ডেস্ক রিপোর্ট: আসামের নাগরিকদের চূড়ান্ত তালিকা (এনআরসি) প্রকাশ করা হয়েছে। আসামের নাগরিকদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশকে সামনে রেখে কঠোর নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা রাজ্য। মোতায়েন করা হয়েছে ১০ হাজার আধাসামরিক বাহিনী ও পুলিশ। এই নাগরিক তালিকা প্রকাশের পর উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে এরই মধ্যে রাজ্যের অধিকাংশ স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
আজ শনিবার সকাল ১০টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টা) এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
এই ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস বা এনআরসি তালিকায় তারাই স্থান পেয়েছে যারা আসামের নাগরিক হিসেবে প্রমাণ দেখাতে পেরেছে। অর্থাৎ, এনআরসিতে তাদের নাম রয়েছে যারা প্রমাণ করতে পেরেছেন যে তারা ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে আসামে এসে হাজির হয়েছেন। নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য রাজ্যের সব অধিবাসীকে তাদের জমির দলিল, ভোটার আইডি এবং পাসপোর্টসহ নানা ধরনের প্রমাণপত্র দাখিল করতে হয়েছিল।
যারা ১৯৭১ সালের পর জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের প্রমাণ করতে হয়েছে যে তাদের বাবা-মা ওই তারিখের আগে থেকেই আসামের বাসিন্দা। খসড়া তালিকা অনুযায়ী, রাজ্যের মোট তিন কোটি ২৯ লাখ বাসিন্দা তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে সমর্থ হন। কিন্তু ৪০ লাখ মানুষ এই তালিকা থেকে বাদ পড়েন।
নাগরিকত্বের বৈধতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম কেটে দেয়া হতে পারে। এরপর নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কাগজপত্র চাওয়া হয় এবং ৩৬ লাখ ২০ হাজার মানুষ তালিকায় নাম ওঠানোর জন্য দলিলপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়াল রাজ্যবাসিকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই তালিকায় নাম না থাকলেই তিনি ‘বিদেশি’ বলে গণ্য হবেন না। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল, তার পর হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানোর সুযোগ থাকছে। আর তাই অকারণ আতঙ্ক বা গুজব ছড়ানো থেকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছে আসাম প্রশাসন। কিন্তু তাতেও যে অশান্তির আশঙ্কা পুরোপুরি এড়ানো যাচ্ছে না, তা বুঝেই আরও ২০,০০০ অতিরিক্ত আধাসামরিক বাহিনী আসামে পাঠিয়েছে মোদি সরকার। গুয়াহাটি-সহ একাধিক স্পর্শকাতর এলাকায় বড় কোনও জমায়েত রুখতে জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা।
তবে বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় বাংলাদেশ। এ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের ঢাকা সফরের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এ বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সেসময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আসামের এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা নিয়ে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। এর প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে না।
তবে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশকে সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকেরা। এবিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ভারতের আসামে এনআরসি নিয়ে যা হচ্ছে তাতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। বরং ভারতের মানুষেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে, বাংলাদেশের এক ধরনের দুশ্চিন্তার কারণ অবশ্যই আছে। অতীতে, ১৯৯৮-১৯৯৯ সালের দিকে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে অনেককে বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা করেছিল ভারত। তাই এবারও বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, ঢাকা সফরকালে আসামের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন-সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিষয়টিকে ‘ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রানিয়াম জয়শঙ্করও।
এ/কে
Discussion about this post