ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ঔপনিবেশিক আমল থেকে বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী মহল পুলিশকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। এতে পুলিশের ভাবমূর্তির সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থার উত্তরণ ঘটিয়ে জনমুখী পুলিশ গড়ে তোলার কাজ চলছে। গত শনিবার রাজধানীর গুলশানে আমারি হোটেলে ‘জননিরাপত্তা বিধানে গণমাধ্যম ও পুলিশের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা ও পরামর্শ সভায় পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তারা এ কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা অংশ নেন। বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক আধিপত্যের কারণে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। গণমাধ্যম এদের চিহ্নিত করে গণমাধ্যমে প্রকাশ করবে এবং পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। পুলিশ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হলে জননিরাপত্তা বিধান সম্ভব হবে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, সংবিধানে মত প্রকাশে গণমাধ্যমকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সার্বিক ফৌজদারি ব্যবস্থা নির্ভর করে পুলিশের ওপর। গণমাধ্যম মানুষের কল্যাণ ও ন্যায়বিচার কার্যকরে মতামত দেয়। পুলিশ ও গণমাধ্যমের লক্ষ্য একই। দেশের স্বার্থে পুলিশ ও গণমাধ্যমের মধ্যে সুসম্পর্ক দরকার। তিনি বলেন, পুলিশকে আইনের প্রয়োগে বল প্রয়োগ করতে হয়। কিন্তু গণমাধ্যম বল প্রয়োগের বিষয়টি ফলাও করে প্রচার করলেও কী পরিস্থিতিতে বল প্রয়োগ করছে, তা প্রচার করে না। প্রকাশিত প্রতিবেদনের কারণে জনরোষ সৃষ্টি না হয়ে আইনশৃঙ্খলা অবনতির দিকে যাচ্ছে। সেটি নীতি-নৈতিকতার মধ্যে পড়ে কি না, তা দেখতে হবে। তদন্তাধীন কোনো বিষয়ে একেক পত্রিকা একেক লেখা লেখে। এতে তদন্তকাজে ব্যাঘাত ঘটে। জনমনে পুলিশের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়।
পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা আরও বলেন, রাজনীতি করলেই যে কেউ খারাপ, তা নয়। ‘রাজনৈতিক সন্ত্রাসীরা’ নেতিবাচক সবকিছু করেন। সাংবাদিকদের সুপরামর্শ নিয়ে পুলিশ কাজ করবে। পুলিশ সরকারি বাহিনী হলেও জনগণের জন্য কাজ করে। তারা জনগণের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চায়।
পুলিশের অস্ত্র এবং সাংবাদিকদের কলমের অপব্যবহার কাম্য নয়
প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, পুলিশের হাতে বৈধ অস্ত্র থাকে, সেটির অপব্যবহার কাম্য নয়। তেমনি সাংবাদিকদের হাতে কলম থাকে। সেটির অপব্যবহারও কাম্য নয়।
অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম প্রতিচ্ছবি হচ্ছে গণমাধ্যম। জননিরাপত্তা বিধানে পুলিশ ও গণমাধ্যমের নিরন্তর ভূমিকার মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। পুলিশকে অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হয়। ঔপনিবেশিক আমল থেকে বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালী মহল পুলিশকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। এ অবস্থার উত্তরণ ঘটিয়ে জনমুখী পুলিশ গড়ে তুলতে কাজ চলছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ব্যক্তিরা ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করেন। অধিকাংশ ব্যক্তি পদচারী সেতু ব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে মারা যাচ্ছেন। বল প্রয়োগে পদচারী সেতু ও আন্ডারপাস ব্যবহারে বাধ্য করা হলেও তা ফলপ্রসূ হয় না। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জোর লেখনী মানুষকে সচেতন করতে পারে।
পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে হবে
কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। আলোচিত ঘটনা উদ্ঘাটনে গণমাধ্যম পুলিশকে সহযোগিতা করছে। পুলিশকে সংখ্যালঘু, নারী-শিশু ও আদিবাসীদের নিরাপত্তা দিতে হবে। পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে হবে।’
নিরাপত্তা বিশ্লেষক আবদুর রশিদ বলেন, জননিরাপত্তা বিধানে গণমাধ্যম ও জনগণকে পাশে থাকতে হবে। গণমাধ্যম অনেক সময় ‘মিথ্যা তথ্য’ প্রচার করে জনগণকে উসকে দিয়ে পুলিশকে চাপে ফেলে দেয়।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন একুশের টেলিভিশনের এডিটর ইন চিফ ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মনজুরুল আহসান বুলবুল। অনুষ্ঠানের সারসংক্ষেপ পড়ে শোনান ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) কৃষ্ণপদ রায়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সাবেক তথ্য কমিশনার সাদেকা হালিম, অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, দৈনিক আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, সাংবাদিক আবেদ খান, বাংলাভিশনের বার্তাপ্রধান মোস্তফা ফিরোজ, আইনজীবী মনজিল মোরশেদ, গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীর, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস প্রমুখ।
Discussion about this post