খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) নিরালা ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই সোহেল রানাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। নারী দিয়ে একজন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে ফাঁদে ফেলে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির মামলায় সোমবার (১৫ আগস্ট) রাতে সোহেল রানাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
আজ বুধবার (১৭ আগস্ট) বুধবার দুপুরে খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে সোহেল রানার সাময়িক বরখাস্তের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিতকরেছেন।
এদিকে, গ্রেফতারকৃত অন্য চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হলে বুধবার আদালত বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তবে এসআই সোহেল রানা অসুস্থ হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (খুমেক) প্রিজন সেলে ভর্তি থাকায় তার রিমান্ডের আবেদন করা হয়নি।
তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দু’টি মামলা মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) রাতে থানা থেকে মহানগর গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) স্থানান্তর করা হয়েছে।
সহকারী ভূমি কর্মকর্তা রমজান আলীর দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ইন্সপেক্টর নাফিউর রহমান জানান, খুলনা মহানগর হাকিম আয়শা আক্তার মৌসুমীর আদালত শুনানি শেষে গ্রেফতারকৃতদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর মধ্যে স্বপ্না আক্তার ওরফে রুনা ও সীমার ৫ দিন করে, রাজু শেখের ৩ দিন এবং বিকাশ এজেন্ট মো. আব্দুল হামিদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
অন্যদিকে, প্রতারণার ফাঁদে পড়া রফিকুল ইসলামের দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ইন্সপেক্টর মো. মমতাজুল হক বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে এসআই সোহেল রানা ও রাজু শেখ তার মামলার আসামি। তাদের ওই মামলায় গ্রেফতার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়ে রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে।
গত ১৪ আগস্ট খুলনার দাকোপ উপজেলার তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. রমজান আলীকে গ্রেফতারকৃত স্বপ্না আক্তার ওরফে রুনা বিপদে পড়ার কথা বলে কৌশলে ডেকে নেন। পরে নগরীর নিরালা আবাসিক এলাকার (রোড নং-১৭, বাড়ি নং-২৯৫) একটি বাড়ির একটি রুমে নিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে বের হয়ে যান স্বপ্না। কিছুক্ষণ পর সীমা, স্বপ্না, রাজু শেখ, মহিন আরা বেগম এবং নিরালা পুলিশ ফাঁড়ির আইসি (ইনচার্জ) এসআই সোহেল রানাসহ কয়েকজন ঘরে ঢুকে তাকে মারধর করেন। এক পর্যায়ে সীমাকে নগ্ন করে তার পাশে দাঁড় করিয়ে এসআই সোহেল রানা নিজের মোবাইলে তা ভিডিও করেন। পরে এসআই সোহেল রানা পুলিশ কমিশনারসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কথা বলে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে রমজান আলীর কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। না দিলে রেকর্ডকৃত ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়।
এ অবস্থায় রমজান আলী তার স্ত্রীর মাধ্যমে এসআই সোহেল রানার নির্দেশনা অনুযায়ী খুলনা সদর থানা সংলগ্ন বিকাশ এজেন্ট আব্দুল হামিদের নম্বরে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। আরও ১০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ওইদিনই রমজান আলী বাদী হয়ে এসআই সোহেল রানাসহ ৯ জনকে আসামি করে খুলনা সদর থানায় চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন।
নগরীর আপার যশোর রোডের এশিয়া স্টিল নামে স্টিল ফার্নিচারের মালিক রফিকুল ইসলামকেও ৫ আগস্ট একইভাবে ফাঁদে ফেলা হয়। তাকেও কৌশলে নিরালার ওই বাড়িতে ডেকে নিয়ে নারী দিয়ে ছবি তুলে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। পরে ৩০ হাজার টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তিনিও সোমবার এসআই সোহেল রানাসহ ৬ জনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। দু’টি মামলায় এসআই সোহেল রানাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
এসআই সোহেল রানা খুলনা সদর থানার এসআই হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় নগরীর বাগমারা এলাকার উজ্জ্বল সাহা বাপ্পী হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হন। সে সময় মামলার সঠিক তদন্ত না করে আসামিপক্ষকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
Discussion about this post