চট্টগ্রামে গত দুই বছরে রেকর্ড পরিমাণ সাক্ষ্য ও মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে বিচারিক হাকিম ও মহানগর হাকিম আদালতগুলোতে। এদের মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন ৫৯ হাজার ৭৭৩ জন এবং দুই বছরে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৩৩টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এতো বেশি সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছে এবং মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে এ ঘটনাকে মাইলফলক বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
শুধু তাই নয়, সাক্ষীদের আদালতে হাজিরা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন থানায় থানায় আচমকা হাজির হয়ে সমন ওয়ারেন্ট যাচাই-বাছাই করে দেখেছেন মুখ্য বিচারিক হাকিম মুন্সি মোহাম্মদ মশিয়ার রহমান। একই সাথে যেটা আগের যেকোন সময়ের তুলনায় বেশি। এছাড়া বিচারিক হাকিম (জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি) আদালতের সংখ্যা ১৪টি হলেও বর্তমানে বিচারক রয়েছেন ১৩ জন। এতে আদালতগুলোতে প্রায় সময় আরও কম সংখ্যক বিচারক নিয়ে কার্যক্রম চলে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
আদালতের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিম (সিজেএম) মুন্সি মোহাম্মদ মশিয়ার রহমানের নেতৃত্বে ১৪টি বিচারিক হাকিম আদালতে ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর হতে গত ৭ সেপ্টেম্বর-১৬ সাল পর্যন্ত মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৫ হাজার ৩৬৬টি। একই আদালতগুলোতে এর আগের ২ বছরে (সেপ্টেম্বর ২০১২ হতে সেপ্টেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত) নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা ছিল ৪৬ হাজার ৬০২টি। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে এর আগের দুই বছরের চেয়ে ১৮৭৬৪ টি মামলা বেশি নিষ্পত্তি হয়েছে। গড়ে প্রতি কর্মদিবসে নিষ্পত্তি হয়েছে ১০৭ টি মামলা।
মহানগর হাকিম আদালতগুলো থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম আদালতে মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) হিসেবে মোহাম্মদ শাহজাহান কবির যোগদানের পর মহানগর হাকিম আদালতগুলোতে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে রেকর্ড সংখ্যক। আর আদালতে সাক্ষ্যদান করতে আসা মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে আগের যেকোন সময়ের তুলনায় বেশি। মহানগর ম্যাজিস্ট্রেসিতে আদালত আছে ৮টি। বর্তমানে ৫ বিচারক নিয়েই চলছে বিচারকাজ।
তথ্য অনুযায়ী, সিএমএম মোহাম্মদ শাহজাহান কবিরের নেতৃত্বে পরিচালিত মহানগর হাকিম আদালতগুলোতে গত দুই বছরে মোট মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৯ হাজার ৫৯৭টি। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে এসব আদালতে মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা ছিল ৪২ হাজার ৯৯৯টি। গেল দুই বছরে এর আগের দুই বছরের তুলনায় ৬ হাজার ৫৯৮টি মামলা বেশি নিষ্পত্তি হয়েছে মহানগর ম্যাজিস্টেসির আদালতগুলোতে।
চট্টগ্রামের সাবেক জেলা পিপি এড. আবুল হাশেম বলেন, চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি এবং মেট্রো ম্যাজিষ্ট্রেসি আদালতে গত দুই বছরে রেকর্ড পরিমাণ মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। বর্তমান সিএমএম ও সিজেএমের নেতৃত্বে যে পরিমাণ কাজ করেছেন, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। পৃথকভাবে উক্ত আদালতগুলোতে মামলা নিষ্পত্তি, সাক্ষীদের আদালতে উপস্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ে গতি এসেছে। নজরদারিও বেড়েছে বিচার সংক্রান্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এসবের সুফলও পাচ্ছেন বিচারপ্রার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা।
আদালতের তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, বিচারিক হাকিম বা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি এবং মহানগর হাকিম বা মেট্রো ম্যাজিষ্ট্রেসির মোট ২২টি আদালতে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৩৩টি মামলা। এসব মামলা প্রমাণের অংশ হিসেবে বিচারিক হাকিম আদালতগুলোতে (১৪টি আদালত) গেল দুই বছরে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে ৩৪ হাজার ৪১ জন সাক্ষীর। এর আগের দুই বছর এ সংখ্যা ছিল মাত্র ১৬ হাজার ৯৮১ জন। সাক্ষ্য গ্রহণের হার এক্ষেত্রে ২শ’ গুণ বেড়েছে। এসব আদালতে বর্তমানে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা হচ্ছে ১৭ হাজার ৭৪৮টি। একইভাবে মহানগর হাকিম বা মেট্রো ম্যাজিস্ট্রেসির ৮টি আদালতে গেল দুই বছরের মধ্যে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৬০৭ জন। এর আগের বছর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছিল ১০ হাজার ১২৫ জন সাক্ষীর। দুই বছরে মোট ২৫ হাজার ৭৩২ জনের সাক্ষ্য নেয় এসব আদালত। বর্তমানে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ২৩ হাজার ৩৮০টি।
আদালত থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মুখ্য বিচারিক হাকিম হিসেবে মুন্সি মোহাম্মদ মশিয়ার রহমান ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর যোগদানের পর নতুন আঙ্গিকে মামলাজট নিরসন ও বিচারপ্রার্থীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করে দেয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে উদ্যোগ নেন। কার্যদিবসে সর্বোচ্চ সংখ্যক সাক্ষ্য গ্রহণ, সাক্ষীদের আদালতে উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ, নথি যথাসময়ে রের্কড রুমে প্রেরণ, দ্রুততম সময়ে নকল সরবরাহ, সঠিক সময়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আদালতে উপস্থিত থাকা, মাসিক পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিচারকাজ পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন মুন্সি মশিয়ার।
তাছাড়া সাক্ষীদেরকে আদালতে হাজির করার ক্ষেত্রে গাফেলতি ঠেকাতে তিনি জেলার ১৮ টি থানার প্রত্যেকটি পরিদর্শনে বের হন। এর মধ্যে কয়েকটি থানায় একাধিকবার পরিদর্শন করেছেন এই বিচারক। সেখানে গিয়ে সাক্ষীর সমন পর্যবেক্ষণ করেন এবং থানার অফিসার ইন-চার্জগণকে সময়ের মধ্যে সাক্ষীদের হাজিরা, গ্রেফতারি ও ক্রোকী পরোয়ানা তামিলের নির্দেশ দেন। নিয়মিত পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেসি বৈঠকের ব্যবস্থা করে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির পথে বাধাসমূহ চিহ্নিত করেন ও তার সমাধানের পথ বের করেন।
Discussion about this post