একজন আইনজীবীর কাজ এবং কর্ম অন্য যেকোনো পেশা থেকে আলাদা। একজন আইনজীবী সমাজে সংশ্লেষক এর ভুমিকা পালন করেন, তিনি সকল মানুষের সাথে যে ভাবে মিশতে পারেন কিংবা সমাজের অসংগতি সমুহ তিনি যেভাবে তুলে ধরেন এবং তার সমাধানের জন্য এগিয়ে আসেন তা অন্য পেশার লোকেরা ঠিক সেভাবে করতে পারেন না। আইনের জটিল তত্ত্বের বিশ্লেষণের কঠিন দায়িত্ব পালন করা একজন আইনজীবী সম্পর্কে প্রচলিত আছে A Lawyer lives like a king, dies like a begger. হ্যা এই প্রচলিত ধারনা কতটুকু সত্য হয় জানি না তবে অনেকের ক্ষেত্রে এই প্রবাদের বাস্তব ক্ষেত্রে বাস্তবতায় পরিনতি পায়। যখন কাজ থাকে তখন একজন আইনজীবী সত্যি একজন রাজা। কালো গাউন পরা অবস্থায় একজন আইনজীবীর আদালতে চলন কিংবা আদালতের সামনে মক্কেলের জন্য খুরধার যুক্তি তাকে অসীম শক্তিশালী করে তোলে। মক্কেলের দুর্ভোগ লাঘবের স্বস্তি এক রাজ্য জয়ী রাজার স্বস্তির মতই। যতদিন কাজ থাকে ততদিন যে পরিমান আয়ই হোক না কেন একজন আইনজীবীর চলে যায়। কর্মক্ষমতা বিদ্যমান তো রাজার জীবন যাপন ও সে ভাবে চলতে থাকে। কিন্তু একজন আইনজীবী নিজের অজান্তেই সমাজের সেবা করতে করতে নিজের কথা ঠিক সে ভাবে মনে রাখেন না। এটা এই পেশার ধর্ম। অন্যের বোঝা বইতে গিয়ে একজন আইনজীবীর মনেই থাকে না যে তার নিজের জন্য কিছু করা প্রয়োজন। সত্যি বলছি একজন আইনজীবী নিজেদের জন্য কোন কিছু সে খুব কম ক্ষেত্রে সে করে থাকে।
তবে বর্তমানে এটা সত্য যে, অনেক আইনজীবী নিজের মেধা যোগ্যতা দিয়ে আইনপেশার মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। সমাজে আইন পেশাজীবীদের সামস্টিক মান উন্নয়ন করেছেন। অন্য পেশাজীবীদের সাথে তুলনা করলে আইনজীবীরা বেশ ভাল অবস্থানেই থাকেন। এক্ষেত্রে সমাজে আইনজীবীদের বেশ উঁচু অবস্থান তৈরী হয় যার ফলে স্বাভাবিক সময়ে একজন আইনজীবী বেশ সন্মানের সাথেই অন্যদের সাথে সমাজে অবস্থান করেন। কিন্তু সমাজে এই উঁচু অবস্থান অনেক আইনজীবীদের মুলতঃ জুনিয়র আইনজীবীদের বিপত্তিতে ফেলে দেয়। বিশেষ করে নবীন আইনজীবী, যারা এই পেশার মহান ব্রত নিয়ে সিনিয়রদের মতই আইন পেশার মান মর্যাদা রাখার সংকল্পে নিজেদের নিয়োজিত করেন। একজন সিনিয়র আইনজীবী জানেন একজন জুনিয়র আইনজীবী হবার কস্ট কি। নিজের আর্থিক চাহিদায় একজন জুনিয়র একজন সিনিওরের সমান হলেও আর্থিক ক্ষমতায় তারা এক নয়।
প্রযুক্তির এই সমাজের সাথে তাল মিলালে একজন জুনিয়র আইনজীবীকে বেশ বেগ ই পেতে হয়। এটা যে শুধু এই দেশে সত্য তা নয় বরং পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও ঠিক বাংলাদেশের মত না হলেও জুনিয়র আইনজীবীদের বেশ কস্ট করেই সমাজে নিজেদের মান মর্যাদা বজায় রাখতে হয়। তবে সামাজিক নিরাপত্তা থাকার কারনে উন্নত দেশে জুনিয়র আইনজীবীদের কর্মহীন সময়ের জন্য খুব একটা বেগ পেতে হয় না।
কভিড-১৯ ভাইরাসের কারনে এক কঠিন সময় পার করছে আমাদের এই পৃথিবী। বিশ্বের কোন দেশেই আজ ঠিক স্বস্তিতে নেই। তেমনি আমাদের জুনিয়র আইনজীবীরা ও আজ স্বস্তিতে নেই। আজ মাস খানেক ধরে প্রায় সব জুনিয়র আইনজীবী কর্মহীন। হয়ত কাজ আছে কিন্তু করবার সুযোগ নেই।
ঠিক এই সময়েই আইনজীবীদের বিশেষ করে নবীনদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। অন্য স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে উপার্জন না হওয়ার কারনে আইন পেশায় নবীন এবং জুনিয়র আইনজীবীরা বেশ কস্টের সময় পার করছেন। এখনই প্রয়োজন নবীন এবং জুনিয়রদের পাশে দাড়ানোর।
আইনজীবীদের আচরন সম্পর্কিত বিধিমালায় আইনজীবীদের পারস্পারিক আচরণে বলা আছেঃ
“স্বীয় পেশা এবং পেশার সদস্য হিসেবে নিজেদের ও সহকর্মীদের মর্যাদা ও গুরুত্ব সর্বদা সমুন্নত রাখা প্রত্যেক আইনজীবীর দায়িত্ব ও কর্তব্য।”
দেখুন আইনপেশায় আসা প্রত্যেক আইনজীবী এই আচরণ বিধিমালা মেনে চলে। আজকে আমাদের আইনজীবীদের প্রয়োজন। একমাত্র এই মহান পেশার স্বার্থেই আমাদের নবীন ও জুনিয়রদের সাধ্যমত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া। তাদের কস্টের দিনে তাদের পাশে দাড়ানোর।
বার কাউন্সিল আইনের ১৫ নং আদেশে স্পস্ট করে আইনজীবীদের বিশেষ প্রয়োজনে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। আজ এবং এখুনি সময় এই ১৫ নং আদেশের বাস্তব প্রয়োগ ঘটানোর। অবশ্যই যে যার যায়গা থেকে এই রিলিফ ফান্ডের জন্য অর্থ প্রদান করা উচিত।
আমি দেশের সনামধন্য আইনজীবীদের আহ্ববান জানব এগিয়ে আশার জন্য। আইন পেশার মান এবং মর্যাদা রক্ষা করার জন্য। আমরা যদি এগিয়ে আসি, আমরাই আমাদের সহকর্মীদের কস্ট লাঘবে অবদান রাখতে পারি।
এই সময়ে অন্যকারো কাছে যাওয়ার চেয়ে পরম বিজ্ঞ বন্ধুর কাছে যাওয়াই আমাদের সকল আইনজীবীর জন্য কল্যানকর এবং স্বস্তিদায়ক।
বার কাউন্সিলের নির্বাচিত বিজ্ঞ বন্ধুদের প্রতি আবেদন আপনাদের সময়োপোযগী পদক্ষেপ আইন পেশার মানকে সমুন্নত রাখবে। আপনারা আপনাদের দায়ীত্ব থেকে পিছিয়ে যাবেন না। দেশের প্রত্যকে বার এসোসিয়েশনের সহযোগিতায় প্রকৃত চাহিদা সম্পন্ন আইনজীবীদের সাহায্য করুন।
Please don’t allow the Junior/ Novice Lawyer to die like a beggar.
Discussion about this post