নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নবগঠিত ওয়ার্ডের পূর্ণ মেয়াদকাল (পাঁচ বছর) নিশ্চিত করার দাবিতে আদালতে যাচ্ছেন ৪৮ কাউন্সিলর (সাধারণ ৩৬ ও সংরক্ষিত ১২)। তাদের মতে, মেয়রের ক্ষেত্রে উপনির্বাচন হলেও কাউন্সিলরদের ক্ষেত্রে সাধারণ নির্বাচন হয়েছে।
সে হিসেবে তারা পাঁচ বছর মেয়াদই পাবেন। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং প্রধানমন্ত্রীকে লিখিতভাবে জানিয়েও প্রতিকার না পাওয়ায় এখন মামলায় যাওয়ার কথা ভাবছের তারা।
কাউন্সিলররা আরও জানান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে ৩টি করে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কাউন্সিলররা। এ বিষয়ে ৪৮ কাউন্সিলর ঐক্যবদ্ধ। দক্ষিণ অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ৬৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শফিকুল ইসলাম খান দিলু এবং উত্তর অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ৫২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ফরিদ আহমেদ।
প্রসঙ্গত, চলতি সপ্তাহে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের তফসিল এবং আগামী মাসের শেষ সপ্তাহে নির্বাচন হতে পারে বলে ইতিমধ্যেই আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নতুন ৩৬ ওয়ার্ডে নির্বাচিত কাউন্সিলররা তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন নয় মাস। যদিও নির্বাচন কমিশনের কাছে দেয়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য- দুই সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে সীমানা নির্ধারণসহ অন্য কোনো আইনি জটিলতা নেই।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠান বিষয়ে আইনি জটিলতা সম্পর্কে জানতে আমরা স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি লিখেছিলাম। সেখান থেকে আমাদের লিখিতভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে এ মুহূর্তে কোনো বাধা নেই। সামনে যদি কোনো বাধা আসে, তখন সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৬৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শফিকুল ইসলাম খান দিলু বলেন, সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত কাউন্সিলরদের মেয়াদকাল পাঁচ বছর হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের মাত্র এক বছরের ব্যবধানে সরিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চলছে। এটা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না। আমরা আমাদের পাঁচ বছর মেয়াদকাল বহাল রাখার দাবিতে নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় সরকার বিভাগ, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা এবং সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। কিন্তু কোনো জায়গা থেকে কোনো সমাধান মেলেনি। বিভিন্ন জায়গা থেকে মামলার পথ বেছে নিতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ কারণে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, আজ রবিবার আমরা সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত মামলা করতে চাই। কোনো কারণে আজ মামলা করতে না পারলে মঙ্গলবার অবশ্যই মামলা করব। এরপর ভোটার তালিকার জটিলতার বিষয়ে মামলা করব। বিদ্যমান ভোটার তালিকায় মৃতদের বাদ দেয়া হয়নি এবং নতুনদের ভোটাধিকার দেয়া হয়নি। এছাড়া নানাবিধ সমস্যা রয়েছে ভোটার তালিকায়। সবশেষে তফসিল ঘোষণা হলে রিট করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি আমরা। আদালত ছাড়া আমাদের সমাধানের কোনো পথ খোলা নেই।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ আহমেদ বলেন, সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত কাউন্সিলরদের মেয়াদকাল সর্বোচ্চ পাঁচ বছর। কিন্তু ৯ মাস দায়িত্ব পালন শেষেই আমাদের আবারও নির্বাচনের মুখোমুখি করা হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এজন্য আমরা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় এখন আদালতের পথ বেছে নিয়েছি। সব ঠিকঠাক থাকলে কিছুদিনের মধ্যে আমরা মামলা করব। তবে- আমরা একটি নয়, তিনটি ইস্যুতে মামলা করতে পারি। প্রথমত, সীমানা জটিলতা; দ্বিতীয়ত, ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা এবং তৃতীয়ত, সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদকাল।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মেয়াদকাল পাঁচ বছরের নিচে ছিল- এটার কোনো নজির নেই। কিন্তু বেশিদিন থাকার নজির রয়েছে। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন-২০০৯ এর ধারা-৬ এ সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ সম্পর্কে বলা হয়েছে- কর্পোরেশনের মেয়াদকাল হবে বোর্ডসভা গঠিত হওয়ার পর প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ হইতে পাঁচ বৎসর পর্যন্ত।
তবে শর্ত থাকে যে, সিটি কর্পোরেশনের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও উহা পুনর্গঠিত সিটি কর্পোরেশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যাবে। এ আইন অনুযায়ী সরকার চাইলে দুই সিটির নতুন অন্তর্ভুক্ত ওয়ার্ডগুলোকে বাদ নিয়ে পুরাতন সীমানা নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারে। সেক্ষেত্রে আইনের তেমন কোনো অসুবিধা দেখি না।
তিনি আরো বলেন, আমার মনে হয়, সরকারের এ পথে হাঁটাই উত্তম। সেক্ষেত্রে পরবর্তী দুই সিটি নির্বাচনের সময় নতুন অন্তর্ভুক্ত ৩৬টি ওয়ার্ডের নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকার দুই সিটিতে অন্তর্ভুক্ত নতুন এলাকার নির্বাচনের ব্যাপারে আইনে যা বলা হয়েছে, সে অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উত্তরে আনিসুল হক এবং দক্ষিণে সাঈদ খোকন মেয়র নির্বাচিত হন।
উত্তরের প্রথম বোর্ডসভা অনুষ্ঠিত হয় ১৪ মে ২০১৫ ও দক্ষিণের প্রথম বোর্ডসভা অনুষ্ঠিত হয় ১৭ মে। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯ অনুযায়ী, মেয়াদকালের শেষ সময়ের ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই গত ১৫ নভেম্বর উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং ১৮ নভেম্বর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের উপযোগী হয়েছে।
প্রসঙ্গত, উত্তরের প্রথম নির্বাচিত মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর কারণে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে আতিকুল ইসলাম মেয়র নির্বাচিত হন। এ দিন একই সঙ্গে দুই সিটির সঙ্গে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি করে মোট ৩৬ ওয়ার্ডের সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলিয়ে ৪৮ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। এর মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ৩৬ জন এবং সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ১২ জন।
Discussion about this post