রাজধানী ঢাকার বেওয়ারিশ কুকুর বন্ধ্যাকরণের জন্য বেসরকারি সংস্থা ‘অভয়ারণ্য’র সাথে চুক্তি করেছিলো দুই সিটি করপোরেশন। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১২ সাল থেকে কোনো কাজ ছাড়াই সংস্থাটিকে সব ধরনের সুবিধা দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এ নিয়ে সংস্থা দুটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ‘অদৃশ্য কারণে’ আবার সেই সংস্থাটিকেই অফিস করার জন্য ১০ কাঠার একটি বাড়ি বা জমি দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে সংস্থার প্রধান রোবাইয়াতকে ডিএসসিসির মালিকানাধীন কয়েকটি বাড়িও দেখানো হয়েছে।
অপরদিকে উত্তর সিটি করপোরেশন এরই মধ্যে সংস্থাটির সঙ্গে নতুন চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী রাজধানীর বেওয়ারিশ কুকুর বন্ধ্যাকরণ ও জলাতঙ্ক রোগের টিকা দিতে কুকুর ধরে নেয়ার জন্য সার্বক্ষণিক দুটি গাড়ি, দু’জন চালক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ তাদের সব ধরনের খরচ বহন করবে সিটি করপোরেশন। প্রতিটি কুকুর বন্ধ্যাকরণ ও টিকা বাবদ ডিএনসিসি দিবে ৩ হাজার টাকা।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, গত ৪ বছর ধরে অভয়ারণ্য নামের সংস্থাটি সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয়ার পরেও তারা করপোরেশনের একটি কুকুরও বন্ধ্যা করতে পারেনি। এ অবস্থায় আবার কিসের ভিত্তিতে নতুন করে চুক্তি এবং সংস্থাটিকে রাজধানী ঢাকার মতো স্থানে ১০ কাঠা জমি দেয়া হচ্ছে তা কারোরই বোধগম্য নয়।
চুক্তি সময় সংস্থাটি ডিএনসিসির মালিকানাধীন মোহাম্মদপুরের বছিলা ব্রিজের পাশের একটি ঘরকে নিজস্ব অফিস ও ক্লিনিক দেখিয়ে চুক্তিটি সম্পন্ন করেন। অথচ অফিসটির ভাড়া প্রতিমাসে ১৫ হাজার টাকা দিচ্ছে সিটি করপোরেশন। আর কুকুর ধরে বহনের জন্য প্রতিটি পিকআপ ভ্যান ভাড়া বাবত ৮৬ হাজার ৩০০ টাকাও নিয়েছে সংস্থাটি। কাগজে কলমে উত্তর সিটিতে কিছু কাজ হয়েছে দাবি করলেও বাস্তবে এর চিত্র চোখে পড়ছে না।
জানা গেছে, এনজিওটি এ প্রকল্পটির নামে দাতা সংস্থা বাংলাদেশ অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে বিনামূল্যে ওষুধ, যন্ত্রপাতি এবং অর্থ পাচ্ছে। অথচ ডিসিসিকেই ওই ওষুধ, যন্ত্রপাতি, অফিস ও গাড়িভাড়াসহ অনুসাঙ্গিক খরচ বহন করতে হচ্ছে।
ডিএসসিসির ভেটেরিনারি বিভাগ সূত্র জানায়, আগে নগরবাসীকে বেওয়ারিশ কুকুরের অত্যাচার থেকে রক্ষা দিতে প্রতিদিন গড়ে ৪৫টি কুকুর নিধন করা হতো। কিন্তু বর্তমানে অদৃশ্য কারণে ডিসিসির এ শাখাটিকে ‘অকেজো’ করে রাখা হয়েছে। তবে অতি সম্প্রতি দুই সিটিতে নতুন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা যোগদানের পর দক্ষিণ সিটি ফাইলট প্রকল্প হিসেবে কয়েকটি স্থানের কুকুর ধরে নিয়ে বন্ধ্যাকরণ করেছে। এতে সফলতাও পাওয়া গেছে।
জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ড. মো. সাইদুর রহমান
বাংলামেইলকে বলেন, ‘অভয়ারণ্য থেকে আমরা কোনো সফলতা না পেলেও আগের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সংস্থাটিকে ডিএসসিসির জমিতে অফিস করে দেয়ার জন্য একটা নোট প্রস্তাব করে গেছেন। যা এখনো পাস হয়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘কুকুর বন্ধ্যাকরণের মূল কাজ হচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। আমাদের যে জনবল রয়েছে তাদেরক প্রশিক্ষণ দিয়ে দিলে আমরা পারবো। বিষয়টি আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে বলেছিলাম। কিন্তু তারা দিচ্ছেন না। তারা চায় না আমরা নিজেরাই কাজটি করি।’
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বিশ্ব পরিবেশ সংস্থা ও পরিবেশবাদীদের আপত্তি ও হাইকোর্টের রিটের কারণে কুকুর নিধন বন্ধ রেখে বন্ধ্যাকরণের উদ্যোগ নেয় ডিসিসি। বর্তমানে নগরীতে ৪০ হাজারেরও বিশ বেওয়ারিশ কুকুর রয়েছে। এর মধ্যে মাদী কুকুরের সংখ্যাই বেশি। একটি সুস্থ্য ও সবল মাদী কুকুর বছরে ৩ থেকে ৪টি বাচ্চা দেয়। যার ফলে প্রতিবছর কমপক্ষে ১ লাখ ১২ হাজারেরও বেশি বেওয়ারিশ কুকুর জন্মায়।
এ সুযোগে অভয়াণ্য নামক সংস্থাটি কুকুর বন্ধ্যাকরণের জন্য ওষুধ ও অপারেশন খরচ বাবদ ৩ হাজার টাকা করে সিটি করপোরেশনের কাছে প্রস্তাব দেয়। বহু আপত্তির পরেও সংস্থাটির সব প্রস্তাব অনুমোদন দিচ্ছে সিটি করপোরেশন। প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে রাজধানীর ৪০ হাজার কুকুরের পিছনে ডিসিসির ব্যয় হবে ১২ কোটি টাকা। যা সংস্থার পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা নিজস্ব আয় দিয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তার কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন-ভাতাও দিতে পারছে না।
ডিসিসি সূত্র জনায়, ‘অভয়ারণ্যের’ মালিকের প্রস্তাবটির বিরোধিতা করায় দীর্ঘদিন ধরে সংস্থার একমাত্র নিজস্ব ভেটেরিনারি চিকিৎসক আজমত আলী বরখাস্ত ছিলেন।
এ ব্যাপারে জানতে বেশ কয়েকদিন চেষ্টা করেও অভয়ারণ্যের চেয়ারম্যান রোবাইয়াত বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, বেওয়ারিশ কুকুরের অত্যাচারে শুধু নগরবাসী নয় খোদ নগর ভবনের কর্মকর্তা কর্মচারীরাও অতিষ্ট। ডিসিসি দক্ষিণ ও উত্তরের নগরভবনেই প্রতিদিন শত শত বেওয়ারিশ কুকুর ঘুরা ফেরা করছে। আর মাঝে মধ্যে পথচারী এমনকি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপরেও আক্রমণ করে এই বেওয়ারিশ কুকুর। এর পেছনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলে কার্যত কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলামেইল
Discussion about this post