নিজস্ব প্রতিবেদক: নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোটের অবিশ্বাস্য বিজয়ের পর এবার আলোচনায় নতুন মন্ত্রিসভা। নতুন মন্ত্রিসভায় পুরনোদের কে থাকছেন, কে বাদ পড়ছেন এবং নতুন করে কারা স্থান পাচ্ছেন তা নিয়ে নানা কৌতূহল রয়েছে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে। বিশেষ করে অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কে পাচ্ছেন তা নিয়ে গুঞ্জন আর আলোচনার অন্ত নেই।
টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা শপথ নেয়ার পরপরই রাষ্ট্রপতির অনুমতি নিয়ে তিনি নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের কাজ শুরু করবেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার অথবা রবিবার মন্ত্রিসভা চূড়ান্ত হতে পারে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে আভাস দেয়া হয়েছে। আর মন্ত্রিসভা গঠনের পর বছরের প্রথম সোমবার নতুন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠক হতে পারে বলেও আভাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। সেই লক্ষ্যেই তারা কাজ করছেন। ১০ জানুয়ারির মধ্যেই মন্ত্রিসভা গঠন হবে বলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন।
তার আগে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী নতুন সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন। দশম সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ ভবনের শপথকক্ষে এমপিদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন।
এ দিকে নির্বাচনের পর থেকেই সচিবালয়, সংসদসহ সারা দেশেই আলোচনায় এসেছে আওয়ামী লীগের নতুন মন্ত্রিসভার বিষয়টি। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর এবার মন্ত্রিসভা কেমন হবে তা নিয়ে গুঞ্জনের শেষ নেই। গত মেয়াদে যারা মন্ত্রিসভায় ছিলেন, তাদের অনেকেই এবার বাদ যাবেন, এমনটাই আলোচনা রয়েছে সব জায়গায়। তাদের জায়গায় আসতে পারেন অপেক্ষাকৃত নবীনরা।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র জানায়, নিরঙ্কুশ জয়ের পর মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে অনেকেই মরিয়া। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে আলোচনা এবং তদবির শুরু করছেন তাদের অনেকে। প্রধানমন্ত্রীর পরিবার, শেখ পরিবারের আত্মীয়, প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন এবং প্রভাবশালী আমলাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছোটাছুটি করছেন নবনির্বাচিত এমপিরা। তবে শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্য খুলবে আর কার পুড়বে তা নিশ্চিত করতে পারছেন না কেউই।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিভিন্ন সূত্র জানায়, এবারের মন্ত্রিসভায় বেশির ভাগ আলোচনা চলছে অর্থ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিয়ে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবার নির্বাচন করেননি। তার আসনে ছোট ভাই ড. আবুল মোমেন নির্বাচিত হয়েছেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে অনেকেই তার কথা বলছেন। কারো কারো মুখে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নামও শোনা যাচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় নিয়ে তার আগ্রহের কথাও জানান তারা। এ ছাড়া টেকনোক্র্যাট হিসেবে এলে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ড. ফরাস উদ্দিনের নামও রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে আরো এক বছর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনে আগ্রহের কথা বলেছেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সে হিসেবে শেষ পর্যন্ত তিনিই বহাল থাকেন কি না তা নিয়েও আলোচনা কম নয়।
এ দিকে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বর্তমানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাইল্যান্ডে রয়েছেন। তিনি সেখানে থেকেই এবার নির্বাচিত হয়েছেন। তাই মন্ত্রিসভা গঠনের আগে দেশে না ফিরলে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কার কাছে যাবে তা নিয়েও নানা গুঞ্জন চলছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, সৈয়দ আশরাফকে দেয়া সম্ভব না হলে শেষ পর্যন্ত এ মন্ত্রণালয় আবারো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতেই রাখা হতে পারে। কারণ স্বাধীনতার পর সৈয়দ আশরাফ ছাড়া এ মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর হাতেই ছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা বলছেন, বর্তমান মন্ত্রিসভা যে থাকবে না এটা মোটামুটি নিশ্চিত। টানা তৃতীয় মেয়াদে শেখ হাসিনা সম্ভবত তার মন্ত্রিসভায় বড় পরিবর্তন আনবেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর সরকার গঠনে শেখ হাসিনা সবাইকে চমকে দেন। আনকোড়া নতুনদের নিয়ে গঠন করেন মন্ত্রিসভা। ওই মন্ত্রিসভা নিয়ে অনেক কথা উঠেছিল। এমনকি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা যারা মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছিলেন। তারাও মন্ত্রিসভাকে কচি কাঁচার আসর বলেছিলেন। ছিয়ানব্বই সালের আওয়ামী লীগ সরকারের বেগম মতিয়া চৌধুরী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছাড়া কেউই ২০০৮ সালের মন্ত্রিসভায় সুযোগ পাননি। আবার ২০১৩ সালে এসে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় তিনি আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদের মতো হেভিওয়েটদের ফিরিয়ে আনেন। শরিকদের মধ্য থেকে আনেন রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনুর মতো নেতাদের। ২০১৪ সালের মন্ত্রিসভায় তিনি ২০০৮ সালের বেশির ভাগ মন্ত্রীকে বাদ দেন। ডা: দীপুমনি, হাসান মাহমুদ, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, জাহাঙ্গীর কবির নানকরা বাদ পড়েন মন্ত্রিসভা থেকে। গত মেয়াদে এদের বারবার মন্ত্রিসভায় ফিরিয়ে আনার গুঞ্জন শোনা গেলেও পাঁচ বছরে মন্ত্রিসভায় বড় রদবদল হয়নি খুব একটা। এবার কেমন হবে?
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, ২০১৪ সালের মন্ত্রিসভায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তারা বাদ পড়তে পারেন নতুন মন্ত্রিসভা থেকে। মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন নতুন মুখ ও তরুণরা। দলের ক্লিন ইমেজ নেতাদের তিনি আনতে পারেন নতুন মন্ত্রিসভায়। আবার জাতীয় পার্টির মন্ত্রীর মধ্যেও পরিবর্তন আসতে পারে। তবে এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে কথা বলতে নারাজ দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। তারা মনে করেন, বরাবরের মতো মন্ত্রিসভা গঠনের পুরো বিষয় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের তিনজন নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, মন্ত্রিসভা গঠন কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র। নতুন মন্ত্রিসভায় কাকে রাখা হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে ঠিক করে রেখেছেন। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।
এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপির বর্জনের মধ্যেই দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন হয়। ১২ জানুয়ারি গঠিত হয় নতুন মন্ত্রিসভা। তখন শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে ৪৮ সদস্যবিশিষ্ট নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। ওই সরকারে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৯ জন মন্ত্রী, ১৭ প্রতিমন্ত্রী এবং দু’জন উপমন্ত্রী ছিলেন। কয়েক দফা রদবদলের পর মন্ত্রিসভার আকার দাঁড়ায় ৫২ তে।
Discussion about this post