মো. ইলিয়াস মিয়া ছাত্রলীগের আজীবন বহিষ্কৃত নেতা। প্রায় এক দশক ধরে তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ইলিয়াসের বিরুদ্ধে শিক্ষকের ওপর হামলা, ছাত্রী লাঞ্ছনা ও উত্ত্যক্তকরণ, প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শন, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা ও নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। তাঁর কারণে বিভিন্ন সময়ে অস্থির হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দপ্তর সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এই শিক্ষাবর্ষে স্নাতকে (সম্মান) ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হন ইলিয়াস। এরপর তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁকে খেলোয়াড় কোটায় লোকপ্রশাসন বিভাগে ভর্তি করে। ভর্তির পর তিনি ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের রাজনীতি করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি যুক্ত হন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রের বিবরণ অনুযায়ী, ২০০৯ সালে মার্কেটিং বিভাগের এক শিক্ষকের বোনকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়ে তাঁকে লাঞ্ছিত করেন ইলিয়াস। ২০১০ সালের অক্টোবরে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে নম্বর কম দেওয়ার অভিযোগ এনে নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান শামীমা নাসরিনের কক্ষে গিয়ে তাঁকে হুমকি দেন। একই অভিযোগ এনে ২০১১ সালের ২৪ জানুয়ারি নিজের বিভাগের শিক্ষক মো. মশিউর রহমানকে লাঞ্ছিত এবং তাঁর বাসার দরজা-জানালা ভাঙচুর করেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি করলে তিনি ওই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হুমকি দেন। এরপর ৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাদের প্রশ্রয়ে তিনি শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলেই অবস্থান করেন।
২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকার একটি পিকনিক স্পট থেকে একটি বিদেশি রিভলবার, দুটি গুলি, একটি ম্যাগাজিনসহ তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। ওই দিনই তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যপদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। তখন ইলিয়াসের কারণে লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তরের পরীক্ষা নিতে দেননি তাঁর অনুসারীরা। তিন মাস পর ইলিয়াস জামিনে মুক্তি পান। এরপর তিনিসহ সবার পরীক্ষা নেওয়া হয়।
অভিযোগ ওঠে, ১ আগস্ট তাঁর নেতৃত্বেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে হামলা চালানো হয়। ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. খালিদ সাইফুল্লাহ নিহত হন।
কিন্তু ইলিয়াসের এই দাপটের উৎস কী? অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ইলিয়াসকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। তাঁদের কারণেই তিনি বেপরোয়া।
খালিদ সাইফুল্লাহর নিহতের ঘটনায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এসআই শাহ কামাল আকন্দ বলেন, ‘ইলিয়াসের কারণেই এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য জোর তৎপরতা চালাচ্ছে।’
জানতে চাইলে গত বুধবার ইলিয়াস দাবি করেন, ওই দিন তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তবে তাঁর হাতে কোনো পিস্তল ছিল না। র্যাবের হাতে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়ার প্রসঙ্গে ইলিয়াস বলেন, র্যাব অস্ত্র দিয়ে তাঁকে ফাঁসিয়ে দিয়েছিল।
অন্যান্য অভিযোগ সেই সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে বলে ইলিয়াস দাবি করেন।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আলী আশরাফ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে (ইলিয়াস) কোনো সুযোগ দেয়নি। মাস্টার্স পরীক্ষার ফল দিতে বিলম্ব হচ্ছে। এ কারণে সে হলে অবস্থান করছে।’ সুত্র প্রথম আলো
Discussion about this post