এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক রাজশাহী থেকেঃ
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনে ভিসি’র নির্দেশে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়ায় ও বিভাগের শিক্ষকদের দূর্ণীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবার খোদ আইন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ শাহজাহান মন্ডলকে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করেছেন। সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, একটি বেনামী চিঠির ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যক্তিগত আক্রোশে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম নীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শণ করে জামায়াত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্টার আব্দুল লতিফকে দিয়ে ৬টি বিষয় উল্লেখ করে আইন বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ শাহজাহান মন্ডলকে গত বুধবার এ কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়। কাউকে নোটিশের জবাব দেয়ার ক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান মোতাবেক কমপক্ষে তিনদিনের সময় প্রদানের কথা থাকলেও এ ক্ষেত্রে মাত্র ১ দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়। অভিযোগগুলোর মধ্যে বিভাগীয় শিক্ষকদের না জানিয়ে প্রথম বর্ষের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত বিষয়ে বিভাগীয় সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ শাহজাহান মন্ডল জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমি প্রথম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস নিয়েছি মাত্র। ক্লাসে যাওয়ার পূর্বে বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক সেলিম তোহাকে আমন্ত্রণ জানালে তিনি পরে আসবেন বলে জানান। তবে ভিসি’র অনুমতি নিয়ে বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা নবাগত ছাত্র-ছাত্রীদের মিষ্টি মুখ করান। সেখানে বিভাগের পক্ষ থেকে কোন অনুষ্ঠান কিংবা ওরিয়েন্টেশন হয়নি।
এলএল.এম পরীক্ষা ২০১১ এর থিসিস পেপার আটকে রেখে ফলাফল প্রকাশে বিঘœ ঘটানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১১ সালের থিসিস পরীক্ষার ফলাফলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ড. করিম খান। কাজেই ফলাফল প্রকাশে বিঘœ ঘটানোর ক্ষেত্রে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই।
এলএল.এম পরীক্ষা ২০১২ অনুষ্ঠিত না হওয়ার পক্ষে তার ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১১ সালের এলএল এম পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ২০১১ সালের ফেল করা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে জানান, বিভাগের যে সকল শিক্ষক অন্যায়ভাবে ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে ক্লাস নেওয়া ও পরীক্ষা কমিটি থেকে পদত্যাগ করে হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে অথচ বিশ্ববিদ্যারয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে আমার উপর জুলুম করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত আরেক শিক্ষক মাহবুব বিন শুভ যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেমিক শিক্ষক নামে খ্যাত। কোন শিক্ষার্থী ফাস্ট ক্লাস পাবে, কোন ছাত্র-ছাত্রী কার সাথে প্রেম করবে, দেহ বিনিময় করবে তা তিনি প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়ে বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করে দেন। এক সময়কার স্বনামধন্য একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানীর দালালী করে জমি কেনা-বেচার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া এই শিক্ষক কোম্পানী থেকে বরখাস্ত হয়ে নিজেই একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানীর মালিক সেজে বসে শিক্ষার্থীদের চাকুরী দেয়ার নাম করে প্রতিনিয়ত ব্লাকমেইল করে আসছেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত আরেক শিক্ষক ড. জহুরুল ইসলাম, যিনি সবসময় পদে অধিষ্ঠিত থাকতে বেশী পছন্দ করেন। আগামী অক্টোবর’২০১৬ সাল পর্যন্ত বিভাগীয় বর্তমান চেয়ারম্যানের মেয়াদ থাকলেও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁকে সরিয়ে তিনি এ পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে। হেকেপ প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে পিএইচ.ডি করিয়ে দেয়ার নাম করে জাল সার্টিফিকেট সরবরাহকারী এ শিক্ষক এখনও ধরা ছোয়ার বাইরে। যিনি টাকার লোভে নিজ বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে গিয়েছিলেন সিলেট আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে গিয়ে তার পূর্বের চরিত্র অনুযায়ী কুটিল দলবাজি সংস্কৃতি করতে গিয়ে নিজেই ধরা খান। অবশেষে অব্যহতি দিয়ে আবার ইবি’তে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। তিনি সিলেট আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিন থাকা সত্বেও নিজেকে ইবি’র ডিন হিসেবে তার নিজ ফেসবুক আইডি ব্যবহার করতেন। ইবি’র আইন প্রশাসক পদ থেকেও অর্থ কেলেংকারীর দায়ে এ পদ থেকে তাকে অব্যহতি দেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর অলিউল্লাহ জানান, আইন বিভাগের শিক্ষকদের আন্দোলন সঠিক না বেঠিক তা অচিরেই আমরা খতিয়ে দেখব। আর বেনামী অভিযোগের ভিত্তিতে আইন বিভাগের সভাপতিকে এত স্বল্প সময় দিয়ে যে শোকজ করা হয়েছে, তা মোটেই সঠিক হয়নি। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে একটি বৈধ ও আইনসম্মত বোর্ড অনুষ্ঠানকে অবৈধ দাবী করে গত দু সপ্তাহেরও বেশী সময় ধরে বিভাগীয় চেয়ারম্যান অপসারণ, নিয়োগ বোর্ড বাতিলের দাবীতে ক্লাস-পরীক্ষাসহ বিভাগীয় কর্মকান্ড বন্ধের নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন বিভাগের কয়েকজন দূর্ণীতিপরায়ন শিক্ষক। যদিও শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড আহবান ও অনুষ্ঠান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর এবং উক্ত বোর্ডের কনিষ্ঠতম সদস্য হলেন বিভাগীয় সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ শাহজাহান মন্ডল। চেয়ারম্যান অপসারনের আইনবিরোধী ও ষ্টেটিউট পরিপন্থী দাবীর নেতৃত্বদানকারী বিভাগীয় শিক্ষক প্রফেসর ড. জহুরুল ইসলাম প্রকাশ্যে কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীর সামনে বিভাগীয় সভাপতির বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন। জানা যায়, গত ১৩ ডিসেম্বর আইন বিভাগের একটি স্থায়ী প্রভাষক পদে শিক্ষক নিয়োগের বোর্ড অনুষ্ঠিত হয় যা ভাইস-চ্যান্সেলর কর্তৃক ৫ বারের মতো ঘোষিত বোর্ড। এর আগে ৪ বার বোর্ডের তারিখ নির্ধারিত হলেও ড. জহুরুল ইসলাম ও বিভাগীয় প্রেমিক শিক্ষক খ্যাত মাহবুব শুভ’র অপতৎপরতা ও অশুভ চাপে ভাইস-চ্যান্সেলর সে বোর্ডগুলো স্থগিত করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আওয়ামী আদর্শের শাপলা ফোরাম থেকে দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী (জামায়াতপন্থী গ্রীণ ফোরামের অনুগত) আচরণের জন্য ফোরাম থেকে বহিষ্কৃত শিক্ষক ড. জহুরুল ইসলাম তার অনুগত আবেদনকারীদের চাকুরী দেয়ার এবং তাদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ গ্রহণের সুযোগ তৈরী করতে না পারায় তারা এ চাপ প্রয়োগ করছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। তাদের এ দূর্ণীতিমনা কার্যক্রমের সহায়তায় সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসেন বিভাগের বিএনপি-জামায়াত পন্থী আরেক শিক্ষক ড. হালিমা খাতুন। সরেজমিন পর্যবেক্ষনে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদ, শাপলা ফোরাম ও ছাত্রলীগের সক্রিয় চেষ্টার সামনে ড. জহুরুল ও মাহবুব শুভ’র অশুভ চক্র বাঁধা সৃষ্টির চেষ্টা করলেও ব্যার্থ হয় এবং যথারীতি ১৩ ডিসেম্বর’২০১৫ ইং তারিখে শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিষ্টার অফিস সূত্রে জানা যায়, বিভাগের ১৫০তম প্লানিং মিটিং মোতাবেক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে ২২ জন আবেদনকারীর দরখাস্ত যাচাই পূর্বক ১৫৩ নং প্লানিং এর সুপারিশ মোতাবেক এ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। ফলে এ বোর্ড অনুষ্ঠিত হওয়ার পেছনে বেআইনী কোন কিছু ঘটার সুযোগ ছিল না। উল্লেখ্য, উক্ত দুই প্লানিং মিটিং এর সুপারিশকারী অনেক শিক্ষক এখন এ নিয়োগের বিরোধীতা করছেন এবং বিভাগীয় সভাপতির অপসারণের দাবীতে তারা গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে ২৩ জানুয়ারী পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেন এবং এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তা অব্যহত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে দূর্নীতিবাজ শিক্ষক হেকেপ প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎকারী ড. জহুরুল ইসলাম কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। শিক্ষকদের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ শাহজাহান মন্ডল বলেন, আমি কোন প্রফেশনাল বা আর্থিক অপরাধ করেনি বিধায় আমার অব্যহতি বা পদত্যাগকে তাদের এ দাবীর সাথে আমি একমত নয়। এছাড়া ‘উনাদের (আন্দোলনরত শিক্ষকদের লক্ষ্য করে) কিছু অবৈধ কাজকর্ম আছে, যেটা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারা আমার অপসারণ দাবি করছেন। তাদের দাবি মিথ্যা। তারা তো কোনো নিয়ম মানছেন না। তারা সংবিধান বিরোধী কাজ করছেন।’ প্রয়োজনে আমি এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির কাছে সহযোগিতা চাইব।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. এমতাজ হোসেন বলেন, ব্যক্তিগত রাগ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষকরা বিভাগীয় সভাপতির অপসারণ দাবী করছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও নীতিমালা পরিপন্থী। আমার জানামতে বিভাগীয় সভাপতি একজন জনপ্রিয় শিক্ষক। তিনি কোন অন্যায় কাজের সাথে জড়িত নয়।
আইন বিভাগের সভাপতির অপসারণ দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন, ‘বিভাগীয় সভাপতির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হলে তার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকতে হবে। অথচ শিক্ষকরা তার বিরুদ্ধে কোনো সুস্পষ্ট অভিযোগ করছেন না। এমতাবস্থায় আমি ওই শিক্ষকের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। করলে সেটা অবৈধ হবে।’ জানা গেছে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকারের এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ড. জহুরুল-মাহবুব শুভ গ্রুপ বিভাগ সভাপতির বিরুদ্ধে মনগড়া কাহিনী ও অভিযোগ তৈরীতে ব্যস্ত আছেন।
এ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক
Discussion about this post