নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের পর বদলে যায় স্থানীয় রাজনৈতিক দৃশ্যপট। সাত খুনের ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় নূর হোসেনকে। যেসব আইনজীবীরা খুনের এ ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন তাদেরকেই এখন দেখা গেছে আসামিদের পক্ষে আইনি লড়াই চালাতে। জামায়াত ইসলামীপন্থী একজন আইনজীবীকেও দেখা গেছে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের পক্ষে কাজ করতে।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনার তিনজন তদন্ত কর্মকর্তা ১১ মাস ধরে তদন্ত করেন। এরপর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নূর হোসেনসহ র্যাবের চাকরিচ্যুত তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন দেন।
সাত খুনের দুটি মামলায় গ্রেফতারকৃত ২৩ জনের উপস্থিতিতে ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে চার্জ গঠন সম্পন্ন হয়। গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ২১ জন ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১০৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
সাত খুনের মামলায় গ্রেফতারকৃত ২৩ আসামির মধ্যে অন্যতম প্রধান চার আসামি হলেন- নূর হোসেন, র্যাবের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা তারেক সাঈদ, এমএম রানা ও আরিফ হোসেন।
মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের পক্ষে আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা। তারেক সাঈদের আইনজীবী আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের নেতা অ্যাডভোকেট সুলতানুজ্জামান যিনি এর আগে পিপি ছিলেন। আরিফ হোসেনের আইনজীবী হলেন আড়াইহাজার থানা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি আব্দুর রশিদ ভূঁইয়া।
এদিকে, মামলা চলাকালে পিপির ওপর চাপ দিতেও দেখা গেছে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের। গত বছর ৩ মার্চ একটি মামলার বাদী মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী কাউন্সিলর সেলিনা ইসলাম বিউটির সাক্ষ্য গ্রহণের সময়ে তাকে ব্যাপক জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এসময় তিনি কিছু কিছু প্রশ্নের জবাব দিতে না পারলে বিউটিকে সহায়তা করেন পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন। তিনি আদালতে দেওয়া আসামিদের জবানবন্দি ও মামলার সূত্র ধরে তথ্য দেন।
সাক্ষ্য গ্রহণের জেরার একপর্যায়ে অ্যাডভোকেট খোকন সাহাও নানা প্রশ্ন করেন সেলিনা ইসলাম বিউটিকে। তিনি তাকে বলেন, ‘আপনি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমানী স্টেডিয়াম চিনেন কিনা। তখন বিউটি বলেন, যেহেতু আমি নারায়ণগঞ্জের মেয়ে সেহেতু অবশ্যই চিনবো।’ খোকন সাহাকে পাল্টা প্রশ্ন করে বিউটি বলেন, ‘একজন আইনজীবী মারা গেছেন। তাকে খুন করা হয়েছে। আর আপনি একজন আইনজীবী হয়ে কীভাবে এ মামলা করছেন। আপনি তো আপনার সহকর্মী আর ভাইয়ের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করছেন। সাত খুনের পর আপনি আমার বাসায় গিয়ে বলেছেন সহায়তা করবেন। এখন আসামিদের পক্ষে কাজ করছেন।’
জবাব খোকন সাহা বলেন, ‘আমি আসলে এখন একজন আইনজীবী হিসেবে মামলায় সহায়তা করছি।’
অ্যাডভোকেট এম এ রশিদও প্রশ্ন করেন বলেন, ‘আপনি কি আপনার স্বামীসহ সাতজনকে অপহরণ হতে দেখেছেন?’
জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি যদি দেখতাম তাহলে কি আর আমার স্বামীকে কেউ মারতে পারতো। আর আপনি একজন আইনজীবী। যদি আজ আপনার বোন এরকম স্বামী হারা হতো তাহলে কেমন লাগতো?’
এছাড়া সাত খুনের মামলায় গ্রেফতারকৃত আরও পাঁচজনের জামিন আবেদন করেন অ্যাডভোকেট মাঈনুদ্দিন আহমেদ। যিনি জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত ‘বাংলাদেশ ল ইয়ার্স কাউন্সিল’ নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সেক্রেটারি।
বিউটি বলেন, ‘কিছু কিছু আইনজীবী একসময় ৭ খুনের আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু এখন তারা দূরে সরে গেছেন। নূর হোসেনকে যেদিন আদালতে হাজির করা হলো সেদিনও দেখেছি নূর হোসেনের সঙ্গে তাদেরকে হাসাহাসি করতে।
১৯ সেপ্টেম্বর বাদী পক্ষের আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খান জানান, জেরার শুরুতে যেভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে তাতে শালীনতা বজায় রাখা হয়নি মনে হয়েছে। কখনও তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ‘মিয়া, আরে মিয়া’ এসব সম্মোধন করা হয়েছে। এটা নিয়ে পিপি সাহেবও আপত্তি জানিয়েছিল। তাছাড়া প্রশ্নে মনে হয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে শাসন করা হচ্ছে। চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
সুত্র বাংলাট্রিবিউন
Discussion about this post