একে.এম নাজিম, হাটহাজারী চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ হাটহাজারী উপজেলার সদর থেকে শুরু করে গ্রাম অ ল পর্যন্ত ফসলী জমিতে ইট ভাটা, বাড়ি ও প্লট নির্মাণ, পাহাড় কাটা আর খাল ও ছড়া থেকে অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলনের ফলে ভৌগলিক পরিবেশ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ ও জনজীবন হুমকির আশংঙ্কা বিরাজ করছে।
বিগত ২০ বছর ধরে হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ভাবে ফসলি জমিতে ইট ভাটা ও প্লট সহ বাড়ি নির্মাণ, পাহাড় কাটা, জলাশয় ভরাট, জমি ভরাট করে ভিটা নির্মাণ এমনকি পাহাড়ি বনজ সম্পদ (কাট) কাটা। পাশাপাশি চারুকল বসানোর কারনে হাটহাজারীর প্রাকৃতিক পরিবেশ যেন দিন দিন বিদ্যুৎ গতিতে পরিবর্তন হচ্ছে। উপজেলার ৯৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা পরিদর্শন করে এক নজরে দেখা যায়, হাটহাজারীর প্রাকৃতিক ও ভৌগলিক পরিবেশ পরিবর্তনের সূচনা নজরে পড়ে। গত ২০ বছরে উপজেলার সদর সহ গ্রাম অ লে যে সব জমিতে নানা প্রজাতির সোনালী ধানের শীষ নজর কেড়েছে সেই জমি গুলোতে এখন ইট ভাটা আর আবাসিক প্রকল্প সহ বাড়ি ও ভিটা নজরে পড়ছে। নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার ফলে এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্যের পাশাপাশি ভৌগলিক অবস্থাও মারাত্মক রূপ ধারণা করে। এই সব প্রাকৃতিক শক্রদের ছোবল থেকে রেহায় পাচ্ছেনা। উপজেলার ১টি পৈারসভা ১৪টি ইউনিয়নের অন্তত পাঁচলাখ মানুষ। স্বাধীনতার পর থেকে সরকারী বনজ ও ফলজ সম্পদের গাছ গুলোকেও বাঁচতে দিচ্ছেনা প্রাকৃতিক শক্ররা। উপজেলার এগার মাইল ও নাজির হাট বন বিটের অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগীতায় পাহাড় থেকে শিশু গাছ সহ সব ধরণের কাঠ কেটে বন সম্পদ ধ্বংসের পাশাপাশি উজাড় করছে পাহাড়। পাহাড়ের মাটি দিয়ে ইট তৈরী ও কয়লার পরিবর্তের পাহাড়ের কাঠ পোড়ানো, পুকুর, ডোবা, খাল, ফসলী জমি ভরাট সহ নিয়ম নীতি ছাড়া ভবন নির্মাণ স্থানে স্থানে অবৈধ কড়াত কল স্থাপন করার ফলে এলাকার পরিবেশের এই নেতিবাচক পরিবর্তন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশিষ্ট প্রশাসনের চোখের সামনে এই কাজ চলতে থাকলেও আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেনা কোন দপ্তরের কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় কোটি পতিদের কালো টাকার ছোবলে দেশের আইনকে যেন পাত্তাই দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। উপজেলার জলবায়ুকে নেতীবাচক প্রভাব বৃদ্ধি পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে এলাকার জনজীবন। ৯৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দক্ষিণে মদুনা ঘাট, উত্তরে নাজিরহাট ব্রীজ, পূর্বদিকে সত্তার ঘাট, পশ্চিমে পাহাড়ি এই এলাকার মধ্যে বৈধ ও অবৈধভাবে মিলিয়ে অন্তত শতাধীক ইট ভাটা বিশটির উপরে চারুকল মিশিন, পাঁচশতাধীকের উপর কড়াত কল, তিন শতাধীকের মতো পুকুর ও ডোবার ভরাট, শত শত হেক্টর ধানী জমিতে বাড়ি, ভবন ও পট তৈরী করে যাচ্ছে। এছাড়া উপজেলার মদুনাঘাট থেকে হাটহাজারী নাজিরহাট পর্যন্ত ত্রিশ কিলোমিটার অরক্ষিত হয়ে পড়েছে হালদা নদী। হালদা নদী থেকে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে শত শত ট্রাক বালু উত্তোলন, পাহাড় থেকে গাছ কাটায় হাটহাজারী উপজেলার জলবায়ুর পাশাপাশি প্রাকৃতিক ও ভৌগলিক পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
হাটহাজারীতে সড়কের পাশে ও খাল, ছড়া নদীগুলো দখল করার জন্য প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা। এসব আবর্জনা গুলো দুর্গন্ধে ও ডোবা ভরাট করার ফলে জলবায়ু ও ভৌগলিগ পরিবেশ মারাত্মকভাবে ধ্বংসের ধারপ্রান্তে পৌঁছেছে। পরিবেশ বাদীরা জানান, কোন এক স্থানে ইট ভাটা নির্মাণ করলে কিছু সরকারী নিয়মনীতি রয়েছে। তা দেশ ও জনগণের স্বার্থে মেনে নিয়ে ইট ভাটা প্রতিষ্ঠা করতে হয়। বর্তমানে ইট ভাটার মালিকরা প্রভাবশালী ও প্রচুর টাকার মালিক হওয়াতে তাদের কালো টাকার বিশাক্ত ছোবলে অসহায় হয়ে পড়ে খোদ প্রশাসন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খাল, নদী, ডোবা, পুকুর, ধানী জমিতে প্রকল্প নির্মাণ, পাহাড়ী মাটি দিয়ে ইট তৈরী বন সম্পদে শিশু গাছ কাটা, ইট ভাটা চারুকল স্থানে স্থানে অবৈধ করাত কল, খালের ও ছড়া সহ রাস্তার পাশে ময়লা আবর্জনা ফেলে ভরাট করে ফেলার কারণে ছড়াগুলোর পানির চলাচল বন্ধ। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যানার, পোষ্টার, ফেষ্টুন টাঙ্গানো সহ নানা কারণে এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। এদিকে উপজেলা জুড়ে অন্তত ত্রিশটি কোম্পানি শত শত একর ধানী জমিতে প্রকল্পে পট তৈরী করে ব্যবসা শুরু করলেও ধানের জমির সংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়াতে পরবর্তীতে হাটহাজারীতে ব্যাপক খাদ্য সংকট দেখা দিবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষক মহল।
Discussion about this post