দুর্নীতি দমন কমিশনের এক নোটিসের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদে আলোচনার একদিন বাদেই হাই কোর্টে গিয়ে আগাম জামিন নিয়েছেন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. জয়নুল আবেদীন।
সাবেক সহকর্মীর আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি এএনএম বসির উল্লাহর হাই কোর্ট বেঞ্চ ছয় সপ্তাহের জন্য তাকে জামিন দেয়।
আদালতে বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুজ্জামান কবির।
মনিরুজ্জামান কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।
“তারপরও একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মামলা না হলেও দুদক তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে, সেটি উল্লেখ করে গ্রেপ্তারের আশঙ্কা থেকে তিনি জামিন আবেদন করেছিলেন।”
হাই কোর্ট আগাম জামিনের পাশাপাশি দুদকের দেওয়া নোটিসের জবাব দাখিলের সময় তাকে গ্রেপ্তার না করার নির্দেশনাও দুদককে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, তাকে কেন নিয়মিত জামিন দেওয়া হবে না তা, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত। চার সপ্তাহের মধ্যে দুদক এবং সরকারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
জয়নুল আবেদীন ১৯৯১ সালে হাই কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। পরে ২০০৯ সালে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে অবসরে যান তিনি।
জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সন্দেহে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই সম্পদের হিসাব চেয়ে তাকে নোটিস দেয় দুদক।
দুদকের দেওয়া ওই নোটিসের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি জয়নুল আবেদীন ২০১০ সালের ২৫ জুলাই হাই কোর্টে একটি রিট আবেদনও করেছিলেন।
তার শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চ বিষয়টি উত্থাপিত হয়নি বিবেচনায় খারিজ করে দিয়েছিল।
এর সাত বছর পর পুনরায় এই বিচারপতির বিরুদ্ধে বিদেশে ‘অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে’ উল্লেখ করে তার বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে গত ২ মার্চ চিঠি দেয় দুদক।
এর জবাবে গত ২৮ এপ্রিল আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, “সাবেক বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুদকের কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ সমীচীন হবে না বলে সুপ্রিম কোর্ট মনে করে।”
কোনো বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অসদাচরণ, দুর্নীতি বা অন্য কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ ছাড়া তার প্রাথমিক তদন্ত বা অনুসন্ধান না করার জন্য আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্টের ওই চিঠিতে।
এদিকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে রোববার সংসদে ক্ষোভ প্রকাশের মধ্যে বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের প্রসঙ্গটিও আসে।
প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করতে গিয়ে এই প্রসঙ্গ তুলে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ওই চিঠি দেওয়ার মাধ্যমে বিচারপতি এস কে সিনহা ‘ন্যায় বিচারের প্রতিবন্ধকতা’ তৈরি করেছেন।
“…যা দণ্ডবিধির অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তিনি সুপ্রিম কোর্টের নাম শুধু ব্যবহারই করেননি, তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্যাড ব্যবহার করেছেন, যদিও এটা ছিল তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।”
Discussion about this post