বিডি ল নিউজঃ খুন হয়েছে আপনার গুলিতে, আর মামলা হবে আপনার বডিগার্ডের বিরুদ্ধে ? এ কেমন সিনেমার কাহিনীর মত হয়ে গেল না? আসলে বাস্তবকে সামনে রেখেই সিনেমা গুলো করা হয়, যেমনটা ঘটল বাগেরহাটে। বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতার বন্দুকের গুলিতেই তার মোটরসাইকেলের চালক মাসুম সরদার (২৫) নিহত হয়েছেন। তবে ওই ঘটনায় মামলা হচ্ছে ওই আওয়ামী লীগ নেতার বডিগার্ড মিজানের বিরুদ্ধে। বাগেরহাট পুলিশ সুপার (এসপি) নিজামুল হক মোল্লা শুক্রবার বিকেল বলেন, ‘জিউধারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম হাওলাদারের লাইসেন্স করা দোনলা বন্দুকের গুলিতে নিহত হন চালক মাসুম সরদার।’ তবে মোড়েলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতার নামে মামলা হবে না। বরং ওই নেতাই মামলা করবেন তার বডিগার্ড মিজানের বিরুদ্ধে।’ নিহত মাসুম সরদার আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম হাওলাদার ওরফে বাদশা মেম্বারের মোটরসাইকেলচালক। তিনি ওই এলাকার রফিক সরদারের ছেলে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে মাসুম সরদার বাদশাকে নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে পাশের মংলা উপজেলা থেকে জিউধরা ইউনিয়নের লক্ষ্মীখালী গ্রামে ফিরছিলেন। জিউধরা-মংলা সড়কের পালেরখন্ড গ্রামে এলে অসাবধানতাবশত বাদশার বন্দুকের গুলিতে মাসুম নিহত হন। ওই ঘটনার পর বিষয়টি ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য বাদশার লোকজন তার উপর হামলা হয়েছে বলে অপপ্রচার চালায়। এ বিষয়ে বাদশার মোবাইলে ফোন করলে তার ছেলে সুমন দাবি করেন, তার বাবাকে সন্ত্রাসীরা গুলি করে। সেই গুলি চালকের গায়ে লাগে। এতে চালক নিহত হন। তার বাবার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাবা অজ্ঞান অবস্থায় আছেন। তার সঙ্গে কথা বলা যাবে না।’ ঘটনার পর বাগেরহাট পুলিশ সুপার (এসপি) নিজামুল হক মোল্লা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খান, সহকারী পুলিশ সুপার এনামুল হক মিঠু, মোড়েলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম খান ঘটনাস্থলে ছুটে যান। বিষয়টি সন্দেহজনক হওয়ায় পুলিশ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাদশার বৈধ দোনলা বন্দুকটি জব্দ করে। একই সঙ্গে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাগেরহাট গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। বাগেরহাট পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্যা বলেন, বাদশার নাকি অন্য কারও বন্দুকের গুলিতে মাসুম নিহত হয়েছেন তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বাদশা জানায়, ওই সময় মোটরসাইকেলে তারা তিনজন ছিলেন। তিনি মোটরসাইকেল থামিয়ে বন্দুকটি বডিগার্ড মিজানের হাতে দিয়ে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যান। এ সময় আকস্মিক গুলি বের হয়ে ঘটনাস্থলেই মাসুম নিহত হন।
মোড়েলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম খান বলেন, ওই ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। এটি প্রক্রিয়াধীন। বাদশা মেম্বার বাদী হয়ে তার বডিগার্ড মিজানের বিরুদ্ধে মামলা করবেন। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক সূত্রের দাবি, বাদশা মেম্বার ওই এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক। তার একটি বড় বাহিনী আছে। ঘের দখল, বাড়ি দখল থেকে শুরু করে এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তারা করে না। এমনকী ছাত্রলীগ নেতারাও রক্ষা পান না তার বাহিনীর হাত থেকে। স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্যের নির্দেশে পুলিশ বাদশাকে শেল্টার দেয়। কিন্তু সাংবাদিকদের কারণে বাদশার প্রথম নাটক ব্যর্থ হয়। এবার পুলিশ ও ওই সংসদ সদস্য মিলে দ্বিতীয় নাটক শুরু করেছেন। বলির পাঠা হিসেবে এবার হতভাগা বডিগার্ড মিজানকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ঘটনার সময় উপস্থিত বডিগার্ড মিজানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
বাগেরহাট আদালতের আইনজীবী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ওই ঘটনার জন্য বন্দুকের লাইসেন্সধারীই দায়ী থাকবেন। আদালতে তাকেই প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি কেন তার বন্দুক অন্যের হাতে দিয়েছিলেন। মামলা হলে বন্দুকের মালিকের নামে হবে। তিনি আরও বলেন, এখানে বাদশার বাদী হয়ে মামলা করার কোনো সুযোগ নেই। যদি থাকে কোন আইনে তা আছে, এটি আমার বোধগম্য নয়।
সূত্রঃ দ্য রিপোর্ট
Discussion about this post