বিডি ল নিউজ: ‘গ্রেপ্তার ‘ শব্দটি প্রতিদিন প্রত্রিকার পাতায় টেলিভিশনের খবরে আমরা পড়ি এবং দেখি। ব্যাক্তিগত, পারিবারিক বা ব্যবসায়ীক,সামাজিক সহিংসতার পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক কর্মকান্ড সহ নানা কারনে গ্রেপ্তার শব্দটা আমাদের জীবনে প্রতিদিনকার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। আইন সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ ছাড়া অনেকই এই বিষয়ে তেমন কিছু সঠিকভাবে জানেন না বললেই চলে। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ যাদের আইনসম্পর্কিত ধারণা কম। যার ফলে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হন এবং বিভিন্ন ঝক্কিঝামেলা, হয়রানি, বিড়ম্বনানির্যাতন, নিপীড়ন, জুলুমের স্বীকার হন। আশা করি এই আলোচনাটি সেইসব ধোয়াঁশা কাটিয়ে অন্তত কিছুটা হলেও জানতে পারবেন যদি মনযোগ সহকারে পড়েন। সাধারণভাবে বলতে গেলে, আইন সঙ্গতভাবে কোন ব্যক্তিকে তার স্বাধীনভাবে চলাফেরার ক্ষমতাকে হরণ করে আটক করার মাধ্যমে আইনের হেফাজতে বা আওতায় নেওয়াকে গ্রেফতার বলে। এই আটক বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন- শান্তি ভঙ্গের আশঙ্কায়, কৃত অপরাধের শাস্তি প্রদানের উদ্দেশ্যে অথবা নিরাপত্তা দানের উদ্দেশ্যে। এসবগুলোই গ্রেপ্তার হিসেবে বিবেচিত হবে।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহীনি যেসব কারণে একজন ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করতে পারে সেগুলো হল – কোন ফৌজদারি মামলার আসামীকে বিচারে সর্পোদ করার নিশ্চয়তার বিধান করার জন্য। যদি কোন পুলিশ অফিসার সন্দেহ পোষণ করেন যে লোকটি গ্রেপ্তারযোগ্য অপরাধের সাথে সমপৃক্ত। কোন অপরাধ সংঘটন নিবারণ করা বা সর্তকতা মূলক ব্যবস্থা হিসেবে। আমল-অযোগ্য অপরাধীকে তার নাম ঠিকানা যাচাই বাছাই করার উদ্দ্যেশে। পুলিশ অফিসারের কাজে বাধা দান দূর করার জন্য। পুলিশ হেফাজত হতে পালায়নকারীকে পুনরায় হেফাজতে আনার জন্য। যে অপরাধে অভিযুক্ত হলে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করার অধিকার কার্যবিধিতে দেয়া আছে, কারো কাছে ঘর ভাঙার যন্ত্রপাতি পাওয়া গেলে, সেই ব্যক্তি যাকে ‘ঘোষিত অপরাধী’ বলা হয়,যাদের গ্রেপ্তারের জন্য সংবাদপত্র বা গেজেটে ঘোষণা দেয়া হয়, যে ব্যক্তির কাছে চোরাইমাল আছে বলে সন্দেহ করা হয়, কেউ প্রতিরক্ষা বাহিনী থেকে পলায়ন করলে, বাংলাদেশের বাইরে যারা অপরাধ করে তাদের যদি বাংলাদেশে পাওয়া যায়, গুরুতর অপরাধে দন্ডিত ব্যক্তি খালাস পাওয়ার পরও তাদের যেসব নিয়ম মেনে চলতে হয়, সেগুলো যারা ভঙ্গ করে, যেসব আসামিকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তারের জন্য অন্য থানা থেকে অনুরোধ করা হয়। তবে যেকোন প্রকারের গ্রেপ্তার অবশ্যই আইনানুগপন্থায় এবং আইনগতভাবে হতে হবে। প্রতিষ্ঠিত নিয়মঅনুযায়ী আটকের পূর্বে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তা আটকস্থ ব্যাক্তিকে বলবেন ” আমি আপনাকে গ্রেপ্তার করছি”। আইনঅনুযায়ী পুলিশ কর্মকর্তা এবং সাধারন জনগণ উভয় গ্রেপ্তার করতে পারে।
কোন ব্যাক্তিকে গ্রেফতারের নিয়মাবলী বা পদ্ধতিসমূহ হল : আমাদের দেশের বিদ্যমান আইনঅনুযায়ী পুলিশ কর্মকর্তা বা ব্যাক্তি ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট হতে লিখিত অনুমতি নিয়ে আবার না নিয়েও কোন ব্যাক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারেন। যেটাকে আইনের ভাষায় আমরা ‘ওয়ারেন্ট’ বলি। যাহোক কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে প্রথমেই পুলিশ অফিসার উক্ত ব্যক্তিকে কথা বা কার্য দ্বারা গ্রেফতার করার চেস্টা করবেন। যদি তা করা সম্ভব না হয় তাহলে আটকস্থ ব্যাক্তির দেহ স্পশ করে গ্রেপ্তার কার্যকর করবে। যে ব্যাক্তিকে আটক করা হবে যে যদি কোনরকম প্রতিরোধ বা ঠেকানোর চেস্টা করে তাহলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ আটক কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তিসহ প্রয়োগসহ যে কোন ব্যাবস্থা নিতে পারবে। উক্ত ব্যক্তি যদি মৃত্যুদন্ড বা যাবতজীবন কারাদন্ডে দন্ডিত আসামী বা শাস্তি যোগ্য অভিযুক্ত হয় তবে উক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করবে । সাধারনত গ্রেপ্তার করতে গিয়ে আটককৃত ব্যাক্তির মৃত্যু ঘটাতে পারে না। আসামীকে ধরতে পুলিশ অফিসার যে কোন স্থানে/বাড়ীতে প্রবেশ করতে পারেন অর্থাৎ যাকে গ্রেপ্তার করা হবে সে ব্যক্তি যে স্থানে প্রবেশ বা আত্নগোপন করেছে বলে পুলিশের সন্দেহ হয় সে বাড়ীর মালিকের অনুমতি নিয়ে উক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার জন্য প্রয়োজনবোধে বাড়ীতে প্রবেশ করবে এবং তল্লাশী চালাতে পারবেন। যদি উক্ত বাড়ীর মালিক অনুমতি না দেন বা পাওয়া না গেলে সে ক্ষেত্রে বাড়ীর দরজা জানলা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করবেন। পলায়ন প্রতিরোধ করার জন্য যতটুকু প্রয়োজন গ্রেপ্তারকৃত ব্যাক্তির উপর তারঅধিক বাধা প্রদান করতে পারেন না। কোন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে উক্ত অভিযানের কোন সদস্য যদি বাড়ীর ভিতরে আটকা পড়ে সে ক্ষেত্রে মুক্তি লাভের জন্য বাড়ীর দরজা জানলা ভেঙ্গে বাহির হতে পারবেন।
তবে শর্ত থাকে যে, যদি পুলিশ অফিসার জানেন যে সেই বাড়ীতে কোন পর্দানশীন মহিলা আছে, তাহলে তাদের সরে আসার সুযোগ দিবেন। তবে অবশ্যই গ্রেপ্তার কার্যকর করতে গিয়ে এটা মনে রাখতে হবে যে অনুযায়ী আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না, যাতে কোন উক্ত ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম, বা সম্পত্তির হানি ঘটে। উল্লেখ্য, পুলিশ হেফাজতে হতে কোন আসামী পলায়ন করলে পুলিশ অফিসার উক্ত আসামীকে বাংলাদেশের যে কোন স্থান হতে গ্রেফতার করতে পারবে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির জামিনের ব্যবস্থা না থাকলে তার দেহ তল্লাশী করে পরিধেয় বস্ত্র ব্যতীত যা পাওয়া যাবে তা হেফাজতে নিতে হবে। বিশেষ কোন পরিস্থিতিতে আসামীকে গ্রেফতার করার জন্য জনসাধারণের সাহায্য নিয়ে আসামীকে গ্রেফতার করা যাবে। পুলিশ ছাড়াও সাধারন জনগণ কোন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা আইনে বলা হয়েছে । যদি কোনো ব্যক্তি জামিনের অযোগ্য ও আমলযোগ্য যেমন খুন বা গুরুতর অপরাধ করেন,তাহলে যেকোনো সাধারণ নাগরিক বা ব্যক্তিবর্গ ওই অপরাধী ব্যক্তিকে বা অপরাধী বলে ঘোষিত কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারেন। এক্ষেত্রে আবশ্যিক দেরি না করে তাকে পুলিশ অফিসারের কাছে অর্পণ করতে হবে অথবা পুলিশ অফিসার না থাকলে তাকে থানা হেফাজতে দিতে হবে।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যাক্তির করণীয় সমূহ :
আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী পুলিশ যেকোন সময় কোন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারে। যদি কেউ এর স্বীকার হয়েই যান তাহলে একটু সতর্ক হউন । আতঙ্কিত না হয়ে মনোবল স্থির রেখে পরিস্থিতি বুঝতে চেস্টা করুন । আর ঘটনা বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত তথা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন মনোবল হারাবেন না । সব সময় আত্মবিশ্বাস ধরে রাখবেন। দেখবেন সমাধানটা হয়তোবা পেয়ে যাবেন নিজের বুদ্ধিতে। আপনার যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি সেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন ; প্রথমেই গ্রেপ্তার করতে আসা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তাদের পরিচয় জানতে চাইবেন এবং তাদের পরিচয়পত্র দেখতে চাইবেন। আপনার বিরুদ্ধে কোনো গ্রেপ্তারী পরোয়ানা আছে কিনা তা দেখতে চাইবেন। এটি আপনার সাংবিধানিক অধিকার। এখানে উল্লেখ করা দেরকার যে,গ্রেফতারি পরোয়ানা বা ওয়ারেন্ট হল, কোন ব্যক্তিকে আদালতে উপস্থিত করার লক্ষ্যে আদালত কর্তৃক জারীকৃত লিখিত আদেশ, যা প্রিসাইডিং অফিসার কর্তৃক বা ম্যাজিস্ট্রেট বেঞ্চের ক্ষেত্রে বেঞ্চের যেকোন সদস্য কর্তৃক সইকৃত এবং আদালতের সীলমোহরকৃত একটি আদেশনামা। গ্রেফতারের সময় আপনার পূর্ণ পরিচয় সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসার এর নিকট তুলে ধরুন এবং যদি সম্ভব হয় এর সংক্ষিপ্ত কোন পরিচয়পত্র তুলে ধরুন। আত্বপক্ষ সমর্থন করে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা এবং পরিচয় দেওয়ার পরও যদি গ্রেপ্তার এড়াতে সক্ষম না হন, তাহলে আপনাকে সম্ভাব্য অনেক বিপদ থেকে মুক্তি লাভের জন্য সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে। যদি গ্রেপ্তার করতে আসা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কোন সন্দেহ হয় বা অন্যকোন প্রয়োজনে নিকটস্থ থানায় ফোন করে আপনার গ্রেপ্তারের বিষয়টি অবগত করুন বা নিশ্চিত হবেন অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট থানা এ সম্পর্কে অবগত অছে কি না, তা জানার চেষ্টা করবেন। পুলিশের তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদে আপনার পরিচয় দেবেন। বেশি জোরাজুরি করলে বলবেন, আমি সবকিছু আদালতে বলব। কারণ নাম-ঠিকানা বাদে কোনো কিছুই পুলিশকে বলতে আপনি বাধ্য নন। আদালতে বলা আপনার অধিকার। এরপর যত দ্রুত সম্ভব যেকোনভাবে নিকটস্থ কোনো আত্বীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতজনকে গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়ে জানান। যদি কোন কারনে গ্রেফতার এর বিষয়টি উপরোক্ত ব্যাক্তিদেরকে জানাতে না পারেন তাহলে আদালতে হাজির করার পর ম্যাজিস্ট্রেট এর সামনে সরাসরি বিষয়টি জানাবেন। আর যদি যোগাযোগ হয় তাদের মাধ্যমে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছ থেকে মুচলেকাসহ বা মুচলেকা ছাড়া জামিনে আনার জন্য দরখাস্ত দাখিল করবেন অথবা কোর্ট হাজত থেকে ওকালতনামা সংগ্রহপূর্বক আইনজীবী নিযুক্ত করে জামিনে আনার জন্য দরখাস্ত দাখিল করার প্রয়োজনীয় করবেন। বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট বা সংশ্লিষ্ট আদালত থেকেও যদি জামিন দেওয়া না হয়, তবে পর্যায়ক্রমে জেলা দায়রা আদালত এবং পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট বিভাগে জামিনের আবেদন করতে পারবেন। গ্রেপ্তার হওয়ার সময় আটককৃত ব্যাক্তির যা যা সঙ্গে ছিল তা পুলিশ নিয়ে যায় এবং হাজতে আটক রাখার সময় পুলিশ অফিসার পরিধেয় বস্ত্র ছাড়া মূল্যবান জিনিসপত্র যেমন- মোবাইল, টাকাপয়সা, কাগজপত্র ইত্যাদি যা থাকবে তার একটি তালিকা তৈরি করে জমা নিবে। শেষে একটি স্বাক্ষর নিবে। এসময় সতর্কতার সাথে তালিকাটি পরে সবকিছু সত্যতা নিশ্চিত হবার পর স্বাক্ষর করবেন অর্থাৎ সেগুলোর বিবরণ খাতায় লিপিবদ্ধ করার সময় কিছু বাদ দিল কি না অথবা বানোয়াট করে কিছু যোগ করল কিনা সেদিকে লক্ষ্য রেখে খাতায় স্বাক্ষর করবেন। গ্রেফতার হওয়া ব্যাক্তি পুলিশ অফিসার এর নিকট আর কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য না (আদালতের অনুমতি নেওয়ার পর বাধ্য ) যদি কোন বিবৃতি দিয়ে তের তবে তা সতর্কতার সাথে পাঠ করে প্রদত্ত বক্তব্য বা ভাষ্য সঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত হবার পর স্বাক্ষর করবেন। আর কিছু বলে ফেললেও তা সাক্ষ্য হিসেবে আদালতে গণ্য হবে না। যা কিছু বলার তা আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে বলবেন। গ্রেপ্তারের পর থানা বা অন্য কোথাও যত অত্যাচারই করুক না কেন, কাউকে বিশ্বাস করে কখনই কোনো সাদা কাগজে দস্তখত করবেন না। আর যদি নিতান্তপক্ষে চাপে পড়ে বা নির্যাতনের স্বীকার হয়ে তা করে ফেলেন। তাহলে তা যথাসম্ভব দ্রুততার সাথে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কাগজটি উদ্ধারের জন্য শরণাপন্ন হতে হবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিবেন। যেহেতু আইনঅনুযায়ী থানায় বা পুলিশি হেফাজতে অত্যাচার করে পুলিশ কর্তৃপক্ষ কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন না। যদি করা হয়,তাহলে তা সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি। এবং পুলিশ কর্মকর্তা স্বীকারোক্তি নেয়ার জন্য বা অন্য কোনো কারণে কোনো আঘাত বা নির্যাতন করেন, তাহলে আদালতের মাধ্যমে থানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির অধীনে আশ্রয় নিতে পারেন। পাশাপাশি দেওয়ানি আদালতের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা দায়ের করতে পারবেন। গ্রেফতার এর কোন পর্যায়ে অসুস্থ হলে আপনি আদালতের মাধ্যমে বা নিজ উদ্যোগে মেডিকেল চেকআপ করিয়ে এর রিপোর্ট সংগ্রহে রাখবেন এবং চিকিৎসা প্রদানকারী ডাক্তার এর নাম পরিচয় জেনে রাখবেন যা সাক্ষ্য পর্যায়ে আপনার কাজে লাগবে। যদি আটক হওয়ার পর যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ আদালতে হাজির না করে, সে সেক্ষেত্রেও পরবর্তীতে আদালতে হাজির করার সঙ্গে সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি অবহিত করা অথবা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দরখাস্তের মাধ্যমে দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন। এবং পাশাপাশি বেআইনিভাবে আটক রাখার কারণে যে মানসিক, শারীরিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছেন, তার জন্য ফৌজদারি ও দেওয়ানি আদালতে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আর যদি গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বা কর্তৃপক্ষ যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই ব্যক্তিকে আদালতে হাজির না করে বা গোপনভাবে আটক রাখে, তাহলে পরিবারের সদস্যদের করণীয় হলো হাইকোর্ট বিভাগে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হেবিয়াস করপাস এর আওতায় রিট মামলা দায়ের করা। যদি সম্ভব হয় সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিষয়টি মিডিয়ায় প্রকাশ করার ব্যাবস্থা করা। রিট জারির পর আদালত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি ধৃত ব্যক্তিকে দ্রুত হাজির করার ব্যাপারে আদেশ দেবেন।
গ্রেফতারকৃত ব্যাক্তির আইনগত অধিকার গুলো হলঃ
গ্রেপ্তারে পূর্বে আটকস্ত ব্যক্তিকে পুলিশ নিজের পরিচয় দিবেন এবং কারণ দর্শাবেন অর্থাৎ গ্রেপ্তারের সময় ধৃত বক্তির এ অধিকার আছে যে,কোন কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং তার গ্রেপ্তারের জন্য কোনো ওয়ারেন্ট আছে কিনা প্রভৃতি। যদি কোন সাধারণ নাগরিক বা ব্যক্তিবর্গ অপরাধকারী ব্যাক্তিকে বা অপরাধী বলে ঘোষিত কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেন । সেক্ষেত্রে দেরি না করে তাকে যতদ্রুত সম্ভব নিকটস্থ পুলিশ অফিসারের কাছে অর্পণ করবেন অথবা পুলিশ অফিসার না থাকলে তাকে থানা হেফাজতে দিবেন। গ্রেফতারকৃত ব্যাক্তির দেহ তল্লাশীকরে পরিধেয় বস্ত্র ব্যতীত যে সকল মালামাল পাওয়া যাবে তার তালিকা তেরি করে আসামীকে এক কপি দিতে হবে। গ্রেফতারকৃত ব্যাক্তি যদি মহিলা হয় তাহলে অপর কোন মহিলা দ্বারা তার দেহ তল্লাশী করতে হবে। এবং আটকস্ত ব্যাক্তি যদি মহিলা,শিশু, বৃদ্ধ বা অসুস্থ হয় তাহলে তাকে হাতকড়া পড়ানো যাবে না। গ্রেফতারকৃত ব্যাক্তিকে কোন প্রকারের শারিরীক নির্যাতন বা নিষ্ঠুর ব্যবহার করা যাবে না। কোন প্রকারের জোর পূবক স্বীকারোক্তি আদায় করা যাবে না। থানা হাজতে থাকার জন্য ৩৬ বগ ফূট স্কেল বিশিষ্ট জায়গা দিতে হবে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনীয় সুপেয় পানি ও খাবার সরবরাহ করতে হবে। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট হাজির করতে করবেন। কোনো পুলিশ অফিসার যদি কাউকেপরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তার করেন, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতীত ২৪ ঘণ্টার বেশি নিজের হেফাজতে রাখতে পারবেন না। ২৪ ঘণ্টার আগেই ধৃত ব্যক্তিকে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করতে হবে । যদি কোন শিশুকে গ্রেপ্তার করা হয় তাহলে শিশু আইনের ৪৮ ধারা মোতাবেক তাকে জামিন দিতে হবে। গ্রেফতারকৃত আসামীকে তার পছন্দমত উকিল নিয়োগ করে সাহায্য নেয়ার জন্য যথাযথ সুযোগ প্রদান করবেন। গ্রেফতারকৃত আসামীর অপরাধটি যদি জামিন যোগ্য হয় তাহলে তাকে জমিনে মুক্তি দিতে হবে। সবশেষে বলব,আসুন সবাই আমাদের অধিকার ও করণীয় সম্পর্কে সজাগ হই, দেশের আইনকানুন মেনে চলি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তথা ন্যায়ভিক্তিক সমাজ গঠনে এগিয়ে যায়।
তথ্যসূত্র :-
ফৌজদারি কার্যবিধি ধারা ; ৪২/৪৩/৪৬/৪৭/৪৮/৪৯/৫০/৫১/৫২/৫৪/৫৭/৫৮/৫৯/৬১/৬৬/৬৭/১৫১/১৫৩ প্রভৃতি।
বাংলাদেশ সংবিধান অনুচ্ছেদ ;
৩১/৩২/৩৩/৩৫/১০২ প্রভৃতি।
সাক্ষ্য আইন ধারা ;
২৪/২৫/১২৬ প্রভৃতি।
পিআরবি বিধি ;
২২১/৩১৬/৩১৭/৩২২/৩২৪/৩২৭/৩৩০/৩৩৩ প্রভৃতি।
এবং শিশু আইন ;
৪৮ ধারা প্রভৃতি।
লেখক: এম.আর.ওয়াজেদ চৌধুরী ( রায়হান)
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ আইআইইউসি।
ইমেইল: ll.braihan@gmail.com
Discussion about this post