বিডি ল নিউজঃ গত ৩ নভেম্বর রোজ সোমবার মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। ফাঁসির আদেশ অবশ্য বহাল রাখা হয়েছে, কেননা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালই কামারুজ্জামানকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন। তবে, ফাঁসি কার্যকর করা নিয়ে সৃষ্ট মতপার্থক্যের মধ্যে নিজের অবস্থান পাল্টালেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। নিজ কার্যালয়ে রবিবার দুপুরে মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন ‘ট্রাইব্যুনাল আপিল বিভাগ থেকে ফাঁসির রায় পাওয়ার পর মৃত্যু পরোয়ানা দিবেন। জেল কর্তৃপক্ষ সেই পরোয়ানা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
এর আগে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেছিলেন, ‘সংক্ষিপ্ত রায়ের পরিপ্রেক্ষিতেই কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করতে কোনো সমস্যা নেই। সরকার চাইলে যে কোনো সময় রায় কার্যকর করতে পারে।’ তবে আজকের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আদালত কীভাবে সিদ্ধান্ত নিবেন সেটা আদালতের বিষয়। আমরা আইনজীবী হিসেবে যা বুঝি তাই বলি। এর সঠিক ব্যাখ্যা দাঁড়াবে আদালতের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে।’
‘কামারুজ্জামান রিভিউ আবেদন করতে পারবেন না’ বলেও মত দিয়েছিলেন মাহবুবে আলম। কিন্তু, আজকের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আদালত যদি মনে করেন রিভিউ আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে সেটা আদালতের বিষয়। আমি আমার ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা দেই। আমার ব্যাখ্যা শুনে তো আসামিপক্ষ বসে থাকবে না। তারা তাদের মতো চেষ্টা করবে।’
২০১৩ সালের ১১ ডিসেম্বর করা কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদনের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদনের পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো আমরা পায়নি। ওই রায়টা পেয়ে গেলেই সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যেত।’
রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সময় নিয়ে আইনমন্ত্রী ও কামারুজ্জামানের আইনজীবীদের দেওয়া ব্যাখ্যার বিষয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিকেই গ্রহণযোগ্য বলছেন মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, ‘আপিল বিভাগের রায়ের কপি কামারুজ্জামানের হাতে পৌঁছার পর রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার দিন গণনা শুরু হবে।’
এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, ‘রায় ঘোষণার সাতদিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন না করলে আসামি পরবর্তী সময়ে আর সেই সুযোগ পাবেন না।’আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেছেন, ‘আপিল বিভাগের রায় কামারুজ্জামানের হাতে পৌঁছার পর রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার দিন গণনা শুরু হবে।’
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজেরাই পরস্পর বিপরীত মুখী মন্তব্য এই ফাঁসি কার্যকরে কতটুকু প্রভাব বিস্তার করবে তা এখনো আশংকাজনক। তবে, সংবাদ মাধ্যম কিংবা সাধারণ জনগণকে রীতিমত দ্বিধাদ্বন্দ্বে রেখেছেন আইনের প্রধান এই দুই ব্যক্তি। আমরা আশা করব, আইনের সঠিক ব্যাখ্যা দিয়ে এবং এর প্রয়োগের ফলে দেশে সঠিক আইনের শাসন রয়েছে বলে সরকার প্রমাণ করবেন।
Discussion about this post