বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়া আদেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে দুদকের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ রোববার (১২ মার্চ) চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নো অর্ডার (কোনো আদেশ দেননি) দেন। একইসঙ্গে আবেদনের ওপর নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ১৬ মার্চ দিন ধার্য করা হয়েছে।
এর ফলে এই মামলার কার্যক্রম স্থগিতে হাইকোর্টের আদেশই বহাল থাকল বলে জানিয়েছেন মামলার আইনজীবীরা। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। পরে আদেশের বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করেছেন।
গত ৭ মার্চ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে দেয় হাইকোর্ট। একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার নাইকো দুর্নীতি মামলা কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিষয়ে একটি রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। ওই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ মামলা স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
বিচারপতি শেখ আবদুল আওয়াল ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। এ সময় খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, এম বদরুদ্দোজা বাদল, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, রাগিব রউফ চৌধুরী। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশিদ আলম খান।
আদালত সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার সাথে মওদুদ আহমদও এ মামলার আসামি। মওদুদ আহমদ ওয়াশিংটনে নাইকোর বিষয়ে চলা আরবিট্রশেন শেষ না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন। গত বছরের ১৬ আগস্ট বিচারিক আদালত এ আবেদন খারিজ করে দেন। পরে এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ফৌজদারি আবেদন করেন মওদুদ আহমদ। এর বিরুদ্ধে মওদুদ আহমদ হাইকোর্টে রিভিশন মামলা করেন। ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে দায়ের করা নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। দুদক এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে।
খুরশিদ আলম খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, এ মামলায় মওদুদ আহমদের এক আবেদন নিয়ে রুল শুনানি চলছে। ওইটির শেষ না হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেও মামলাটি স্থগিত থাকবে।
হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে উল্লেখ করে দুদকের এ আইনজীবী বলেন, আমরা আদালতে বলেছি, দুদকের মামলা শুনানির জন্য এখতিয়ার সম্পন্ন আদালত রয়েছে। এই আদালতের সেই এখতিয়ার নেই। এ বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আদালতে আমাদের আবেদন শোনেননি। এই যুক্তিতে আমরা হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবো।
মামলাটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এর আগেও একবার হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই নাইকো দুর্নীতির মামলার কার্যক্রম দুই মাসের জন্য স্থগিত ও রুল জারি করেন আদালত। পরে স্থগিতাদেশের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। তবে ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর রুল নিষ্পত্তি করে খালেদা জিয়ার ওই আবেদন খারিজ করে নাইকো দুর্নীতি মামলা চলবে বলে রায় দেয় আপিল বিভাগ।
হাইকোর্টের রায়ে সচল হওয়ার পর নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচারিক কার্যক্রম ফের শুরু হয়েছে ঢাকার বিশেষ জজ-৯ আমিনুল ইসলামের আদালতে। মামলাটি আগামী ১২ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ রয়েছে।
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ০৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম। ২০০৮ সালের ৫ মে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক এস এম সাহেদুর রহমান। অভিযোগপত্রে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।
এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
Discussion about this post