গ্যাসের দাম হঠাৎ করেই সরকার বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারছে না কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। তারা মনে করছে এই দাম বাড়ানো জনগণের উপর বোঝা হিসাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর যত দাম বাড়ানো হয়েছে ওই পরিমাণ অর্থ সব শ্রেণীর মানুষের পক্ষে একা দেওয়া সম্ভব হবে না। তাছাড়া গ্যাসের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি ভাড়ার দাম বাড়বে। পরিবহণ খরচও বেড়ে যাবে। এত করে জনগণের ভোগান্তি বাড়বে। সেই সঙ্গে তাদের জীবনযাত্রারও ব্যয় বেড়ে যাবে।
সিপিবি ও বাসদের দাবি, ২০১৫-১৬ গ্যাস বিক্রি বাবদ আয় ১৬ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। ভ্যাট পেয়েছে ৫৫ শতাংশ, লভ্যাংশ ২ শতাংশ, কর্পোরেট ট্যাক্স ৩ শতাংশ, সম্পদমূল্য মার্জিন ১৫. ৯৬ শতাংশ, গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ড বাবদ ৫.১৪ শতাংশ। সরকার মোট ৮১.১০ শতাংশ নিয়েছে। যার অর্থমূল্য ১৩ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। এরমধ্য থেকে পরিচালন ব্যয় বাদে ৮৩১ কোটি টাকা। গ্যাস ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে জমা ১৯ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে লাভ হয়েছে। এরপরও মূল্যবৃদ্ধিটাকে তারা মেনে নিতে পারছে না। ক্যাবের প্রধান ও দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেছেন, গ্যাসের দাম এই ভাবে বাড়ানো উচিত হয়নি। একবারে এত মূল্যবৃদ্ধিটাও অস্বাভাবিক। এর আগে কখনও এই রকম হয়নি।
তিনি বলেছেন, এই মূল্য বাড়ানোর প্রতিবাদে গ্রাহকরা ও ব্যবহারকারীরা আইনী ভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করতে পারেন। এই জন্য কেন মূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করা হবে না এই ব্যাপারেও আদালতের শরনাপন্ন হতে পারে।
তিনি জানান, ক্যাব থেকেও ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। সেই জন্য বিষয়টি বিবেচনা করা হচেছ।
এদিকে এদিকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে সিপিবি ও বাসদ হরতাল ডেকেছে। তাদের সঙ্গে বিএনপিও সমর্থন দিয়েছে।
কমিশনের তরফ থেকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষনা দেওয়া হয়। ওই সময়ে তাদের এই দাম বাড়ানোর বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি ওই সময়ে শুনানীতে ভোক্তা অধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো এই দাম বৃদ্ধির বিষয়ে বিরোধিতা করে ও যুক্তি তুলে ধরে। তবে সেই যুক্তি কমিশন গ্রহণ করেনি। তারা তাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে করে মার্চ ও জুন মাসে দুইবারে গ্যাসের দাম বাড়বে।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান মনে করেন, যেভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে এটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি না। স্বেচ্ছাচারীতা করা হয়েছে।
সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম গণমাধ্যমে বলেছেন, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন স্বাধীন নিরপেক্ষ সংস্থার ভূমিকা পালন করার কথা। তারা তা করছে না। সরকারের মন্ত্রীদের দুইজন বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে দাম বাড়ানোর সুপারিশ করা হয় সে অনুযায়ী গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বামদলগুলো মনে করছে, গ্যাসের দামের সামঞ্জস্য আনার জন্য সরকার চাইলে মন্ত্রী-এমপিদের গাড়ির ট্যাক্স আদায় করা হোক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর সঙ্গে মিল রেখে পোশাক শ্রমিকদের বেতন নূন্যতম ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হোক।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে সিপিবি ও বাসদ মঙ্গলবার রাজধানীতে হরতাল ডেকেছে। বিএনপির মহাসচিব ঠাকুরগাঁও থেকে এর সমর্থন দিয়ে বলেছেন, সরকার অহেতুকভাবে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। কয়েকটি রাজনৈতিক বামপন্থী সিপিবি, বাসদ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে অর্ধ বেলা হরতাল ডেকেছে, ওই হরতাল সকলের সমর্থন করা উচিত। আমরাও হরতালের সমর্থন জানিয়েছি। তিনি বাড়তি মূল্য প্রত্যাহারেরও দাবি জানান।
Discussion about this post