প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার একাধিক আচরণ শপথ ভঙ্গের শামিল বলে মনে করেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। তার অভিযোগ, অবসরে যাওয়ার পর বিরাগের বশবর্তী হয়ে তার পেনশন আটকে দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি। এমন কাজ তিনি বহুবার করেছেন বলে অভিযোগ বিচারপতি শামসুদ্দিনের। এবার প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। গণমাধ্যমের সঙ্গে একা সাক্ষাৎকারে এই বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন তিনি।
নির্বাহী বিভাগ কী বিচার বিভাগে উপরে চলে গেল?
বিচারপতি শামসুদ্দিন: এখানে কেউ কারো উপরে উঠেনি। সবাই যার যার জায়গায় স্বকীয়তা বজায়ে রেখেছে।
ষোড়শ সংশোধনী, তা বাতিলের রায়- সবকিছু মিলিয়ে আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের অবস্থান নিয়ে এক ধরনের বিপরীতমুখী চিন্তা দেখা গেল। কে উপরে? সংসদ না উচ্চ আদালত? আপনার পরযবেক্ষণ কী?
বিচারপতি শামসুদ্দিন: এখানে উপর নিচ বিচার করার সুযোগ নেই। সংবিধান যার যার ক্ষমতা আলাদাভাবে দিয়েছেন। এই যে কে বাড় কে ছোট এই প্রশ্ন করা কিন্তু ভাল লক্ষণ না। সংবিধান সবার স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে। বরং দেশের স্বার্থে তিনটি বিভাগের উচিত একে অপরের পরিপূরক হয়ে কাজ করা।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে আমাদের সংসদ কতটা কারযকর, কতটা শক্তিশালী, এসব প্রশ্ন উঠেছে। বড় একটি দল সংসদে নেই, ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। দশম সংসদ আইন ও সংবিধানের আলোকে ঠিক আছে। কিন্তু নৈতিক দিক দিয়ে দুর্বল আওয়ামী লীগও বিভিন্ন সময় বিষয়টি স্বীকার করেছে। আপনি কী বলবেন?
বিচারপতি শামসুদ্দিন: সংবিধানে এমন কোনো কথা নেই যে আনঅপোজড কোন ব্যক্তি ইলেকটেড হতে পারবে না। এখন কেউ যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে একজন তো নির্বাচিত হবে এইটাই তো স্বাভাবিক। কোন দল যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে কী নির্বাচন বসে থাকবো? থাকবে না।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের ক্ষেত্রে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের প্রসঙ্গও এসেছে। এ নিয়ে আপনার অবস্থান কী?
বিচারপতি শামসুদ্দিন: রিমোভাল প্রসিডিউরটা যদি হতো তাহলেও কিন্তু ৭০ অনুচ্ছেদ বাদ সাধতো না। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারবে না, দলীয় সিদ্ধান্ত কিন্তু সব সময় লাগে না। একজন বিচারপতি সরানো হবে কি হবে না সেটা কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার না। সুতরাং এখানে ৭০ অনুচ্ছেদ একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক।
আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগ- তথা রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভের ক্ষমতার ভারসাম্য একটি আদর্শ রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আমাদের দেশ এ হিসেবে কোন অবস্থানে আছে? ষোড়শ সংশোধনীর রায় কেন্দ্র করে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তা থেকে উত্তরণের পথ কী?
বিচারপতি শামসুদ্দিন: আমাদের দেশে কিন্তু তিনভাগের সম্পর্ক ভালই আছে। এবং ভালই ছিল। গণ্ডগোলটা লাগিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
স্বাধীন বিচার বিভাগ আইনের শাসন নিশ্চিত করার জন্যে জরুরি। এর জন্যে করণীয় কী?
বিচারপতি শামসুদ্দিন: বিচার বিভাগ তো স্বাধীনতা ভোগ করছে। এটি চলমান থাকবে বলেই আমি বিশ্বাস করি। এটি অব্যাহত রাখলেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন থাকবে।
প্রধান বিচারপতি আপনার সঙ্গেও অন্যায় করেছেন বলে একাধিকবার আপনি বলেছেন।
বিচারপতি শামসুদ্দিন: হুম করেছেন। একজন বিচারপতি শপথ নেন তিনি অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কিছু করবেন না। কিন্তু আমার সঙ্গে আচরণই সিনহা সাহেবের শপথ ভঙ্গের শামিল। উনি শপথ ভঙ্গ করেছেন বহুবার। বিরাগে চরম উদাহরণ দেখিয়েছেন উনি। ছয়মাস পেনশন দেননি। উনি আমার অফিস বন্ধ করে দিয়েছেন। উনি আমাকে রায় লিখতে দেননি। উনি আমার স্টাফ উথড্র করেছেন। এগুলো বিরাগের চরম উদাহরণ। তিনি বিচার বিভাগের একজন কুলাঙ্গার হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন। অথচ তিনি এমনভাবে কথা বলতো মনে হতো তিনি একজন মহা মনীষী।
এখন আপনার পেনশনের কী অবস্থা। পাচ্ছেন?
বিচারপতি শামসুদ্দিন: ছয়মাস পরে বিষয়টি সুরাহা হয়েছে। বিশেষ করে আইন মন্ত্রণালয় কাজটি করে দিয়েছে। উনি দিতে চাননি। কিন্তু মন্ত্রণালয় এটি করে দিয়েছে।
ছয়মাস পেনশন আটকে থাকায় তো ক্ষতি হয়েছে?
বিচারপতি শামসুদ্দিন: আমার বিশাল ক্ষতি হয়েছে। আমি ছয়মাস পেনশন পাইনি। এই সময়টায় আমার ব্যাংকে ওই টাকা টা থাকলে আমি লাভ পেতাম। ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা আমি পেতাম। ওই টাকার ক্ষতি হয়েছে আমার।
এজন্য কী আপনি আইনি প্রতিকারে যাবেন?
বিচারপতি শামসুদ্দিন: আমি তার বিরুদ্ধে মামরা করবো।
কী মামলা করবেন?
বিচারপতি শামসুদ্দিন: ক্ষতিপূরণের মামলা করবো। এটিকে বলে মানি স্যুড মামলা।
কোন কোর্টে করবেন?
বিচারপতি শামসুদ্দিন: যুগ্ম জেলা জজ আদালতে ক্ষতিপুরণ মামলা করবো।
কবে নাগাদ মামলাটি করতে পারেন?
বিচারপতি শামসুদ্দিন: আমি নথিপত্র গুছাচ্ছি। প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রস্তুতি শেষ হলেই আমি মামলা করবো।
এতোদিন করেননি কেন?
বিচারপতি শামসুদ্দিন: এতোদিন করিনি কারণ এতোদিনে মামলা করলে তার জজ সাহেবরা মামলা নিতো না। বা মামলা আমি সুবিচার পেতাম না। তিনি প্রভাব বিস্তার করতেন।
কৃতজ্ঞতা- ঢাকাটাইমস
Discussion about this post