দৃশ্যমান সম্পদও এদেশে অদৃশ্যমান করে দেওয়া যায় !এর কারণ কি ? কারণ একটাই তা হল একতা বদ্ধতা ! অবাককর ব্যপার হলেও সত্য খারাপ কাজেও মানুষ একতা বদ্ধ হয়ে সে কাজটিকে একেবারে একটি দেশের বড় সম্পদ খুইয়ে দেয়ার মত কাজ করে ফেলতে পারে!কয়লা দৃশ্যমান বলেই এত বড় হিসেবের গরমিলকে প্রমাণ করতে পারেনি তারা । কিন্তু প্রশ্নের জায়গা এটা নয় । প্রশ্নের জায়গাটি হল বারে বারেইতো এমন দুর্নীতি ধরা পড়ছে । কিন্তু কেন এমন হচ্ছে ? ব্যাংকের টাকায় দুর্নীতি, বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি, বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপনে, লাইন টানায় দুর্নীতি, গ্যাসে দুর্নীতি দুর্নীতি সর্বশেষ কয়লায় ! কোন জায়গাটি দুর্নীতির বাইরে রাখতে পারলাম আমরা ?
গত বছর ঠিক এমনই একটি দুর্নীতির খবর এসেছিলো । কিন্তু তার প্রতিদান দিতে হয়েছিলো পুরো একটি অঞ্চলের কৃষককে আর দেশ প্রতিদান দিয়েছিলো চালের সঙ্কটের মাধ্যমে । হ্যা আমি হাওরের বাঁধের কথাই বলছি । যে পরিমান টাকা হাওরের বাঁধের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিলো তার সম্পূর্ণটাই নষ্ট হয়েছে দুর্নীতিতে । তদন্ত কমিটি গঠন, কিছু দোষী মানুষের সন্ধান পাওয়া তারপর একদিন কালের আবর্তে তাদের হারিয়ে যাওয়া । তাৎক্ষনিক দুর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্টতা দেখলে সে ধরণের কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয় অথবা বদলি করে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হয় । এতে করে কিন্তু দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানের ব্যপারটি আসলে কোন সুরাহাই হয় না ।
এবারও কয়লা চুরির পর দেশের টাকা ক্ষতির সাথে সাথে একমাত্র কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে এবং সংবাদ মাধ্যমের তথ্য মতে দেখা যায় আগামী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হবে । তারমানে এতদিন কষ্ট করতে হবে এই অঞ্চলের মানুষগুলোর ! এর সাথে কয়লার ক্ষতিতো আছেই ।
দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে মামলা হয়ে থাকলে একদিকে মামলা চলতে থাকে অন্যদিকে চলতে থাকে দুর্নীতি । টাকা দিয়ে সব মুখ বন্ধ করার অপপ্রয়াসের মাধ্যমেও শুরু হয় নতুন দুর্নীতি । তারপর এক সময় এই দুর্নীতিবাজ লোকেরা দুর্নীতিকে বৈধ করার জন্য দুর্নীতির পক্ষেই কথা বলা শুরু করে উচ্চ স্বরে ।
যেখানে দৃশ্যমান কয়লায় এত দুর্নীতি হচ্ছে সেখানে অদৃশ্যমান খাতগুলোর কি অবস্থা ? গাজীপুরের শ্রীপুর, সাভার ও নারায়নগজ্ঞের মত শিল্প এলাকাগুলোতে প্রায় প্রায়ই শুনি গ্যাসের অবৈধ লাইন উচ্ছেদের কথা। উচ্ছেদ হয় আবার লাইন জোড়া লেগে যায় রাতের আধারে ! কারা এই লাইন জোড়া দেয় ? বৈদ্যতিক লাইনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা ! বিদ্যুতের কিছু মানুষ নিজেরা মিটারের রিংডিং কমানোর দুর্নীতি করে, গ্রাহকের কাছ থেকে বেশী বিল নেওয়ার জন্য ফায়দা তৈরী করে আবার বিদ্যুতের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা !
তবে কি এক সময় গ্যাসও বড় ধরণের চুরির কেলেঙ্কারিতে পড়বে যা এখন থেকে তদারকি করলেই রোধ করা সম্ভব !এমন প্রতিটি ক্ষেত্রই দুর্নীতি থেকে বাঁচাতে আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন । খুব বেশী করে ভাবনার কারণ একটাই দুর্নীতি হয়ে যাওয়ার পর বিচারের আওতায় আনতে যে সময় লাগে সে সময়ে দুর্নীতি বাজেরা তাদের সক্ষমতা দেখানোর জন্যও দুর্নীতির আশ্রয় নেয় ।
এভাবে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি হতে থাকলে দেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে আমরা কি তা চিন্তা করছি ?
দুর্নীতি বন্ধের যত কথাই বলা হোক সবশেষে গিয়ে করনীয় একটাই শাস্তি নিশ্চিত করা এবং তা খুব দ্রুত ।
কিছু কিছু মানুষ আছে তারা আসলে ভাবতেই পারছেনা কেন এত টাকার প্রয়োজন । যে কয়লা চুরি হয়েছে তার দাম দুইশত ত্রিশ কোটি টাকা । দুর্নীতি করে যারা এই টাকাগুলো চুরি করলো তারা এ টাকা দিয়ে কি করবে তা তাদের ভাবনাতেও নেই !
কয়লা চুরির বিষয়টি সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন । আমরা চাই একটি সুষ্ঠ বিচার এবং খুব দ্রুত গতিতে । যারা কয়লার মত দৃশ্যমান সম্পদকে লুট করার মত কাজ করতে পারে তারা অনেক অদৃশ্যমান সম্পদকেও অন্যের কাছে বিক্রি করে দিতে পারে । এ অপরাধ নিজের দেশের সাথে বেঈমানী করার মতই । কয়লা দুর্নীতির সাথে পেট্রোবাংলার কেউ জড়িত আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন । দেশ বাঁচাতে হলে এ সমস্ত দুর্নীতির ব্যপারে এখনই যুদ্ধ ঘোষনা করতে হবে ।
কয়লা চুরির সাথে যারা সামান্যভাবেও জড়িত থাকবে তাদের চাকুরিচ্যুত করা হোক । দুর্নীতি যারাই করবে এবং তার প্রমাণ অনুযায়ী সকলকেই চাকুরিচ্যুত করে নতুন সৎ মানুষ নিয়োগের ব্যবস্থা করাই এবং সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ হতে পারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ।
সাঈদ চৌধুরী
সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি
ও রাসায়নবিদ
শ্রীপুর, গাজীপুর
Discussion about this post