বিডি ল নিউজঃ
এম.আর.ওয়াজেদ চৌধুরী ( রায়হান), বিশেষ প্রতিনিধি, বিডি ল নিউজঃ
বাংলাদেশ সংবিধানের ৯৬(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত বিচারপতি থাকা যায়। সেই অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি মো.মোজাম্মেল হোসেন
চলতি মাসেই অবসরে যাচ্ছেন। ১৬ জানুয়ারি তাঁর বয়স ৬৭ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ২০১১ সালের ১৭ মে অবসরে যান প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। এরপর আপিল বিভাগের দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। দেশের পরবর্তী ২১তম প্রধান বিচারপতি কে হবেন, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে চলছে ব্যাপক আলোচনা । সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে দেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়ার পূর্ণ এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। তিনি এ নিয়োগ দিয়ে থাকেন। রীতি অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি অবসরে যাওয়ার পর আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হবেন পরবর্তী প্রধান বিচারপতি । সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা হতে পারেন দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি। বর্তমানে আপিল বিভাগে আটজন বিচারপতি রয়েছেন। জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে বিচারপতি এস কে সিনহা ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, বিচারপতি মো: আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ২০১৭ সালের ৮ জুলাই, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর, বিচারপতি মো: ইমান আলী ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এবং বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ২০১৫ সালের ২ অক্টোবর অবসরে যাবেন। নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতাই বিবেচ্চ্য হবে কি-না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ অতীতে অনেকবার এই রীতির ব্যতিক্রম হয়েছে। আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতিকে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রথা যেমন রয়েছে, তেমনি আপিল বিভাগের অপেক্ষাকৃত জুনিয়র বিচারপতিকেও এই পদে নিয়োগ দেওয়ার একাধিক নজির আছে। স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৩ সালের আগ পর্যন্ত দেশে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের তালিকার ক্রমানুসারে। এরপর থেকে এ পর্যন্ত আট জন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে বিচারপতি খন্দকার মাহমুদ হাসান, বিচারপতি সৈয়দ জিল্লুর রহিম মুদাচ্ছের হুসাইন, বিচারপতি এম এম রুহুল আমীন, বিচারপতি মো. তোফাজ্জল ইসলাম, বিচারপতি এ. বি. এম.খায়রুল হক ও বিচারপতি মো.মোজাম্মেল হোসেনের নিয়োগের ক্ষেত্রে তালিকা ক্রমকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। যার ফলে বিচারপতি মো. রুহুল আমিন ও বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পাবার আগে অন্যরা প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন। তালিকার ক্রমকে প্রাধান্য না দিয়ে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার পর বিচারপতি মো. আবদুল মতিন ও বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মো. মোমিনুর রহমান কর্ম বিরতিতে চলে যান। পরবর্তীতে আবার প্রধান বিচারপতি নিয়োগের আগে বিচারপতি নাঈম কাজে ফিরলেও তাকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়নি, তখন তিনি পদত্যাগ করেন। এটিই আপিল বিভাগের কোন বিচারপতির পদত্যাগের একমাত্র উদাহরণ। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২২ ডিসেম্বর দেশের ১৬তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে অবসরে যান বিচারপতি এম এম রুহুল আমিন। এরপর আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করীমকে নিয়োগ না দিয়ে বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামকে দেশের ১৭তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি ৪৭ দিন দায়িত্ব পালনের পর ২০১০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি অবসরে যান। এরপর ১৮তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করীমকে। তিনি অবসরে যাওয়ার পর আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি এম এ মতিন ও বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানকে ডিঙিয়ে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে ১৯তম প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। এরও আগে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলেও বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করীমকে ডিঙিয়ে বিচারপতি এম এম রুহুল আমিনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তারও আগে চারদলীয় জোট সরকার আমলে আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি মো. রুহুল আমিন ও বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করীমকে ডিঙিয়ে যথাক্রমে বিচারপতি কে এম হাসান ও বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেনকে পর্যায়ক্রমে দেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি মো. রুহুল আমিনকে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হয়। সংশ্লিষ্টদের মতে আগামী ২১, ২২ ও ২৩তম প্রধান বিচারপতি নিয়োগের মাধ্যমে বিচার বিভাগে সৃষ্টি হতে পারে নানান ইতিহাস। এর মাধ্যমে মুসলিম সংখ্যাগুরু বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো একজন অমুসলিম প্রধান বিচারপতি নিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু তাই নয়, ভাষার জন্য জীবন দেয়া বাংলাদেশ প্রধান বিচারপতি হিসেবে এই প্রথম বারের মতো পেতে পারে ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর একজন প্রতিনিধিকে। তবে বিচারপতিদের অবসরে যাবার তারিখ বিবেচনায় রেখে এই নিয়োগ দেয়া হলে একজন নারী বিচারপতিকেও প্রধান বিচারপতি হিসেবে পেতে পারে বাংলাদেশ। আবার অবসরে যাবার দিন তারিখ হিসেব করে এই নিয়োগের মাধ্যমে দেশ এমন একজন বিচারপতিকেও প্রধান বিচারপতি হিসেবে পেতে পারে যাকে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি থেকে স্থায়ী বিচারপতি করার ক্ষেত্রে দীর্ঘ আটবছর বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল। সংশ্লিষ্টদের মতে, উপরোক্ত সবকটি ইতিহাসই সৃষ্টি হতে পারে কেবল প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের বিচারপতিদের অবসরে যাবার তারিখ বিবেচনায় রাখলে। তাদের মতে, বর্তমান প্রধান বিচারপতি অবসরে যাবার পর একই বছর অর্থাৎ আসছে ২০১৫ সালের পহেলা অক্টোবর অবসরে যাচ্ছেন আলোচিত সমালোচিত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। তাই দেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন তিনি। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী অবসরে যাবার পর প্রধান বিচারপতি হতে পারেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। তিনি হতে পারেন বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি। ২০১৭ সালের ৭ জুলাই অবসরে যাবেন তিনি। আপিল বিভাগের বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ১৯৭৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে দেশের প্রথম নারী বিচারক হিসেবে নিম্ন আদালতে যোগ দেন। পরে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগেও প্রথম নারী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। একইভাবে দেশের ইতিহাসে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রথম নারী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।
Discussion about this post