বিডি ল নিউজঃ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের কৌশল নিয়ে সরকারের ভেতরে নানা আলোচনা চলছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, আদালতের নির্দেশ থাকায় বিএনপি নেত্রীকে গ্রেফতার না করে কোনো উপায় নেই।
এদিকে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের প্রসঙ্গ নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। এ সময় আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আনিসুল হক এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ খোকন উপস্থিত ছিলেন।
গত বুধবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ফান্ড নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মামলায় বিশেষ আদালত থেকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এর পর থেকেই বিএনপি চেয়ারপারসন গ্রেফতার হচ্ছেন কি-না এবং হলে কোন প্রক্রিয়ায় হবেন, তা নিয়ে দেশজুড়ে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে থেকেই হরতাল-অবরোধের নামে নাশকতা-সন্ত্রাস ও মানুষ হত্যার দায়ে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের জন্য একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এমনকি সংসদেও এ দাবি তোলেন সরকারি দলের একাধিক এমপি। লাগাতার অবরোধ শুরু হওয়ার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকেও এমপিরা খালেদা জিয়ার গ্রেফতারের দাবি জানান। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে ইতিবাচক মত দেননি। এসব দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অবশ্য জানিয়েছিলেন, নির্বাহী ক্ষমতায় গ্রেফতার হবেন না খালেদা জিয়া। আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর সরকারের নীতিনির্ধারকরা নড়েচড়ে বসেছেন। তারা এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও তাদের কথা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আদালতের নির্দেশনা মানা যায়, সরকারও সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে।
সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের লাগাতার অবরোধ-হরতালে দেশজুড়ে চলমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি এখন অনেকটা স্বাভাবিক ও শান্ত হয়ে এসেছে। সরকারের কঠোর ভূমিকায় দেশের মানুষের শঙ্কাও কাটতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় হরতাল-অবরোধের মধ্যে মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। তবে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের জন্য আদালতের নির্দেশনার পর সার্বিক পরিস্থিতিতে নতুন মেরুকরণ হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করা হলে চলমান রাজনৈতিক ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, সেদিকে তীক্ষষ্ট দৃষ্টি রাখার তাগিদও সরকারকে দেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো ঠেকাতে সরকার দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ কর্মকর্তাদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দিয়েছে।
অবশ্য এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না ক্ষমতাসীন দলের কোনো নেতা কিংবা সরকারের মন্ত্রীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকার দেশের সার্বিক পরিস্থিতিও বিবেচনায় নেবে এবং সে অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপও নেওয়া হবে।
সৌজন্যে: সমকাল
Discussion about this post