একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গাইবান্ধার সাবেক সংসদ সদস্য ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা আবু সালেহ মুহাম্মদ আবদুল আজিজ মিঞা (৬৫) ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আবারও (আর্গুমেন্ট) যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ২২ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনাল।
আজ বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনালের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নতুন করে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের এদিন ধার্য করেন।
আবদুল আজিজ ছাড়া মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- মো. রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু (৬১), মো. আবদুল লতিফ (৬১), আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী (৫৯), মো. নাজমুল হুদা (৬০) ও মো. আবদুর রহিম মিঞা (৬২)। মামলার ছয় আসামির মধ্যে মো. আবদুল লতিফ কারাগারে আছেন। বাকি পাঁচ আসামি এখনও পালাতক।
আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন ও শেখ মোশফেক কবির। আসামিদের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম ও মো. শাহিনুর ইসলাম।
এর আগে ৯ মে ওই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রায়ের জন্য অপেক্ষামাণ রেখেছিলেন।
১৬ এপ্রিল মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশনের আনা সব সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরার কার্যক্রম শেষ করার পর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ৮ মে দিন ধার্য করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। ওইদিন ট্রাইব্যুনালের ধার্য দিনে ঘোড়ামারা আজিজসহ আসামিদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগের বিষয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশন।
৯ মে আসামিপক্ষের আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম পাল্টা যুক্তিতর্ক শেষ করেন। উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হওয়ায় রায় ঘোষণার জন্য মামলাটি অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন আদালত।
প্রসঙ্গত, আজিজসহ গাইবান্ধার ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। ওই বছরের ২৩ নভেম্বর প্রসিকিউশনের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল ছয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এ মামলায় মাত্র একজন আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। পরে ঘোড়ামারা আজিজসহ সব আসামিকে পলাতক দেখিয়ে আদালতে মামলার বিচারিক কাজ শুরু হয়।
জানা গেছে, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সদস্য আবদুল আজিজ মিয়া ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পযর্ন্ত চারদলীয় জোটের অধীনে জামায়াত থেকে গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জ-১ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাসহ ১৩টি মামলা হয়। সুন্দরগঞ্জ থানা শাখার জামায়াতের সক্রিয় সদস্য রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জুর বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। এছাড়া উপজেলা জামায়াত নেতা আবদুল লতিফের বিরুদ্ধে সুন্দরগঞ্জ থানায় মানবতাবিরোধী অপরাধসহ তিনটি মামলা হয়।
আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী মুক্তিযুদ্ধের আগে ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা ছিলেন। পরে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়।
১৯৭০ সাল থেকে জামায়াতের কর্মকাণ্ডে জড়িত নাজমুল হুদার বিরুদ্ধেও দুটি মামলা রয়েছে। আবদুর রহিম মিঞা মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের কর্মী ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন- এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তার বিরুদ্ধেও দুটি মামলা রয়েছে।
Discussion about this post