সিলেটে কলেজছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিস হত্যাচেষ্টা মামলায় বাদী এমসি কলেজের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষসহ ১৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।
আজ সোমাবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম মো. সাইফুজ্জামান হিরোর আদালতে মামলার একমাত্র আসামি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি) ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক (বর্তমানে বহিষ্কৃত) বদরুল আলমের উপস্থিতিতে এই সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
বেলা পৌনে ৩টায় ১৮ জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা শেষ হয়। আগামী ১১ ডিসেম্বর পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন বিচারক।
মোট ৩৭ সাক্ষীর মধ্যে আলোচিত এ মামলায় ১৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হওয়ায় বাকি থাকলেন তদন্ত কর্মকর্তাসহ আরও ১৯ জন। সোমবার দুজন জব্দ তালিকার সাক্ষীসহ ১২ জন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আদালতের এপিপি অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান।
সোমবার প্রথমদিন আদালতে সাক্ষীরা হলেন- মামলার বাদী খাদিজার চাচা আবদুল কুদ্দুস, এমসি কলেজের অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ চন্দ্র, উপাধ্যক্ষ আয়াতুল ইসলাম আখঞ্জি, মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার সাধারণ নিবন্ধক (জিআর) বেলাল হোসেন, জব্দ তালিকার সাক্ষী মাসুম আহমদ ও ফয়জুল ইসলাম।
এছাড়া ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষী দিয়েছেন ইমরান করিম, সালেক আহমদ, ফাহমিদা এলআই বৃষ্টি, রূপমা আক্তার, মাহফুজ আহমদ, আল আমিন, আমির হোসেন, আবদুল্লাহ মোহাম্মদ উজ্জ্বল, হাফিজুর রহমান, মো. মহরম আলী, হাবিবুর রহমান এবং বেলাল আহমদ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ফাহমিদা এলআই বৃষ্টি সাক্ষ্য দিতে গিয়ে আদালতে জানিয়েছেন, বদরুল যখন খাদিজাকে কোপাচ্ছিলেন তখন কিছু ছাত্র খাদিজাকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলে বদরুল তাদের চাপাতি নিয়ে ধাওয়া করেন। পরে প্রত্যক্ষদর্শীরা অনেকটা ভয় পান।
গত ২৯ নভেম্বর চাঞ্চল্যকর এই মামলার একমাত্র আসামি বদরুল আলমের (২৯) বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৫ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেছিলেন আদালত। এ মামলায় সাক্ষী মোট ৩৭ জন। এর বাইরে মামলার বাদীও সাক্ষ্য দেবেন। মামলার চার্জশিটে দ্বিতীয় সাক্ষী হচ্ছেন খাদিজা বেগম নার্গিস।
আদালত সূত্র জানায়, খাদিজার ওপর হামলার পর মামলা হওয়ার এক মাস পাঁচদিনের মাথায় শাহপরান থানার উপপরিদর্শক হারুনুর রশিদ গত ৮ নভেম্বর অভিযোগপত্র (চার্জশিট) আদালতে দাখিল করেন। ১৫ নভেম্বর আদালতে অভিযোপত্রের শুনানি শেষে তা গৃহীত হয়।
উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর সিলেট এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের চাপাতির কোপে গুরুতর আহত হন খাদিজা। প্রথমে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর সেখান থেকে ৪ অক্টোবর তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে এনে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়।
স্কয়ার হাসপাতালে প্রথম দফায় নার্গিসের মাথায় ও পরে হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়। তার অবস্থার একটু উন্নতি হলে লাইফ সাপোর্ট খুলে দেয়া হয়। এরপর আইসিইউ থেকে এইসডিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখান থেকে ২৬ অক্টোবর তাকে কেবিনে নেয়া হয়। এরপর আবারো মাথায় ও হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়। বর্তমানে অনেকটা ভালো অবস্থায় রয়েছেন খাদিজা।
হামলার দিন ঘটনাস্থল থেকে বদরুল আলম আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে জনতা। আদালতে হামলার দায় স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন বদরুল। হামলার দায়ে তাকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
Discussion about this post