এ-ওয়াই থাকলে আর গেইলকে কী দরকার আমাদের

10
VIEWS
2

ভারতবর্ষের ক্রিস গেইল যদি কাউকে বলা যায়, তা হলে তাঁর নামটা উপরের দিকে রাখতে হবে। ক্যারিবিয়ান দানবের মতো মাঝেমধ্যে তাঁর ব্যাটও ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু যখন ঘুম ভাঙে, একেবারে ঝড় তুলে দেয়। কেকেআর সমর্থকের গর্জনের সিংহভাগ তাঁর জন্য বরাদ্দ থাকে যেমন, তেমন সমালোচনার তিরগুলোও সর্বাগ্রে খুঁজে নেয় দীর্ঘদেহী নাইটকে। তিনি, ইউসুফ পাঠান মুম্বই মহারণের আগে যা যা বললেন আনন্দবাজারকে…।
প্রশ্ন: আইপিএলের বিজনেস এন্ড এলে বরাবর আপনার সেরা ফর্মটা বেরিয়ে আসে। গত বছর ইডেনে ২২ বলে ৭২ তো এখন নাইট-গাথা। এই সময়টা এলেই আপনার কী হয় বলুন তো?

ইউসুফ: আসলে টিমের যখন আমাকে বেশি দরকার, তখন খেলাটা বেশি উপভোগ করি। চাপ আমার খুব পছন্দ। ওই চ্যালেঞ্জটা নিতে দারুণ লাগে। এ বছর কিন্তু প্রথম থেকেই ভাল খেলছি। তবে টিমের এখন আমাকে আরও বেশি দরকার, তাই খেলাটা আরও বেশি উপভোগ করছি।

প্র: কেকেআরে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার বলতে এত দিন আপনি একা ছিলেন। এ বার আন্দ্রে রাসেলের নামটাও ওই তালিকায় ঢুকে গিয়েছে। রাসেল আসায় আপনার কতটা সাহায্য হচ্ছে?

ইউসুফ: ও থাকায় আমার উপর চাপ অনেক কমে গিয়েছে। রিল্যাক্সড লাগছে যে, আমি ছাড়া আরও একজন আছে যে ভাল বলেও চার-ছয় মারতে পারে। আমরা দু’জনেই ভাগ্যবান যে এক টিমে খেলছি, কারণ আমরা দু’জন একসঙ্গে ব্যাট করলে চাপটা অনেক কমে যায়।

প্র: যখন রাসেলের সঙ্গে ব্যাট করেন, ক্রিজে দু’জনের কী কথা হয়?

ইউসুফ: আমরা কখনও কোনও টার্গেট রাখি না। আমি সব সময় ওকে বলি, বলটা দেখো আর মারো।

প্র: যে টিমে পাঠান আর রাসেল আছেন, তাদের কি গেইলের দরকার আছে?

ইউসুফ: বিলকুল নহি। আরে ক্রিস গেইল তো একটাই এন্ডে খেলে। আর এখানে এক দিকে পাঠান, উল্টো দিকে রাসেল। যখন গেইল খেলে তখন বিপক্ষ ভাবে যে ও এক রান নিয়ে স্ট্রাইক ছেড়ে দিক। আমরা অন্য ব্যাটসম্যানকে রান নিতে দেব না, ওকে চাপে ফেলব। যাতে গেইলও চাপে পড়ে যায়। কিন্তু এখানে আমরা দু’জনেই স্ট্রাইকে থাকলে বোলাররা টেন্সড থাকে, ক্যাপ্টেন টেন্সড থাকে, পুরো টিম টেন্সড থাকে। আমাদের উপর চাপটা কম থাকে কারণ আমরা জানি যে এক জন সিঙ্গলস নিলেও অন্য জন উল্টো দিকে বাউন্ডারি মারবে। বিপক্ষের উপর চাপ এতটুকু কমবে না। আর এটা আমরা ভীষণ এনজয় করি। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে বিপক্ষ মোটেও ব্যাপারটা এনজয় করে না!

প্র: আপনার ছেলে এই সে দিন এক বছর পুরো করল। বাবা হিসেবে আপনিও এক বছরে পা দিলেন। এই এক বছরে জীবন কী ভাবে পাল্টেছে? মাথা কি একটুও ঠান্ডা হয়েছে?

ইউসুফ: আরে আমার মাথা প্রথম থেকেই ঠান্ডা। লোকে বুঝতে ভুল করে। ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখায়। কিন্তু হ্যাঁ, বাবা হওয়া অতুলনীয় অভিজ্ঞতা। ছেলেকে যখনই দেখি, সব স্ট্রেস কমে যায়। খুব ভাল লাগে ওকে খেলতে দেখলে। যখন যা পায় হাতের সামনে, সেটা নিয়েই খেলতে শুরু করে দেয়। আর জানেন, ওর এই ব্যাপারটা থেকে আমরা দুই ভাই-ই শিখেছি। ও এখনও খুব ছোট তাই বুঝতে পারে না কোনটা আনন্দের মুহূর্ত আর কোনটা দুঃখের, বুঝতে পারে না কখন কেউ চাপের মধ্যে আছে আর কখন নেই। ওর শুধু খেলে যাওয়া চাই। আনন্দে থাকা চাই। ওকে দেখে শিখেছি যে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, আমাদের খুশি থাকা উচিত।

প্র: টিম খারাপ করলেই সবচেয়ে আগে আওয়াজ ওঠে, ইউসুফ পাঠানকে বাদ দাও। সমালোচকেরা বরাবর আপনাকে টার্গেট করে যান। দুঃখ হয় না?

ইউসুফ: দুঃখ হয়, কিন্তু নিজের জন্য নয়। যারা আমাকে বাদ দেওয়ার কথা বলে, তাদের জন্য। কারণ তারা কিছু জানে না। আমি জানি আমার নিজের ক্ষমতা কী। আগে কী করেছি, ভবিষ্যতে কী করব, সব প্ল্যান করা আছে। আর সেটা ভাল ভাবেই করে যাচ্ছি। কিন্তু একদল লোক কিছু না জেনেই হইহই করে যাচ্ছে!

প্র: আপনি এখন কেকেআরের অন্যতম সিনিয়র সদস্য। জুনিয়রদের সঙ্গে আপনার সম্পর্কটা কী রকম?

ইউসুফ: ওরাই আমাদের টিমের ভবিষ্যৎ। আমি আমার অভিজ্ঞতা ওদের সঙ্গে শেয়ার করি, ওদের সাহায্য করি। এটা খুব ভাল যে আমরা ওদের এত কাছাকাছি আছি। আমরা যখন ওদের বয়সি ছিলাম, আমাদের দেখিয়ে দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। আইপিএল কিন্তু তরুণদের দারুণ সুযোগ করে দিয়েছে। ওদের চারপাশে কত বড় নাম। অনেক সিনিয়র প্লেয়ার। যাদের থেকে ওরা সব সময় শিখতে পারছে।

প্র: বৃহস্পতিবারের মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ম্যাচটা নিয়ে টিম কী ভাবছে?

ইউসুফ: মুম্বই আর রাজস্থানের সঙ্গে আমাদের শেষ দুটো ম্যাচ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্লে-অফ যাওয়া প্রায় নিশ্চিত, কিন্তু আমরা চাই প্রথম দুইয়ে থাকতে। সেই লক্ষ নিয়েই শেষ দুটো ম্যাচ খেলব। এই দুটো ম্যাচকে দুটো ফাইনাল হিসেবে দেখছে টিম।

প্র: ইউসুফ পাঠানের আইডল কে?

ইউসুফ: ক্রিকেটার ইউসুফের আইডল সচিন তেন্ডুলকর। উনি যে ভাবে ক্রিকেট-সাধনা করেছেন বছরের পর বছর, যে ভাবে একুশ-বাইশ বছর ধরে নিজেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ধরে রেখেছেন, শেখার মতো। ক্রিকেটার সচিন আর ক্রিকেটের বাইরের সচিন, দু’জনই আমাকে প্রভাবিত করেছেন।

আর মানুষ ইউসুফের আদর্শ জানতে চাইলে বলব, আমার বাবা। মসজিদের সাধারণ কর্মচারী হিসেবে যে ভাবে উনি স্ট্রাগল করেছেন, তবু নিজের কাজের প্রতি সৎ থেকেছেন, ভাবা যায় না।

প্র: আর শাহরুখ খান? তিনি যে সব সময় আপনার পাশে দাঁড়িয়েছেন, সেটা আপনাকে প্রভাবিত করেনি?

ইউসুফ: শাহরুখ সচ্চা ইনসান। উনি নিজের জীবনে অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে গিয়েছেন। ওঁর কাছে শিখেছি যে জীবনে স্ট্রাগল করা মানে এই নয় যে তোমার ক্ষমতা নেই। স্ট্রাগল করার মানে হল, তোমার ভাল সময় আসছে। স্ট্রাগল করছ মানে তুমি তোমার জীবনের পরের শৃঙ্গের খুব কাছাকাছি চলে এসেছ। কারণ স্ট্রাগল না করলে উঁচুতে ওঠা যায় না। মনের কাঠিন্য তৈরি হয় না। ভাল কিছু করার মোটিভেশন পাওয়া যায় না। উনি আমাকে বলেছেন, দু’একটা মরসুম খারাপ গেছে তো কী? তুমি ঠিক পারবে।

প্র: পরের বছর ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?

ইউসুফ: ইনশাল্লাহ, আমার টার্গেট আছে কামব্যাক করার। আমি আমার মতো পরিশ্রম করে যাব। বাকিটা উপরওয়ালার হাতে।

প্র: হালফিলের সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান বাছতে হলে প্রথম তিনে কাদের রাখবেন?

ইউসুফ: ক্রিস গেইল, তার পর এবি ডে’ভিলিয়ার্স। আর… আর… আর কার নাম করি?

প্র: ইউসুফ পাঠান?

ইউসুফ: (হেসে) তা হলে আন্দ্রে রাসেল। আরে তিসরা নাম ছোড় দো। আচ্ছা না, ওটা করে দিন এ-ওয়াই। আন্দ্রে আর ইউসুফ!

সৌজন্যে আনন্দবাজার পত্রিকা

Next Post

Discussion about this post

নিউজ আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031

Welcome Back!

Login to your account below

Retrieve your password

Please enter your username or email address to reset your password.