অনেকটা ফরমায়েশি লেখা। অটিস্টিক শিশুদের জন্য ভালবাসা পোষ্টের পর দুজন পাঠক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন অটিজমের সংজ্ঞা, লক্ষণ সম্পর্কে ধারণা থাকলে ভাল হত। তৃতীয় একজন পাঠক অটিজমের সর্বাধিক গুরুত্বপুর্ণ বিষয়গুলো হাইলাইটস করেছেন। ধন্যবাদ সবাইকে। থিওরী লিখলে পড়তে বিরক্তি লাগতে পারে ভেবে তা না করে আমি কয়েকটা কেইস স্টাডি তুলে ধরছি যা থেকে কাঙ্খিত ধারণা পাওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
প্রথমে আমার মেয়ে নোভাকে দিয়ে শুরু করি। নোভার বয়স ১৬। সে চার বছরে দাঁড়াতে শিখেছে। কথা বলা ঔ সময় থেকে হলেও তা কয়েকটি সীমিত শব্দ দিয়ে। প্রথম থেকে টিভিতে কার্টুন দেখতে পছন্দ করত। গান, কবিতা অথবা নাটকের ডায়ালগ, বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল মুখস্ত করতে পারত। বর্ণমালা (বাংলা, ইংরেজি) পড়া ও লিখা শিখে ফেলল। তিনটি ক্লাশ কোনমতে পার করতে পারলেও আর লেখাপড়ায় আগাতে পারল না। স্কুল চেঞ্জ হল। কোন লাভই হল না। নোভা কাপড় পরতে পারত না এখন কিছুটা পারে। টয়লেট করতে পারত না। এখন কিছুটা পারে। টয়লেট থেকে ভালভাবে পরিষ্কার হয়ে কাপড় চেঞ্জ করতে পারে না। জুতা উল্টাসিধা করে পড়তে পারলে ও মোজা মোটেই পারে না। ডাকলে ইচ্ছে হলে সাড়া দেয় ইচ্ছে না হলে দেয় না। সবসময় চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে না। পড়াশোনায় আগাতে না পারার একমাত্র কারণ যা আমাদের কাছে ধরা পড়ল তা হল সে ভিজুয়াল লার্নার। বানান করে করে উচ্চারণ করতে পারে না। আর স্বল্প শব্দ ভান্ডার নিয়ে পড়াশোনায় আগানো যায় না।
আমার এক সহকর্মীর ছেলে ইয়াজিদ। বয়স ১২। সবল, সুঠাম, সুদর্শন একটি ছেলে। সাইকেল চালাতে পারে, সাতার কাটতে পারে। মূখস্ত করতে পারে। চেনা শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ পড়তে পারে না। অংক মোটেই বুঝে না। একটু পর পর অট্টহাসি দেয়। পরিচিত জনদের উপর হাত তুলতে থাকে। কোনভাবেই তা বন্ধ করে না। পা টেনে মুখের কাছে আনতে চায়। সামাজিক কিউ গুলো মোঠেই বুঝে না।
আমার আরেক বন্ধুর মেয়ে নাবিহা। বয়স ১০। সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতে চায়। ছবি আঁকতে ও লিখতে পছন্দ করে। পড়তে চায় না। চোখের দিকে তাকায় না। করো সাথে কোন কথা বলে না। প্রত্যেকটি আদেশের প্রতিধ্বনী করে। যেমন বাবা বললেন,নাবিহা লক্ষ্মী মেয়ে এদিকে আস। সে ও বলবে নাবিহা লক্ষ্মী মেয়ে এদিকে আস।
আরেক বন্ধুর মেয়ে রিয়া। বয়স ৬। কারো সাথে কোন কথা বলে না। কোন হেয়ারিং সমস্যা নেই। গান পছন্দ করে।
পাঠক কয়েকটি কেইস স্টাডি তুলে ধরলাম। সবগুলোরই অটিস্টিক সমস্যা রয়েছে। কারো কম কারো বেশী। অটিজম আসলে একটি স্পেকট্রাম ডিজওর্ডার।
কোন শিশুর যোগাযোগ সমস্যা নিয়ে কোন সন্দেহ হলে ১৮ মাস বয়সে নিন্মোক্ত উপায়ে পরীক্ষা করা যেতে পারে:
অভিভাবককে জিজ্ঞেস করুন:
১. আপনার শিশু মিছিমিছি রান্না রান্না খেলা, গাড়ী গাড়ী খেলা, বা অন্য কোন কল্পনা দিয়ে খেলা খেলতে পারে কিনা?
২. আপনার শিশুটি তার পছন্দের জিনিস আঙুল দিয়ে দেখাতে পারে কি না?
আপনি শিশুটিকে তীক্ষ্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করুন:
১. শিশুটি কি আপনার চোখে চোখে তাকায়?
২. কোন পছন্দের জিনিসের দিকে আঙুল দিয়ে বলুন”এই দেখ কি সুন্দর গাড়ী”। শিশুটি কি সাথে সাথে ঐ জিনিসটির দিকে তাকাল?
৩. শিশুটিকে খেলনা গাড়ী দিয়ে বলুন এই গাড়ী দিয়ে তুমি একটু ঢাকা থেকে ঘুরে আস, মোবাইল ফোন দিয়ে বলুন আপনাকে ফোন করতে, খেলনা পুতুল দিয়ে বলুন পুতুলকে গোসল করিয়ে নিয়ে আসতে।
৪. ঘরের দেয়াল ঘড়ি, লাইট বা ফ্যান আঙুল দিয়ে দেখাতে বলুন।
যে শিশুর অটিজম সমস্যা রয়েছে-সে এইসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে না। ১৮ মাসের কোন শিশু এসব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলে তাকে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে বলুন। একটি আর্টিকেলে এসব জ্ঞান দিতে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ আমার দেয়া লক্ষণগুলো পড়ে আপনি যদি নিশ্চিত হয়ে বসে থাকেন আপনার শিশুটির অটিজম নেই এবং তা বাস্তবে থেকে থাকে – তাহলে বিপর্যয় হয়ে যেতে পারে। সেজন্য বিন্দুমাত্র সন্দেহ হলে বসে থাকবেন না। বয়স হলে ঠিক হয়ে যাবে- এরকম বাণী শুনে অপেক্ষা করা চুড়ান্ত বোকামী বলে গণ্য হতে পারে। তখন করার আর তেমন কিছু থাকবে না।
[আব্দুল লতিফ]
Discussion about this post