নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। শিগগিরই এ দুই সিটির দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে।
গতকাল রবিবার দলের সিনিয়র নেতাদের এক বৈঠকে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামান মনিকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। আর গাজীপুরে বর্তমান মেয়র অধ্যাপক আবদুল মান্নান অথবা হাসানউদ্দিন সরকার- এ দু’জনের যে কোনো একজনকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে।
তবে বর্তমান মেয়র নির্বাচন করতে চাইলে তাকেই অগ্রাধিকার দেয়া হবে। অসুস্থতার কারণে তিনি নির্বাচন করতে না চাইলে সেক্ষেত্রে বিকল্প প্রার্থী হাসানউদ্দিন সরকারকে মনোনয়ন দেয়া হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে উপস্থিত সবার মতামত নেয়া হয়। প্রায় সবাই নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে মত দেন।
তবে কেউ কেউ বলেন, বর্তমানে সরকার বিএনপির ওপর যে জুলুম নির্যাতন চালাচ্ছে তাতে নির্বাচনে অংশ নিয়ে দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করানো সম্ভব হবে কিনা- তা ভেবে দেখা উচিত। পাঁচ সিটির নির্বাচনে গাজীপুর ও খুলনার তফসিল আগে দেয়া নিয়েও কেউ কেউ সরকারের ভিন্ন মতলব থাকতে পারে বলে সন্দেহ করেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে উপস্থিত এক ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনগণের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ হবে। চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে চলমান আন্দোলনেও জনগণকে সম্পৃক্ত করা যাবে।
বৈঠকে একাধিক নেতা জানান, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে দুই সিটিতে বিএনপির প্রার্থীই জয়ী হবেন। কারণ বিগত সময়ে বিএনপির জনপ্রিয়তা কমেনি বরং খালেদা জিয়াকে জেলে নেয়ার পর দলের নেতাকর্মীরা সক্রিয় হয়েছেন, দলীয় ঐক্য বেড়েছে।
খালেদা জিয়াকে জেলে নেয়ার পর নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের নিপীড়ন বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপি সাধারণ মানুষের সহানুভূতি পাবে, যা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে বেগবান করবে।
বৈঠকে চেয়ারপারসনের এক উপদেষ্টা বলেন, এ নির্বাচনে জয়-পরাজয় যাই হোক তা কাজে লাগানো যাবে। বিএনপির প্রার্থী জয়ী হলে সরকারের জনপ্রিয়তা নেই- তা প্রমাণ হবে। আবার নির্বাচনে কারচুপি হলে সেটাকেও ইস্যু বানানো যাবে।
নিরপেক্ষ সরকারে অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের যৌক্তিকতা প্রমাণিত হবে। তাই সবকিছু বিবেচনা করে নির্বাচনে যাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি কারাগারে ছয় আইনজীবী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে মামলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এক পর্যায়ে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা উঠলে খালেদা জিয়া নেতিবাচক কোনো মন্তব্য করেননি।
সবার সঙ্গে আলোচনা করে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। চেয়ারপারসনের এমন বার্তা পাওয়ার পর দলটির নীতিনির্ধারকরা কয়েক দফা বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে সিটি নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনা হয়।
সেখানে প্রায় সবাই নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে মত দেন। সর্বশেষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে রবিবার কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
চেয়ারপারসন কারাবন্দি তারপরও দলটির নির্বাচনে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে এক নীতিনির্ধারক বলেন, প্রভাবশালী দেশগুলো চাচ্ছে বিএনপি যেন কোনো নির্বাচন বর্জন না করে।
আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে সিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে অংশ না নিলে তারা বিষয়টি ভালোভাবে নেবে না। এছাড়া এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সিটিতে দলটির সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। ধানের শীষের জয় হলে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বৈঠকে প্রায় সব নেতাই দলের ঐক্যের ওপর জোর দেন। এক নেতা জানান, দলের ভেতর বিভেদ সৃষ্টি করতে সরকার নানা কৌশল চালাবে। নানা গুঞ্জন সৃষ্টি করবে। তাই এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আবদুল্লাহ আল নোমান, মে. (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, বরকতউল্লা বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, মজিবর রহমান সরোয়ার, খায়রুল কবীর খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Discussion about this post