গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সরকারের ছেলে স্কুলছাত্র আশিকুর রহমান সাম্য (১৩) হত্যা মামলায় ১১ আসামির মধ্যে তিনজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। বাকি আট আসামিকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে গাইবান্ধা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক দীলিপ কুমার ভৌমিক এ আদেশ দেন।
মামলার রায়ে আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও প্রতিহিংসার জেরে পরিকল্পিতভাবে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সাম্যকে হত্যা করে লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে রাখে।
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত তিন আসামি হলো−শাহারিয়ার সরকার হৃদয়, রাকিবুল হাসান সজীব ও মাহামুদুল হাসান জাকির প্রধান। এদের মধ্যে হৃদয় ও জাকির নিহত সাম্যর সহপাঠী।
দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আট আসামি হলো−মাসুদ প্রধান সুজন, আল-আমিন ইসলাম, আল-আমিন, রাবেয়া বেগম, শিমুল মিয়া, রুনা বেগম, জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক কাউন্সিলর জয়নাল আবেদিন। দণ্ডপ্রাপ্ত সবাই গোবিন্দগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মো. শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, ‘চাঞ্চল্যকর এ মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ ও জবানবন্দিতে সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও আট আসামিকে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন। প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানার আদেশ দেন।’ তবে এ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে উচ্চ আদালতে আপিলের কথা জানান তিনি।
এ হত্যা মামলার রায়ে অসন্তোষ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন সাম্যর পরিবার, সহপাঠী ও গোবিন্দগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। রায়ের পর নিহত সাম্যর বাবা আতাউর রহমান সরকার আদালতে উপস্থিত গণমাধ্যমককর্মীর বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১১ আসামির পরোক্ষ সহযোগিতায় আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত, সাক্ষ্য-প্রমাণ ও আসামিদের স্বীকারোক্তিতে হত্যাকাণ্ডটি প্রমাণিত হয় আদালতে। আমাদের প্রত্যাশা ছিল, দোষীরা প্রত্যেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে। কিন্তু এই রায়ে আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবো।’
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ প্রধান বলেন, ‘সাম্য হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠেছিল গোবিন্দগঞ্জবাসী। দীর্ঘ প্রত্যাশিত হত্যা মামলার রায়ে আমরা অসন্তুষ্ট ও হতাশ হয়েছি।’
গত ৬ জানুয়ারি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের দিন ধার্য করেন আদালত। এ মামলায় আদালতে ১৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানি হয়। প্রায় সাড়ে চার বছর মামলার বিচার কার্যক্রমে গোবিন্দগঞ্জের নিম্ন আদালতে ৪০ দিন ও জেলা জজ আদালতে ১৭ দিন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
গোবিন্দগঞ্জ পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান সরকারের একমাত্র ছেলে নবম শ্রেণির ছাত্র আশিকুর রহমান সাম্যকে ২০১৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে অপহরণ করা হয়। পরদিন বর্ধনকুঠি বটতলার কমিউনিটি সেন্টারের সেপটিক ট্যাংক থেকে সাম্যর হাত-পা বাঁধা বস্তাভর্তি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যার ঘটনায় ৯ নম্বর ওয়ার্ড পৌর কাউন্সিলর জয়নাল আবেদিনকে প্রধান এবং সাম্যর সহপাঠীসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গোবিন্দগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন সাম্যর বাবা। তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ১১ মার্চ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ।
Discussion about this post