বরগুনা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী তারিক সালমনের জামিন নামঞ্জুর নয়, তাকে জনরোষ থেকে বাঁচাতে নিরাপত্তার কারণে দুই ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়েছিল। ফলে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রচারিত হয়েছে তা সঠিক নয়।
সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে ইউনওকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে গতকাল রোববার বরিশালের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী হোসাইন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর দুই পৃষ্ঠার একটি চিঠি পাঠান।
তার আদালতে গত ১৯ জুলাই ইউএনও তারিক সালমনের জামিনের শুনানি হয়।
ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী হোসাইন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে পাঠানো জবাবে বলেন, মামলাটি দায়ের করা হলে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অমিত কুমার দে অভিযোগটি আমলে নিয়ে সমন জারি করেন। ১৯ জুলাই ধার্য তারিখে আসামি জামিনের আবেদন করেন এবং আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দাখিলের জন্য আবেদন করেন।
অপরদিকে, বাদীপক্ষ থেকে আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর জন্য আবেদন করা হয়। মামলাটি শুনানির সময় বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বাদী অ্যাডভোকেট ওবায়দুল্লাহ সাজু নিজে এবং তার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য এবং আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুছ, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ আবদুল কাদের এবং অ্যাডভোকেট আনিছ উদ্দিন আহম্মদসহ প্রায় ৮০ জনআইনজীবী। আর আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান।
চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, শুনানির সময় আদালত কক্ষে আইনজীবীদের উপস্থিতি এবং বারান্দা ও রাস্তায় উৎসুক জনসাধারণ ও মিডিয়াকর্মীদের উপস্থিতিতে কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান ছিল। তাই সে সময় উৎসুক জনতার রোষ থেকে ইউএনওর ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতে শুনানি মুলতবি করা হয় এবং তার আইনজীবীর আবেদন মোতাবেক কাগজপত্র দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ইউএনওকে আদালত কক্ষে বসতে বলা হয়।
ম্যাজিস্ট্রেট আরও বলেন, ইউএনওকে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে ডক থেকে আদালতকক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। মূলত অনাকাঙ্খিত পরিস্তিতি পরিহারের জন্যই তাৎক্ষণিক আদেশ না দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয় বলে ব্যাখ্যায় বলা হয়।
গাজী তারিক সালমন বরিশালের আগৈলঝাড়ার ইউএনও থাকাকালে গত স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে ছাপানো আমন্ত্রণপত্রে পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া এক শিশুর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করেন।
এ ঘটনায় বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সৈয়দ ওবায়েদুল্লাহ চলতি বছরের ৭ জুন বরিশাল মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে ওই ইউএনওর বিরুদ্ধে ৫ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন। মামলাটি আমলে নিয়ে বিচারক ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে তারিক সালমনকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে সমন জারি করেন।
গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে তারিক সালমনকে বরগুনা সদর উপজেলায় বদলি করা হয়। গত বুধবার ওই মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিনের আবেদন করেন তিনি।
আদালত প্রথমে তা নামঞ্জুর করে ইউএনওকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর দুই ঘণ্টা পর তাঁর জামিন মঞ্জুর করা হয়। জানাজানি হলে বিষয়টি নিয়ে সারাদেশে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়।
সুত্র জাগোনিউজ
Discussion about this post