আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অবস্থা আরও জটিল হয়ে উঠছে। রবিবার রাতে রাজ্যের রাজধানী শ্রীনগর ও জম্মু অঞ্চলে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে স্কুল-কলেজ। এছাড়া বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকেও গৃহবন্দী করা হয়েছে। গোটা রাজ্যে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট সেবা আংশিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
আজ সোমবার সকালে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা এ নিয়ে বৈঠকে বসছে, মূলত যেখানে কাশ্মীর নিয়েই আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, ৫ আগস্ট মধ্যরাত থেকে শ্রীনগরে ১৪৪ ধারা অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। সাধারণ মানুষ চলাচল করতে পারবেন না। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে যে বিপদ তৈরি হয়েছে সে কারণে জম্মু জেলাতেও সোমবার সকাল ৬টা থেকে ১৪৪ ধারায় নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন যে তাকে সম্ভবত গৃহবন্দী করা হতে পারে। এবং অন্যান্য মূল ধারার রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষেত্রেও সম্ভবত একই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে সত্যিটা কী, তা জানার কোনো উপায় নেই। কিন্তু যদি এটাই সত্যি হয়, তাহলে যা আসতে চলেছে, সেটা কেটে গেলে নিশ্চয়ই দেখা হবে সবার সঙ্গে।
ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলির মতে, শুধু ওমর আবদুল্লা নয়, আরেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং সাজ্জাদ লোনকেও গৃহবন্দী করা হচ্ছে। মেহবুবা মুফতি টুইটে জানিয়েছেন, এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমি আশ্বাস দিতে চাই, যাই হোক, আমরা সবাই একসঙ্গে আছি। আমাদের যেটা অধিকার, সেটা পাওয়ার লড়াই থেকে কোনো কিছুই আমাদের সরিয়ে আনতে পারবে না!
মূলধারার সব দলগুল সাধারণ মানুষকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়ে বলেছেন, কোনো পরিস্থিতিতেই যেন আইন নিজের হাতে না তুলে নেন জনগণ। রাতে বিবিসি নিশ্চিত হয়েছে যে ওমর আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতি আর সাজ্জাদ লোনকে গৃহবন্দী করা হয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন, এক অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা শ্রীনগর শহরকে। শহর ছাড়া গ্রামীণ এলাকাতেও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। জায়গায় জায়গায় পুলিশ চৌকি তৈরি করা হয়েছে।
ভারত শাসিত জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের সাংবিধানিক রক্ষাকবচ দেয় যে ৩৫-এ এবং ৩৭০ ধারা, সে দুটি সরিয়ে নেওয়া হতে পারে, এই নিয়ে আশঙ্কা আর গুজব ছড়ানোর পরেই রাজ্যের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলি প্রথমে রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের সঙ্গে দেখা করে। তারপরে ওই দলগুলি রবিবার একটি সর্বদলীয় বৈঠকেও মিলিত হয়। ওই বৈঠকে যে প্রস্তাব পাশ করা হয় সে ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা বলেন, ধারা ৩৫-এ আর ৩৭০ বা জম্মু-কাশ্মীরের স্বতন্ত্রতা বজায় রাখে অন্য যেসব সাংবিধানিক রক্ষাকবচ আছে, সেগুলি বজায় রাখতে সব দল একসঙ্গে কাজ করবে।
গত কয়েকদিন ধরেই ভারত শাসিত কাশ্মীরে বাড়তি ২৮ হাজার কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষী পাঠানোর সিদ্ধান্ত, হিন্দুদের অমরনাথ যাত্রা বন্ধ করে ওই রাজ্য থেকে সব তীর্থযাত্রী আর পর্যটকদের রাজ্য ছেড়ে দ্রুত চলে যাওয়ার পরামর্শ- এসবের পরে সেখানে ব্যাপক গুঞ্জন চলছে।
ভারত শাসিত কাশ্মীরের প্রশাসন আর ভারতীয় সেনাবাহিনী বলছে, অমরনাথ যাত্রাপথ থেকে পাকিস্তানে তৈরি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যও বলছে যে সন্ত্রাসী হামলা চলতে পারে অমরনাথ যাত্রার ওপরে। এরপরেই নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে তীর্থযাত্রী আর পর্যটকদের রাজ্য ছাড়ার পরামর্শ দেয় প্রশাসন।
তারপর থেকেই নানা ধরণের গুজব আর আশঙ্কা ছড়াচ্ছে মানুষের মধ্যে। কেউ প্রশ্ন করছেন জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে তিনভাগে ভাগ করে কাশ্মীর আর লাদাখকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করা হবে কী না, বা জম্মুকে পৃথক রাজ্য করা হবে কী না!
Discussion about this post