বিডি ল নিউজঃ আজ শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘বাংলাদেশ ভারত বন্ধুত্ব দু’দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সোপান’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ‘বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোকে বাদ দিয়ে ভারত কখনোই একা এগিয়ে যেতে পারবে না। ভারত ও বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য বিপদে-আপদে উভয় দেশকেই একে অপরের পাশে দাঁড়াতে হবে।’ বাংলাদেশ ইন্ডিয়া সিটিজেন সোসাইটি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দু’দেশের বন্ধুত্বের ভিত্তি হওয়া উচিত হবে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের অভিজ্ঞতা।’
ভারত-বাংলাদেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গত ৬ বছরের অগ্রগতির বিবরণ তুলে ধরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দুই দেশের বন্ধুত্বের ভিত্তিকে আরও জোরাল করতে রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত বছর পালন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার ৯০ বছর পালন, স্বামীজি বিবেকানন্দের জন্মদিন পালন, উভয় দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও প্রতিনিধি বিনিময়, স্থলসীমানা চুক্তির ব্যাপারে প্রটোকল স্বাক্ষর, বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারতের ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়া, ভেড়ামারার মাধ্যমে ভারতের ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেওয়া, রামপালের কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, ত্রিপুরা দিয়ে আরও ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি, জলবিদ্যুতের অংশীদারিত্ব, তুলা আমদানির বিধি-নিষেধ প্রত্যাহারসহ নানা বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই সময়ে উভয় দেশের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ৩৩টি দলিল স্বাক্ষর হয়েছে।’
আলোচনা সভায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান, ভারতীয় হাইকমিশনের রাজনীতি ও তথ্য বিষয়ক কাউন্সিলর সুজিত ঘোষ, জাতীয় সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. দুর্গা দাস ভট্টাচার্য ও প্রফেসর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, বিআইসিএস মহাসচিব মনোরঞ্জন ঘোষাল, ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, দৈনিক জনতা সম্পাদক আহসানউল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান ইন্দিরা-মুজিব ২৫ বছরের চুক্তি সম্পর্কে গোলামী চুক্তি আখ্যা দেওয়ার বিষয়ে তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ফ্রেন্ডশিপ যাতে দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকে তার জন্য স্বাধীনতার সূচনালগ্নেই চুক্তিটি স্বাক্ষর হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অটুট রাখার জন্য ১২ ধারা সংবলিত এই চুক্তিটির দরকার ছিল।’
চুক্তির ৮, ৯ ও ১০ নম্বর ধারা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি কখনোই গোলামী চুক্তি ছিল না। উভয় দেশের জঙ্গিবাদ মোকাবিলা ও জনগণের বন্ধুত্বের ভিত্তিকে মজবুত করার জন্য এই চুক্তি বার বার করা প্রয়োজন।’
ভারতীয় হাইকমিশনের কাউন্সিলর সুজিত ঘোষ বলেন, ‘ভিসা সংক্রান্ত সমস্যা কাটাতে রাজশাহী ও চট্টগ্রাম এবং একটি কেন্দ্রে ই-টোকেন ছাড়াই সরাসারি কাগজপত্র জমা দিয়ে ভিসা সংগ্রহ করা যাবে। তবে ট্যুরিস্ট ভিসা ই-টোকেন ছাড়া পাওয়া যাবে না। ভিসা সংক্রান্ত সমস্যা কাটাতে দুই দিন আগে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
সুজিত ঘোষ আরও বলেন, ‘গত ৫-৬ বছরে উন্নয়নের অংশীদারিত্ব, জলসমস্যা, নিরাপত্তা, ব্যবসায় কোটা ফ্রি, আইটি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ দু’দেশের দ্বি-পাক্ষিক বিষয়ে অনেক কাজ হয়েছে এবং এখনো অনেক কাজ করার আছে।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি দুর্গা দাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে দু’দেশের পণ্যের ট্যাক্স কমালে চোরাচালান বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি দু’দেশের জনগণের বন্ধুত্বের ভিত্তিকে মজবুত করার জন্য ভিসা প্রথা তুলে দেওয়ার দাবি জানান। প্রফেসর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘উভয় দেশের শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের শিকড়কে গভীরে নিয়ে যেতে হবে।’
Discussion about this post