বিডি ল নিউজঃ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র ও বিএনপি নেতা পলাতক জাহিদ হোসেন খোকনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে। খোকনের বিরুদ্ধে আনা ১১টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেয়। এর মধ্যে ৬টি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড ও ৪টি অভিযোগে ৪০ বছর কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
এর আগে, উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৭ এপ্রিল মামলার রায় অপেক্ষমাণ রাখা হয়। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের ১২তম রায়। জাহিদ হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরিতকরণসহ ১১টি অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া ২নং অভিযোগে ৫ বছর কারাদণ্ড, ৩নং অভিযোগে ১০ বছর, ৪নং অভিযোগে ২০ ও ১১নং অভিযোগে ৫ বছর কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। তার বিরুদ্ধে আনা ১নং অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোখলেসুর রহমান বাদল সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জাহিদ হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগগুলো সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছিলাম। আদালত সেটা আমলে নিয়ে এ রায় প্রদানের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন।
অন্যদিকে রাষ্ট্র থেকে নিযুক্ত খোকনের পক্ষের আইনজীবীআব্দুস শুকুর খান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আমার মক্কেলের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার পায়নি।’ ‘এ সময় রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কিনা’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাহিদ হোসেন খোকন পলাতক আছেন। নিয়ম অনুযায়ী তাকে নিজে হাজির হয়ে আপিল করতে হবে।’
জাহিদ হোসেন খোকন নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র ও থানা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগ উঠার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর খোকনের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে তার মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর মানবতাবিরোধী অপরাধে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করা হয়। খোকনের বিরুদ্ধে ১৬ জন নারী ও শিশুসহ ৫০ জনকে হত্যা, তিনজনকে পুড়িয়ে হত্যা, ২ জনকে ধর্ষণ, ৯ জনকে ধর্মান্তরিত করা, ২টি মন্দিরসহ ১০টি গ্রামের বাড়িঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ, সাতজন গ্রামবাসীকে সপরিবারে দেশান্তরে বাধ্য করা ও ২৫ জনকে নির্যাতনসহ সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ আনা হয়। পালাতক খোকনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। পরে তাকে হাজির করতে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে জাতীয় দৈনিক জনকণ্ঠ ও ডেইলি স্টারে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
কিন্তু তিনি হাজির না হওয়ায় ওই বছরের ১৪ আগস্ট তার অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল। একই দিনে ১৪ আগস্ট খোকনের পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেন আব্দুস শুকুর খানকে। ২০১৩ সালের ২৩ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দখিল করার পর ১৮ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। ২০১২ সালের ১৬ এপ্রিল শুরু হয়ে ২০১৩ সালের ২৮ মে শেষ হয় তদন্ত কাজ। পরে ২৯ মে ১৩টি অভিযোগসহ তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে দাখিল করে তদন্ত সংস্থা। গত বছরের ৯ অক্টোবর ১১টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করে খোকনের বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। বিচার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন তিনি। পূর্বের যে কোন রায়ের বিপরীতে হরতালের ডাক দেওয়া হলেও আজ এখনো পর্যন্ত কোন হরতালের খবর পাওয়া যায় নি।
Discussion about this post