ইউনিলিভারের আমদানি করা ৩২টি চালানে ফাঁকি দেওয়া প্রায় ৭৩ কোটি টাকা উদ্ধারে মাঠে নেমেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। প্রকৃত আমদানি পণ্যের নাম পাল্টিয়ে কম শুল্কের পণ্য দেখিয়ে বন্দর থেকে খালাস নিয়ে বিপুল পরিমান এ শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়।
২০১০ ও ২০১১ সালে আমদানি করা চালানে এ রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়। এরপর ২০১২ সালে একই কায়দায় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আনা চারটি চালানের মধ্যে দুটি চালান খালাস নিয়ে যাওয়ার পর রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি ধরা পড়ে।
পরে বাকি দুটি চালানের খালাস কার্যক্রম স্থগিত রেখে খালাস নেওয়া ৩২ চালানের তথ্য যাচাই করে অনিয়মের বিষয়টি জানতে পারে কাস্টমস। বিষয়টি নিয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরও তদন্ত করেছিল।
তবে তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বদলি হয়ে যাওয়াতে ইউনিলিভারের জালিয়াতির বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। চার বছর পর জালিয়াতির মাধ্যমে ফাঁকি দেওয়া রাজস্ব আদায়ে তৎপর হয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
কাস্টমসের একজন কর্মকর্তা জানান, তখন আমদানিকৃত এসব চালানের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে যোগাযোগ করতে ইউনিলিভারকে চিঠি দেয় চট্টগ্রাম কাস্টমস।
সম্প্রতি শুল্ক ফাঁকির বিষয়টি উঠে আসায় তা উদ্ধারে কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টমসের একজন যুগ্ম কমিশনার।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বন্দর থেকে ছাড় করে নেওয়া আমদানিকৃত দু’টি চালান (বিল অব এন্টি নম্বর সি-১৪০৪০৬ তারিখ-১৪.১১.২০১১ এবং সি-১৪০৪০৮ তারিখ-১৪.১১.২০১১) দাখিল করে ক্রুড পাম অয়েল নামে বন্দর থেকে খালাস করে নিয়ে যায় ইউনিলিভার।
কাস্টমস কর্মকর্তাদের মতে, আমদানিকৃত ক্রুড পাম অয়েল মূলত বেশি শুল্কের ক্রুড পাম স্টিয়ারিন সোপ গ্রেড। যা রাসায়নিক পরীক্ষা বাধ্যতামূলক এবং (এইচ.এস. কোড-১৫১১.৯০.১৯) অনুযায়ী বেশি শুল্কায়নযোগ্য।তখন চারটি চালানের মধ্যে দুটি চালান খালাস নিলেও দুটি চালান আটক করা হয়।
কাস্টমস হাউসের অডিট ইনভেস্টিগেশন এন্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখা থেকে জানা গেছে, ইউনিলিভার আমদানি পণ্যের নাম পরিবর্তন করে কম শুল্কের পণ্য দেখিয়ে ছাড় নিয়েছিল। পরের চালানগুলো রাসায়নিক পরীক্ষা করে শুল্কায়ন করা হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ইউনিলিভার দীর্ঘদিন ধরে ক্রুড পাম অয়েল নামে আমদানি করে আসছিল। ২০১০ ও ২০১১ সালে এধরণের ৩২ টি চালান আমদানি করে ইউনিলিভার। ৩২ টি চালানই ছিল বেশি শুল্কের ক্রুড পাম স্টিয়ারিন। এ চালানগুলোতে ইউনিলিভার প্রায় ৭৩ কোটি টাকার শুল্ক রাজস্ব ফাঁকি দেয় বলে অভিযোগ উঠে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম কাস্টমসের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত বিভাগের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়। এতে ৭৩ কোটি টাকার শুল্ক রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস কতৃপক্ষ চিঠি দেয়। বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যাও দিয়েছিল ইউনিলিভার। এনবিআরের সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলে কাস্টমস কর্তপক্ষ শুল্ক আদায়ের ব্যবস্থা নেবে বলে জানানো হয়।
তবে ফাঁকি দেওয়া বিপুল পরিমান রাজস্ব ইউনিলিভার আদায় করেছিল কিনা সে তথ্য চট্টগ্রাম কাস্টমসে নেই। সূত্র বলছে, তৎকালীন অতিরিক্ত কমিশনার ও এআইআর শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা বদলি হয়ে যাওয়ার বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। ফলে ইউনিলিভার টাকা আদায় করেছে নাকি ফাঁকি দিতে মামলার আশ্রয় নিয়েছে সে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কাস্টম কর্মকর্তাদের ধারণা রাজস্ব ফাঁকি দিতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে বহুজাতিক এই কোম্পানি।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের একজন যুগ্ম কমিশনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বদলি হয়ে যাওয়াতে বিষয়টি নজরে আসেনি। এখন তদন্ত করে দেখছি।
তাদের আমদানি করা পণ্য চালানের ফাইলগুলো খতিয়ে দেখতে একজন সহকারী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের বিপুল পরিমান রাজস্ব ফাঁকি দিতে আদালতে গিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে সরকারি রাজস্ব আদায়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
Discussion about this post