কামরুল হাসান (নাজমুল), গাজীপুর প্রতিনিধিঃ জামিন জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে গাজীপুর জেলা জজ আদালতের আইনজীবী মো. জালাল উদ্দিনের ওপর মামলা পরিচালনায় ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব আদালতে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁকে ছয় মাসের জন্য অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
সোমবার বিচারপতি মো. শওকত হোসেন ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে জালিয়াতির ঘটনা তদন্ত করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) বলা হয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল। তিনি সাংবাদিকদের জানান, গাজীপুর সদরের রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মো. রবিউল ইসলামকে আবেদনে তদবিরকারক হিসেবে দেখানো হয়েছে। আবেদনকারীর আইনজীবী হিসেবে দেখানো হয়েছে মো. জামাল উদ্দিনকে। কিন্তু জামালের যে আইনজীবী পরিচয়পত্র জমা দেওয়া হয়েছে সেখানে আইনজীবী হিসেবে নাম রয়েছে মো.হারুন-অর রশিদের। অথচ হারুন-অর রশিদ এ মামলায় শুনানি করেননি!
জাহিদ সরওয়ার কাজল জানান, হারুন-অর-রশিদের সনদের নম্বর ব্যবহার করেন জামাল উদ্দিন। তিনি আরো জানান, জামাল উদ্দিন হাইকোর্টের আইনজীবী নন। তিনি গাজীপুর জেলা জজ আদালতের আইনজীবী।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর শ্রীপুরে এক ১০ বছর বয়সি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। অভিযোগ উঠে বিদেশ ফেরত বিল্লাল ভূঁইয়া নামের এক ব্যক্তি এ ঘটনার দায়ী। তাঁর স্ত্রী ও ছেলে বিদেশে থাকে। ধর্ষণের পর বিষয়টি প্রকাশ না করতে হুমকি দিয়ে ওই শিশুকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন তিনি। একপর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে শিশুটি ঘটনাটি তার মাকে জানায়।
পরে শিশুর মা বিল্লাল ভূঁইয়া, রুবেল ভূঁইয়া (২২) ও হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়াকে (৪৫) আসামি করে মামলা করেন। পরে শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হয়।
জাহিদ সরওয়ার কাজল বলেন, ‘শুরু থেকে বিল্লাল পলাতক ছিল। এর মধ্যে ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদনে ধর্ষণের প্রমাণও মিলেছে। পরে ১৭ নভেম্বর এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এ মামলা এখন সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আছে।’
জাহিদ সরওয়ার আরো জানান, এ অবস্থায় চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি আত্মসমর্পণ করেন বিল্লাল। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরবর্তী সময়ে ২৪ এপ্রিল জামিন আবেদন করেন বিল্লাল। ওই আবেদন খারিজ করে দেন গাজীপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ।
তবে ৯ মে হাইকোর্ট তাঁর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। কারণ হাইকোর্টের ওই জামিন আবেদনে বলা হয়, মেয়েটির বয়স ২১ বছর। দুজন একে অপরকে ভালোবাসে। মেয়ের মা সেটি পছন্দ করেন না। ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেনি। কোনো প্রমাণ নেই মেডিকেল সনদে!
জাহিদ সরওয়ার কাজল বলেন, ‘জামিনের আদেশ নিম্ন আদালতে যাওয়ার পর জালিয়াতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আদালতে নজরে আসে। জালিয়াতির বিষয়টি পেয়ে আমাকে জানানো হয়। তাঁরা মেডিকেল সনদ, হাইকোর্টের আইনজীবীর নাম জালিয়াতি করে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছে। কিন্তু আসামি বিল্লাল এখনো বের হতে পারেনি। ও জেলেই আছে।’
Discussion about this post