উচ্চ আদালতে মামলার রায় বাংলায় দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। এক্ষেত্রে আইনজীবী, লেখক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে।
আজ বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে সুপ্রিম কোর্ট সমিতি বিজয়া পুনর্মিলনী ও বাণী অর্চনা উদযাপন পরিষদের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি প্রখ্যাত আইনজীবী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাংলায় আইনের বই লেখার জন্য সহযোগিতা করারও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলায় আমাদের হাইকোর্টে বিচারকরা সুন্দরভাবে রায় দিচ্ছেন। যখন আমার কাছে বাংলায় রায়ের আপিল আসে, আমি সেগুলো দেখি। হাইকোর্টের কিছু কিছু বিচারক বাংলায় ভাল রায় দিতে পারেন। তারা সুন্দর রায় দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের রায় বাংলায় ঘোষণা করতে আইনজীবীদের এগিয়ে আসা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যেন বাংলায় বই লিখেন সেজন্য তাদের আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, আইনের বই বাংলায় লিখতে শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে।
বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, আমরা আপিল বিভাগে এমন ডিভাইস বের করার চেষ্টা করছি রায় দেয়ার সময় ডিটেকশন দেব, যেটি সফটওয়ার হয়ে বাংলায় বের হবে। আমি ও আমাদের আইটি বিভাগ এগুলো নিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছি। তিনি বলেন, আমি প্রথম প্রধান বিচারপতি যে প্রটোকল ভেঙ্গে পুলিশের হেডকোর্য়াটারে গিয়ে এসপি লেভেলের অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি তিন ঘণ্টা তাদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিয়েছি। আমি তাদের বলেছি পুলিশের চার্জশিটে কি কি থাকতে হবে আর কি কি থাকবে না।
তিনি বলেন, আমাদের সবচেয়ে বেশি অসুবিধা হচ্ছে ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করায়।পুলিশের দায়িত্ব ব্যাপক বেড়ে গেছে। কোন অপরাধে কি লিখতে হবে, সেগুলো উল্লেখ না থাকলে হবে না। বোঝা যাবে না, আসামি কি ধরনের অপরাধ করেছে। আসামি সহযোগী না কি মূল। তাদের সেগুলো পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কার না থাকলে বিচারকদের জামিন দেয়া ও বিচার করা কঠিন হয়ে যায়। তথ্য পরিষ্কার না থাকায় তারা সহজেই জামিন পেয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় ক্রিমিনাল কনস্পিরেসিতে কী ধরনের সাক্ষ্য-প্রমাণ দিতে হয়, তা পুলিশ একেবারেই জানে না। এমনকি প্রসিকিউশনে যারা কন্টাক্ট (চুক্তি) করে তারাও জানে না।
প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ‘মুফতি হান্নানের মামলার রায় পুলিশ প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। ওই মামলায় ট্রায়াল কোর্টের মামলার ত্রুটি ছিল, হাইকোর্টের মামলার ত্রুটি ছিল। সংশোধিত করে আমরা রায় দিয়েছি। এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় ট্রায়াল কোর্টের মামলার ত্রুটি ছিল, হাইকোর্টের মামলার ত্রুটি ছিল। আমরা এটা সংশোধন করে দিয়েছি।’
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আরো বলেন, তদন্ত ও প্রসিকিউশনের ত্রুটির কারণে অনেক সময় প্রকৃত আসামিরা খালাস পেয়ে যান। গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলোর ক্ষেত্রে সাক্ষীর অভাব থাকে। তাই সব পর্যায়ে আরো ট্রেনিং দরকার বলে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি।
Discussion about this post