫ সেপ্টেম্বর পাহাড় ধসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাঙামাটি পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের ১৪০ পরিবারকে সরকারি ত্রাণ সহায়তার মাধ্যমে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বিদায় দেওয়া হয়েছিল। শুক্রবার বাকিদেরও বিদায় করে দেওয়া হয়েছে।
বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post