নিজস্ব প্রতিবেদক: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন সরাসরি খারিজ (সামারিলি রিজেক্ট) হওয়ার পর হাইকোর্টে করা জামিনের আবেদন ফেরত নিয়েছেন তার আইনজীবীরা।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান।
বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে আবেদনটি শুনানির জন্য গেলে হাইকোর্ট বলেন, যেহেতু বিষয়টি এর আগে হাইকোর্টের একটি জ্যেষ্ঠ বেঞ্চে শুনানির হয়েছে, সেহেতু বিষয়টি এখন আপিল বিভাগে নিয়ে যেতে পারেন।
এ সময় আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, বিষয়টি এর আগে হাইকোর্টের অন্য একটি বেঞ্চে শুনানি হলেও আপনাদের শুনতে কোনো বাধা নেই। পরে আদালত শুনানিতে সাড়া না দিলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জামিন আবেদনটি (টেক ব্যাক) ফেরত নেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খানও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
দুদক আইনজীবী বলেন, জামিন আবেদনের শুনানির জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম। মাননীয় অ্যাটর্নি জেনারেলও প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু কোর্ট নিজেই সন্তুষ্ট হতে পরেননি যে, তারা নতুন করে একটা মামলা আবার শুনতে পারবেন, যেখানে একবার খারিজ হয়েছে।
অন্য কোনো বেঞ্চে আবেদনটি নিয়ে যাওয়া হবে কি-না, জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, আইনজীবী প্যানেলের সঙ্গে আলোচনা করে তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
গত মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ জামিন আবেদন করেন।
২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক। রায়ে খালেদা জিয়াকে সাত বছর করে কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়। বিচারিক আদালতের দেয়া ওই সাজা বাতিল ও খালাস চেয়ে গত বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল করেন খালেদা জিয়া।
আপিলের গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানি নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে ওই মামলায় খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালতে দেয়া জরিমানার আদেশ স্থগিত করে বিচারিক আদালতে থাকা মামলাটির নথি তলব করেন হাইকোর্ট। দুই মাসের মধ্যে নথি পাঠাতে বলা হয়। বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি গত ২০ জুন হাইকোর্টে পাঠানো হয়।
এরপর খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের বিষয়টি আদালতে তুলে ধরেন তার আইনজীবীরা। এর ধারাবাহিকতায় ৩০ জুলাই জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হয়। পরদিন ৩১ জুলাই তা সরাসরি খারিজ করেন হাইকোর্ট।
এর আগে অপরাধের গুরুত্ব, সংশ্লিষ্ট আইনের সর্বোচ্চ সাজা এবং বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদাসহ অন্য আসামিদের করা আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত- এ তিন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে গত ৩১ জুলাই বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন খারিজ করে রায় দেন। সে খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে আপিলে না গিয়ে নতুন করে হাইকোর্টের অন্য বেঞ্চে আবার জামিন আবেদনকে সেদিন নজিরবিহীন বলে মন্তব্য করেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা, বয়স, সামাজিক অবস্থান, অপরাধের ধরন- সবকিছু মিলিয়েই তিনি জমিন পেতে পারেন, এমন সব যুক্তি তুলে ধরে নতুন করে জামিন আবেদনটি করা হয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্ট ও নিম্ন আদালত মিলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এখন ১৭টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে দুটি মামলায় জামিন পেলেই খালেদা জিয়া কারাগার থেকে মুক্তি পেতে পারেন। দুই মামলায় তার ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।
Discussion about this post