নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের পিটিয়ে হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম দ্রুত সময়ে শেষ করতে আবরার হত্যার চার্জশিট খুব অল্প সময়ের মধ্যে দেয়া হবে। এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কতৃর্পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে হলগুলোতে তল্লাশি অভিযান চালানো হবে।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সচিবালয়ে নিজ দফতরে তিনি একথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বুয়েটে আপনারা নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেখেছেন। এটা কারো কাম্য নয়। কেন এই হত্যাকাণ্ড, কী উদ্দেশ্য ছিল সবকিছু এখন তদন্ত করা হচ্ছে। আপনারা ইতোমধ্যে শুনেছেন যারা যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল কিংবা যারা যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, আমরা ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করেছি। আমরা ১৪ জনকে ইতোমধ্যে ধরেছি। তারপর আরও যদি কেউ জড়িত থাকেন। সবাইকে আমরা ধরব।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমরা আশা করি খুব শিগগিরই, খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই এই মামলার পূর্ণাঙ্গ চার্জশিট প্রদান করতে পারব। আমাদের পুলিশ সেই কাজটি করছে। চার্জশিট যাতে নিখুঁত হয়, সবকিছু যাতে নির্ভুল হয়; সেজন্য পুলিশ ইতোমধ্যে কাজ শুরু করছে। আমরা আশা করি একটা নিখুঁত চার্জশিট দিয়ে বিচারের কাজটি দ্রুততার সাথে শেষ হয়, আমরা সেই কাজটি সহজতর করব। আমরা সেটাই করছি।’
সমালোচনার মুখে বুয়েটের ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহাকে আজ আটক করা হয়েছে, কিন্তু তার নামে মামলা হয়নি- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি যতটুকু শুনেছি, আমি শিওর না- অমিত সাহাকে ঠিক সেই মুহূর্তে পায়নি, সেই মুহূর্তে সে ছিল না। তার সাথে যোগাযোগ করলে সে বলেছিল সে পূজার ছুটিতে বাইরে গেছে। যাই হোক, যেভাবে হোক, তাকেও ধরা হয়েছে। মামলায় আবরারের বাবা কিছু নাম দিয়েছিলেন, সেই নামের বাইরেও কিন্তু পুলিশ যাদের সম্পৃক্ততা পাচ্ছেন তাদেরকে ধরছেন। অমিত সাহা কিংবা যে কেউ হোক আমাদের কাছে ফ্যাক্টর নয়, আমাদের কাছে ফ্যাক্টর সে অপরাধী কিনা, সে অপরাধী হলেই আমরা ধরছি।
কবে নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে তল্লাশি চালানো হবে- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করে নেব। কোথায় কীভাবে করব? আমাদের আরও কিছু ফর্মালিটিজ (আনুষ্ঠানিকতা) পালন করতে হয়, সেটা আপনারা জানেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এটা করব। আমরা কলেজগুলোর ছাত্রবাসেও এটা (তল্লাশি) করব।
টর্চার সেল অনেক ক্লাবে আছে, সেগুলোতেও তল্লাশি হবে কি না- এ বিষয়ে তিনি বলেন, দেখুন টর্চার সেল একটা ক্লাবে ছিল, সেখানে টেন্ডারবাজির একটা ব্যাপার-স্যাপার ছিল। হলগুলো তো ছাত্ররা থাকেন। সেখানে টর্চার সেল কতখানি ছিল, কতখানি আছে কতখানি না আছে সেগুলো আমরা সবই দেখব।
র্যাগিং কালচার আইন করে বন্ধ করার কোন চিন্তা-ভাবনা করছেন কি না- এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, খুব বেশি রকমভাবে এই কালচারটা রয়েছে বুয়েটে, জাহাঙ্গীরনগর ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেভাবে নেই। যারা ছাত্র নেতৃত্ব দেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ তাদেরও চিন্তা করার সময় হয়েছে। তারা এই কালচার থেকে কীভারে বেরিয়ে আসবেন, আমার মনে হয় তাদেরও চিন্তা-ভাবনা করা উচিত এই মুহূর্তে।
শুদ্ধি অভিযানের চলবে কি না, একটি ইস্যুর কারণে আরেকটা ঢাকা পড়ে যাচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, না না, ঢাকা পড়েনি। প্রধানমন্ত্রী খুব সুন্দর করে গতকাল ব্যাখ্যা করে দিয়েছেন, এরপর আর আমার কিছু বলার নেই। আমি শুরু এইটুকু বলব, আমি সবসময় বলে আসছি, প্রধানমন্ত্রী যে নির্দেশনা দিয়েছেন… তৃতীয়বারের মতো তিনি রাষ্ট্রভার পালন করছেন, এখন তিনি রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন। টেকসই শান্তি ও উন্নয়ন ধরে রাখার জন্য সুশাসন একদম অপরিহার্য। আমরা একটাকে প্রতিষ্ঠিত করব। আমরা এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। তবে শুদ্ধি অভিযান সবসময়ই হয়ে থাকে। ইদানিংকালে যারা মাত্রার বাইরে চলে গেছে প্রধানমন্ত্রীর তাদের ব্যাপারে অ্যাকশন নিচ্ছেন এবং নির্দেশনা দিচ্ছেন। দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা করব। শুদ্ধি অভিযান বলুন, টেন্ডারবাজদের নিয়ন্ত্রণ বলুন, যা কিছু প্রয়োজন হয়, কোনটাই আমরা বাদ দিচ্ছি না।’
প্রসঙ্গত ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় খুন হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে রোববার রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা। তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা।
হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ না রাখতে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে (ডিলেট) দেয় খুনিরা। তবে পুলিশের আইসিটি বিশেষজ্ঞরা তা উদ্ধারে সক্ষম হন। পুলিশ ও চিকিৎসকরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন।
এ ঘটনায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে তার বাবা চকবাজার থানায় সোমবার রাতে একটি হত্যা মামলা করেন। বুয়েট কর্তৃপক্ষ একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। পাশাপাশি গঠন করেছে একটি তদন্ত কমিটিও।
Discussion about this post