শিক্ষা জীবনের শেষে সমাবর্তন-প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মনের কোণে সুপ্ত বাসনা। লম্বা গাউন ও মাথায় ক্যাপ দিয়ে একে অন্যের ছবি তোলা কিংবা হই-হুল্লোড় করে বাধঁ ভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠা-সমাবর্তনেরই অংশ।
৩১ জানুয়ারি, রোববার দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে চবির চতুর্থ সমাবর্তন। যাতে ২০০৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এবং ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পিএইচডি, এমফিল, এমএস, চিকিৎসা বিজ্ঞান, নার্সিং ও সাধারণ ডিগ্রিধারীদের সনদ ও চ্যান্সেলর পদক দেওয়া হবে।
এবার সাত হাজার ৪৯০ গ্র্যাজুয়েট সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন, যা অতীতের তিনটি সমাবর্তনের চেয়ে কয়েকগুন বেশি।
মাঝে একবার ঘোষিত তারিখ স্থগিত করে রোববার নতুন সূচি ঘোষণা করে চবি কর্তৃপক্ষ।
সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বুধবার (২০ জানুয়ারি) থেকে গাউন বিতরণ করা হচ্ছে। যা সমাবর্তনের দিন সকাল পর্যন্ত চলবে।
সমাবর্তন ক্যাপ না দেওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বন্ধুদের আড্ডাতেও বেশ আলোচনা ও সমালোচনার বিষয় হয়ে ওঠেছে।
‘ক্যাপের’ ছবি পোস্ট করে নিজের টাইম লাইনে আল আমিন দেওয়ান নামে এক অংশগ্রহণকারী লিখেছেন, ‘ধুর ! চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে কী…! গাউনের সাথে গ্র্যাজুয়েশন ক্যাপ নেই! সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীরা এখন এর কাছে ওর কাছে ক্যাপ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। আনন্দই মাটি, এই শীতেও জমবে না ফটোসেশন, হবে না ক্যাপ উড়িয়ে হুল্লোড় আর না হবে মনের মতো সেলফি…।’
সমাবর্তনে অংশ নিতে আবেদন করা যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র নুরুল আমিন জাহাঙ্গীর বলেন, সমাবর্তন মানেই লম্বা গাউন আর ক্যাপ। কিন্তু আমাদের ক্যাপ নেই। পোশাকে সমাবর্তন সমাবর্তন মনে না হলে আনন্দ কিসের?’
২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষে ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে এমবিএ করা ছাত্র মিজানুর রহমান বলেন, ‘চবিতে সমাবর্তন অনেক সময় পরপর হয়। কিন্তু এবার হলো অপূণাঙ্গ পোশাকের জন্য আনন্দ নেই। যোগ দেওয়া যা না দেওয়াই তাই হবে। এরপরও বন্ধুদের একসঙ্গে পাবো বলে যাচ্ছি, নয়তো যেতামই না।’
‘সমাবর্তন ক্যাপ না দেওয়ায় স্মারক হিসেবে আমাদের সংগ্রহে আর কিছুই থাকবে না,’ বলেন তিনি।
‘দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে শিক্ষার্থীরা টুপি ও জামা উল্লাস করতে পারলেও চবির ছাত্র-ছাত্রীরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে ওই টুপি উড়িয়ে সম্মানপ্রাপ্ত হওয়ার আনন্দ উদযাপন করতে পারবেন না তারা। হয়তো একটা সময় বলবেন, ‘সম্মানপ্রাপ্ত হওয়া অসম্পূর্ণই থেকে গেল’ ক্ষোভ ঝেরে ফেসবুকে লিখেছেন মনিরুজ্জামান নামে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক এক শিক্ষার্থী।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষ বলছে, সমাবর্তনে সবাইকে ক্যাপ দেওয়া হয় না। এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি সমাবর্তনে ক্যাপ দেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীরাই সংগ্রহ করেছেন!
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম সমাবর্তনে অংশ নেওয়া সাবেক শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন বলেন, সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই গাউন ও ক্যাপ সরবরাহ করা হয়।
একই কথা জানালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২তম সমাবর্তনে অংশ নেওয়া সমাজকর্ম বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী বাহরাম খানও।
যোগাযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক নূর-ই ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ গ্র্যাজুয়েটদের গাউনের সঙ্গে ক্যাপ দেওয়া হয়। তবে পরে গাউন, কোট ফেরত নেওয়া হলেও স্মারক হিসেবে টাই ও ক্যাপ গ্র্যাজুয়েটদের দিয়ে দেওয়া হয়।’
এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে চ্যান্সেলর পদক পাচ্ছেন নয় শিক্ষার্থী। আর ২৫ পিএইচডি ও ১৩ গবেষককে এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হবে। তারা ক্যাপ পেলেও বাকি নিববন্ধনকারী ৭ হাজার ৪৪৩ জন সাধারণ গ্র্যাজুয়েট ক্যাপ পাচ্ছেন না।
সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে তাদের সনদ তুলে দেবেন।
Discussion about this post