নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানিতে জড়িত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তথ্য নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে শনাক্ত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- এ এম ইসলাম অ্যান্ড সন্স, নিনাদ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, পুষ্পিতা এন্টারপ্রাইজ, এথ্রি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ও একটি পেপার মিল। এই পাঁচ প্রতিষ্ঠানের বাইরে আরো কোনো প্রতিষ্ঠান ক্যাাসিনো সরঞ্জাম আমদানির সাথে জড়িত রয়েছে কি না সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠান ক্যাসিনো সামগ্রী আমদানি করেছে, ওই সব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোন ব্যাংকের মাধ্যমে কারা এবং কী পরিমাণ এসব সরঞ্জাম আমদানি করেছে সে বিষয়গুলো দেখা হচ্ছে। একই সাথে বিপরীতে কী পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করা হয়েছে সে বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব সরঞ্জাম আমদানির সময় ঋণপত্রে ও কস্টমসে কী ঘোষণা দেয়া হয়েছে সে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে তথ্য পাঠাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, আমদানিনীতি অনুযায়ী যে ধরনের ব্যবসার কোনো বৈধতা দেশে নেই, ওই ধরনের ব্যবসার উপকরণ আমদানিরও কোনো বৈধতা নেই। যেহেতু ক্যাসিনো ব্যবসার কোনো বৈধতা নেই, সেহেতু ক্যাসিনোর উপকরণ আমদানি করাও অবৈধ। আমদানিনীতিতে নিষিদ্ধ পণ্যের একটি তালিকা দেয়া আছে। নীতিতে বলা আছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয় এমন কোনো পণ্য আমদানি করা যাবে না। ক্যাসিনো বা জুয়া যেহেতু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয় সে কারণে এ ধরনের পণ্য আমদানি করা যাবে না। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোনো পণ্যের এলসি খোলার সময় পণ্যের নাম, এর শনাক্তরণ নম্বর, কী কাজে ব্যবহƒত হবে এসব তথ্য উল্লেখ করতে হয়।
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে গতকাল বুধবার জানান, এনবিআরের মাধ্যমে যেসব প্রতিষ্ঠান শনাক্ত করা গেছে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিগত কয়েক বছরের ব্যাংক লেনদেন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তারা আমদানির সময় ক্যাসিনো সামগ্রী নিয়ে কী ঘোষণা দিয়েছিল আমদানি ঋণপত্রে তা তদারকি করা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কোনো অর্থ পাচার হয়েছে কি না তাও তদারকি করা হবে। একই সাথে আরো কোনো প্রতিষ্ঠান জড়িত আছে কি না তা বের করতে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা জানান, ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর এ এম ইসলাম অ্যান্ড সন্স জুতার সরঞ্জাম ও মোবাইল যন্ত্রপাতির ঘোষণা দিয়ে ক্যাসিনো চিপস ও রেসিং কার্ড আমদানি করে।
২০১৮ সালের মে মাসে নিনাদ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল কম্পিউটার মাদারবোর্ড আমদানির ঘোষণা দিয়ে এবং এথ্রি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ২০১৭ সালের আগস্টে জন্মদিনের সরঞ্জাম আনার নাম করে নিয়ে আসে রোলেট গেম টেবিল, পোকার গেম, ক্যাসিনো ওয়ার গেম টেবিল। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১০ বছরের নথি ঘেঁটে প্রাথমিকভাবে এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানির তথ্য পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এদের মধ্যে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে খেলার সামগ্রীর এইচএস কোড ব্যবহার করে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানি করে।
প্রসঙ্গত, ক্লাবের নামে জুয়া, ক্যাসিনোসহ অসামাজিক, অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানকে কেন্দ্র করে যেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আইনের আওতায় আসছে তাদের বিষয়েই তদন্ত করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সাথে পত্রপত্রিকাসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে আসছে তাদেরও লেনদেনের তথ্য নেয়া হচ্ছে। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আইনের আওতায় এলেই তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে আটক তিনজনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছেন, যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবের সভাপতি খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জিকে বিল্ডার্সের কর্ণধার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম এবং কৃষকলীগ নেতা ও কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ক্লাবের সভাপতি শফিকুল ইসলাম ফিরোজ। ব্যাংক হিসাব স্থগিতের পাশাপাশি তাদের নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে থাকা ব্যাংকে কোনো অর্থ মজুদ আছে কি না এবং বিগত দিনে কী পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়েছে তার তথ্য পাঠাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
Discussion about this post