এমন নির্মম ঘটনা ঘটেছে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায়। নির্মম অত্যাচার ও অমানবিক নির্যাতনে মৃত্যু হওয়া কিশোরের নাম মিজু শেখ (১৫)। তিনি উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রামকোল গ্রামের মৃত মুসা শেখের ছেলে। বাবা-মা হারা কিশোরটির একমাত্র স্বজন তার নানী জবেদা বেগম (৪৮)।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাংশা উপজেলার মাছপাড়া ইউনিয়নের নেভা এনায়েতপুর গ্রামের আফতাবের ছেলে আজাদের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতো মিজু। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৫/১৬ দিন আগে মিজুকে নির্মমভাবে পিটিয়ে জখম করেন আজাদ ও তার সহযোগী জয়নাল হাজারী। এর পর অসুস্থ মিজুর কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। বরং তাকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়।
অবস্থার অবনতি হলে মুমূর্ষু অবস্থায় বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) রাত পৌনে ৮টার দিকে মিজুকে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। একই দিন রাত সাড়ে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, শুক্রবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মিজুর মরদেহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাধারণ রোগীদের সঙ্গে বিছানাতেই ছিল। এতে ভর্তি থাকা রোগীরা পড়েন মানসিক বিড়ম্বনায়।
মিজুর নানী জবেদা বেগম জানান, মিজুর বাবা-মা দু’জনই মৃত। মিজুর বয়স ১৫ বছর। কিন্তু অজানা কারণে হাসপাতালে ভর্তির খাতায় মিজুর বয়স লেখা হয়েছে ২০ বছর। মিজু গত রমজান মাসে আজাদের বাড়িতে কাজ নেয়। তার হত্যাকারীদের শাস্তি দাবি করেন তিনি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি থাকা রোগী আব্দুর রশীদ বাংলানিউজকে জানান, বৃহস্পতিবার রাতে মিজুকে ভর্তি করা হয়। রাতেই তার মৃত্যু হয়। মিজুর শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন দেখে খুব কষ্ট হয়েছে তার। তিনি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা ফরিদা বেগম জানান, মিজু বৃহস্পতিবার রাতে মারা গেলেও শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তার মরদেহ পুরুষ ওয়ার্ডের বেডে পড়ে ছিল।
পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এ এফ এম সফিউদ্দিন জানান, কিশোরকে হাসপাতালে যখন নিয়ে আসা হয় তখন তার শরীরের নিচের অংশের মাংসে ঘা হয়ে গিয়েছিল। তার অণ্ডকোষ প্রচণ্ড আঘাতের মাধ্যমে ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিলো।
ধারণা করা হচ্ছে হাসপাতালে আনার ১৪/১৫ দিন আগেই মিজুকে পিটিয়ে অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। তার অণ্ডকোষে আঘাত করা হয়েছে। তার উরুর বিভিন্ন স্থানে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। এতে তার রক্ত বিষাক্ত হয়ে পড়ে। এতেই তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।
পাংশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু শ্যামা ইকবাল হায়াত বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হবে।
এ ব্যাপারে নিহতের নানী মামলা দায়ের করতে চাইলে মামলা নেওয়া হবে। জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে।
Discussion about this post