নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছে বুধবার। সকালে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ে বিএসএমএমইউর একজন কর্মকর্তা প্রতিবেদনটি নিয়ে আসেন এবং বিকেলে প্রতিবেদনটি সংশ্লিষ্ট আদালতে পৌঁছে দেয়া হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহুরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন এবং খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি হবে।
এ দিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার যে অ্যাডভান্স ট্রিটমেন্টের কথা বলা হচ্ছে তা নতুন ধরনের চিকিৎসা। এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে যা সামাল দেয়ার ক্ষমতা বিএসএমএমইউএর এই মেডিকেল বোর্ডের নেই।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, অ্যাডভান্স চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া সম্মতি প্রয়োজন হবে। কেন না এই চিকিৎসায় সাইড ইফেক্ট আছে। এটা সামাল দেয়ার ক্ষমতা যারা মেডিকেল বোর্ডে আছেন তাদের আছে কি না? এ জন্য তাকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। এটা বাংলাদেশে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের একটা চিকিৎসা। মেডিকেল বোর্ডও স্বীকার করেছে এটা নতুন ধরনের চিকিৎসা, যা ইদানীং আবিষ্কৃত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাভাবিকভাবেই রিঅ্যাকশন হতে পারে। সে কারণে খালেদা জিয়া যদি সম্মতি না দেন সে ক্ষেত্রে হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে, বেগম জিয়া অসুস্থ, তার উন্নত চিকিৎসা দরকার। তার উন্নত চিকিৎসার সুযোগ আমরা চাচ্ছি। আমরা তার জামিন চাচ্ছি।
খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, যে হাসপাতাল থেকে মেডিকেল রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে, সেটি সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন। ফলে রিপোর্টে সরকারের কোনো প্রভাবের প্রতিফলন থাকলে আমরা আদালতকে বলব, আপনারা তাকে (খালেদা জিয়া) হাজির করে দেখুন, তার শরীরের কী অবস্থা। এ ছাড়া আজ বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এ দিকে খালেদা জিয়ার জামিন ঠেকাতে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন, আদালতে যখন শুনানি হবে, তখন আমরা আমাদের বক্তব্য উপস্থাপন করব।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা কি তা জানতে মেডিকেল রিপোর্ট চান হাইকোর্ট। এ ছাড়া অ্যাডভান্স (উন্নত) ট্রিটমেন্টের জন্য খালেদা জিয়া সম্মতি দিয়েছেন কি না, সম্মতি দিলে চিকিৎসা শুরু হয়েছে কি না এবং শুরু হলে কী অবস্থা তা জানাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) ভিসিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন উপস্থাপন করা হলে রবিবার শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত। জামিন আবেদনে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে তার উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে না। জামিন পেলে তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান। আবেদনকারীর (খালেদা জিয়ার) শারীরিক অবস্থার দিন দিন অবনতি হচ্ছে। তিনি এখন গুরুতর অসুস্থ। অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারেন না, খেতে পারছেন না। এমনকি ওষুধও নিতে পারছেন না। তাই দ্রুত তাকে যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশে নিয়ে আধুনিক, উন্নত চিকিৎসা বা থেরাপি দেয়া প্রয়োজন। তার এই অসুস্থতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আধুনিক উন্নত থেরাপি বা চিকিৎসার স্বার্থে নতুন করে জামিন আবেদনটি করা হয়েছে।
গত ১২ ডিসেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। এর আগে গত ৩১ জুলাই এ মামলায় হাইকোর্ট জামিন আবেদন খারিজ করেন।
গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াসহ চার আসামিকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা করে দুদক।
Discussion about this post