প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের ঘটনায় চার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রমাণ পেয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এছাড়া পরবর্তীতে এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
প্রসঙ্গত, গত কয়েকমাস ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটছে। এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা মন্ত্রণালয় ও গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন। মানবন্ধনসহ নানা কর্মসূচিও শুরু করেন অভিভাবকরা। জনরোষের মুখে কয়েক উপজেলায় প্রকাশ্যে দায় স্বীকার করে টাকাও ফেরত দেন কোনও কোনও স্কুলের প্রধান শিক্ষক। পরে তদন্ত করে দায়ীদের চিহ্নিত করতে ১১ জন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ওই ১১ কর্মকর্তার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
প্রতিবেদনটি তৈরির সমন্বয়ক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব নেছার আহমদ গণমাধ্যমকে এ ব্যাপারে বলেন, ‘তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছি তাদের বিরুদ্ধে এখন ব্যবস্থা নেবে অধিদফতর। আমরা নির্দেশনা পাঠিয়েছি।’
মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলার জামতৈল উত্তর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু শামা, কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার মেটাংঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম, হোসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম মাসুমা সারোয়ার এবং মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার নবগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রানী বালা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
এর আগে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ৩৬নং নবগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপবৃত্তিপ্রাপ্ত ৩৬৪ জন ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে এক হাজার ২০০ টাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষিকা অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে ৬০০ টাকা করে প্রদান করেন। বাকি টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন বলে অভিভাকরা লিখিত অভিযোগ করেন।
কুমিল্লার মেটংঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির ১২শ’ টাকা থেকে ৬০০ টাকা করে কেটে রাখেন। হোসনাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মাসুমা সারোয়ারের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ ওঠে। তদন্তে তাদের অর্থ আত্মসাতের চেষ্টার অসৎ উদ্দেশ্য সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নজরুল ইসলাম খান মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘তদন্তে যাদের বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’
নজরুল ইসলাম খান আরও জানান, যেহেতু অভিযোগ আসছে তাই এখন থেকে আমরা উপবৃত্তি বিতরণ প্রক্রিয়া শতভাগ স্বচ্ছ রাখতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছি। যেখানে ভাল শিক্ষক-কর্মকর্তারা পুরস্কার হিসেবে বিদেশ সফরেরও সুযোগ পাবেন।
Discussion about this post