দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সারাদেশে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।
রাজধানীর প্রেসক্লাবের সামনে বেলা ১১টার দিকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া রাজধানীতে আরও ছয়টি পয়েন্টে বিএনপি নেতারা লিফলেট বিতরণ করবেন বলে জানা গেছে।
এ ছাড়া জেলায় জেলায় স্থানীয়রা সুবিধা মতো সকাল থেকেই এ কর্মসূচি পালন করছে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী লিফলেট বিতরণ এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। এ ছাড়া তারেক রহমানসহ বাকি পাঁচ আসামিকে ১০ বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণার পর খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়বাতাবাদী দল-বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির প্রচার করা ‘শেখ হাসিনার ১৫ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহর/খারিজ বনাম উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত ভিত্তিহীন মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড’ শিরোনামে লিফলেটে বলা হয়েছে-
‘প্রতিহিসংসা ও জিঘাংসার বশবর্তী হয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত এক সাজানো কাল্পনিক মামলায় তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং ৭১ বছর বছরের বয়োজ্যেষ্ঠ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অর্থ আত্মসাতের ভিত্তিহীন মিথ্যা অভেযোগ সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো পরিত্যক্ত স্যাঁতস্যাঁতে জরাজীর্ণ ভবনে নির্জন কারবাসে পাঠানো হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটির বেশি টাকা আত্মসাতের অভেযোগ আনা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। অথচ উক্ত ট্রাস্টের কোনো অর্থই আত্মসাৎ হয়নি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে এক খণ্ড জমি ক্রয় ছাড়া বাকি এক টাকাও কোথাও খরচ হয়নি। বরং সেই দুই কোটি টাকা এখন সুদে আসলে ছয় কোটি হয়ে ট্রাস্টের নামেই ব্যাংকে পড়ে আছে। উক্ত ট্রাস্টের গঠন এবং পরিচালনার সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক নেই বা ছিল না। তিনি কখনও উক্ত ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কিংবা সদস্য ছিলেন না। উক্ত ট্রাস্টের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিচালনায় তিনি স্বাক্ষরকারী ছিলেন না এবং উক্ত ট্রাস্টের কার্যাদি, লেন-দেন, হিসাব-নিকাশ ও অ্যাকাউন্ট পরিচালায় তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বা ছিল না। অর্থাৎ আত্মসাৎ তো দূরের কথা বেগম জিয়া বা তার পরিবারের কোনো সদস্য উক্ত অ্যাকাউন্ট থেকে এক টাকাও উত্তোলন করেননি। কুয়েত দূতাবাসের আনুষ্ঠানিক পত্রে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, দাতা কর্তৃক এই অর্থ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিউয়ার রহমানের স্মৃতি রক্ষার্থে প্রদান করা হয়েছিল। এরপরও আইনের মারপ্যাঁচে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানো হয়েছে।’
লিফলেটে বলা হয়, ‘এক টাকাও খরচ হলো না, অথচ জবানবন্দিতে দেওয়া ‘প্রশ্নবোধক’ চিহ্নকে ‘দাঁড়ি’ চিহ্ন বানিয়ে দুর্নীতির সহযোগী বানানো হলো তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেত্রী বেগম জিয়াকে। তাকে জেলে পাঠিয়ে মূলত গণতন্ত্রকে জেলে পাঠালেন শেখ হাসিনা। রায়ের অনেক আগে থেকেই শেখ হাসিনা বলে আসছেন এতিমের টাকা চুরির দায়ে বেগম জিয়ার শাস্তি হবে। তার অবৈধ মন্ত্রীরা বেগম জিয়ার সাজা ঘোষণা করেছেন বার বার। আর সেটা করার জন্যই একজন প্রধান বিচারপতি ও একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে পদচ্যুত করে এবং তারেক রহমানকে ভিত্তিহীন দুর্নীতির মামলায় খালাস দেয়া নিম্ন আদালতরে বিচারপতিকে দেশত্যাগে বাধ্য করে তিনি অধঃস্তন আদালতের দখল নিজের হাতে নিয়েছেন। উদ্দেশ্য হলো, স্বৈরাচারী শাসক কিংবা মধ্যযুগের রাজা-বাদশাহদের মতো চাইলে যে কাউকে ইচ্ছামতো সাজা দেয়া। দেশের জনগণ মনে করে, বিচার ব্যবস্থা কব্জা করে এই রায়ের মাধ্যমে শেখ হাসিনা তার চরম রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেছেন। তাই বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানোর কয়েক ঘণ্টা পরই শেখ হাসিনা বরিশালের জনসভায় দম্ভ নিয়ে উপহাস করে বলেছেন, ‘তিনি আজ কোথায়’? তার ছেলে বাণী দেন, ‘জেলখানাই তাদের ঠিকানা’। এক সময় শেখ হাসিনার পিতাও সিরাজ সিকদারকে হত্যা পরে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে দম্ভোক্তি করে বলেছিলেন-‘কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?’ এরপর কে কোথায় গেছে, তা দেশবাসীর জানা আছে। বাংলাদেশে রাজনীতিবিদদের নামে দুর্নীতির মামলা নতুন কিছু নয়। এ সব মামলায় কেউ কেউ কারাগারেও গিয়েছেন।
‘এক টাকাও দুর্নীতি না করে বেগম খালেদা জিয়াকে যদি জেলে যেতে হয়, তবে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত শেখ হাসিনার ও অন্যদের কী শাস্তি হওয়া উচিৎ তা ভবিষ্যতে জনগণের আদালতেই নির্ধারিত হবে ইনশাআল্লাহ।’
Discussion about this post