নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল থেকে কারাগারে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটের আদেশ আজ সোমবার দেবে হাইকোর্ট। রবিবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশের জন্য এই দিন ধার্য করেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে শুনানি করেন এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন ও মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটনি জেনারেল মুরাদ রেজা।
এর আগে রিটের আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার দিন নির্ধারণ ছিল। তবে খালেদা জিয়ার সম্পূরক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে আদেশের জন্য রবিবার দিন ধার্য করেছিলেন।
গত ১১ নভেম্বর রিট আবেদনটি করা হয়। আবেদনে বিএনপির প্রধানকে বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা অব্যাহত রাখার আরজি জানানো হয়। রিটে স্বরাষ্ট্রসচিব, কারা কর্তৃপক্ষ, বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষসহ নয়জনকে বিবাদী করা হয়।
হাইকোর্টে আপিল আবেদনকারী মামলার অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড ব্যারিস্টার নওশাদ জমির সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন ও খালাস চেয়ে মূল ৪১ পৃষ্ঠার আপিল আবেদন করেছি। ওই আবেদনের সঙ্গে বিচারিক আদালতের ৬৩২ পৃষ্ঠার রায় সংযুক্ত করাসহ ৬৭৩ পৃষ্ঠার নথিপত্র জমা দেয়া হয়েছে। আর আপিলে বেগম খালেদা জিয়ার খালাস এবং জামিনের জন্য ২০টি গ্রাউন্ড তুলে ধরা হয়েছে।‘
যেসব গ্রাউন্ডে খালাস চেয়েছেন খালেদা জিয়া :
১. জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট একটি প্রাইভেট (ব্যক্তিগত দাতব্য প্রতিষ্ঠান)। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপ করেননি এবং এ মামলায় ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন প্রযোজ্য নয়।
২. জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট নামে হিসাব খোলার আবেদন ফরমে খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর থাকলেও তার পদবি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ নেই কিংবা তার প্রধানমন্ত্রী পদবির কোনো সিল নেই। এই ট্রাস্টের কোনো হিসেবেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার নাম উল্লেখ নেই। এ ট্রাস্ট তিনি তার ব্যক্তিগত ক্ষমতাবলে পরিচালিত করতেন।
৩. এ মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণাদি ছিল না। এ মামলায় তাকে ধারণার ওপর নির্ভর করে অভিযুক্ত এবং সাজাপ্রদান করা হয়েছে।
৪. রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা চ্যারিটেবল ট্রাস্টের ফান্ডে অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন।
৫. ডা. ফারজানা আহমেদ নামের এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে মামলার অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। কিন্তু তাকে এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষী বা তার কোনো লিখিত বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি।
৬. দুদক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এবং পক্ষপাতমূলকভাবে এ মামলার অভিযোগের অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। যা রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীর বক্তব্য থেকে প্রতীয়মাণ হয়।
৭. কারাগারের ভেতরে স্থাপিত আদালতে অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে এ মামলার বিচারকার্য পরিচালনা, সাজা ও দণ্ডপ্রদান করা হয়- যা বেআইনি।
৮. জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট জিয়াউর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত একটি ব্যক্তিগত ট্রাস্ট যা ট্রাস্ট আইন ১৮৮২ দ্বারা পরিচালিত হবে বিধায় এর বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষমতা দুদকের নেই।
৯. মামলার ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার পে-অর্ডার সম্পর্কিত বিচারিক আদালতের অনুসন্ধানটি মামলার মূল নথির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
১০. মামলার দালিলিক প্রমাণাদি ও রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য এটা প্রমাণ করে যে, মেট্রো মেকার অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেড মামলা সংশ্লিষ্ট ৫টি পে-অর্ডারের আবেদন করেছিল।
১১. মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যে প্রমাণিত হয়েছে যে, মেট্রো মেকারস অ্যান্ড ডেভেলপার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ৫টি পে-অর্ডার সম্পর্কিত বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য।
এ ছাড়াও আপিল আবেদনের অবশিষ্ট ৯টি গ্রাউন্ড মামলা পরিচালনার স্বার্থে প্রকাশ করতে নারাজ ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। তিনি বলেন, ‘মামলাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। মামলা পরিচালনার স্বার্থে অবশিষ্ট গ্রাউন্ডগুলো এখনি প্রকাশ করা সম্ভব না।’
এ যুক্তিতে খালেদা জিয়া খালাস পাবেন কি না-এমন প্রশ্নের উত্তরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির বলেন, ‘আমরা বিচারিক আদালতের আবেদনটি দেখেছি। পর্যাবলোচনা করেছি। এরপর হাইকোর্টে সাজা থেকে খালাস চেয়ে আবেদন করেছি। আমরা আপিল আবেদনে যেসব যুক্তি তুলে ধরেছি সেগুলো আইন ও বিভিন্ন মামলার রেফারেন্স থেকে নেয়া।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আমাদের আপিলটি হাইকোর্ট গ্রহণ করে খালেদা জিয়াকে খালাস দেবেন।’
প্রসঙ্গত, বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে নির্দেশনা চেয়ে এর আগে খালেদা জিয়ার করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ৪ অক্টোবর নিষ্পত্তি করে কিছু নির্দেশনা ও পর্যবেক্ষণসহ আদেশ দেয় হাইকোর্ট। হাইকোর্টের আদেশের পর চিকিৎসার জন্য ৬ অক্টোবর তাকে বিএসএমএমইউতে নেয়া হয়। এরপর থেকে তিনি ওখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রায় এক মাস চিকিৎসার পর ৮ নভেম্বর বিএসএমএমইউ থেকে তাকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়।
Discussion about this post