পুঁজিবাজার সংক্রান্ত বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তিতে গঠিত স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল চার মাস ধরে মামলা শুন্য। একদিকে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ, অন্যদিক নতুন মামলা না আসায় অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম।
স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল মামলা না পেলেও অনিয়ম, কারসাজি আর শেয়ার কেলেঙ্কারির শত শত মামলা নিম্ন আদালতে ঝুলে আছে। এছাড়া প্রসিকিউশনের দুর্বলতা, উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে উদ্যোগের অভাব, নিম্ন আদালত থেকে ট্রাইব্যুনালে মামলা স্থানান্তর না হওয়া এবং সরাসরি মামলার সুযোগ না থাকায় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন আদালতে পুঁজিবাজার সংক্রান্ত পাঁচ শতাধিক মামলা রয়েছে। যার প্রায় আড়াইশ’ ক্রিমিনাল (ফৌজদারি) মামলা স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে নিস্পত্তি হওয়ার কথা। তবে ওই মামলাগুলো থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ২৪টি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
এরমধ্যে ছয়টি মামলার রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। আসামিদের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১৬টি মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। দুটি মামলা ট্রাইব্যুনালের বিচারের এখতিয়ারের বাইরে হওয়ায় তা ফেরত পাঠানো হয়।
জানা গেছে, সর্বশেষ বিচারাধীন থাকা ১৯৯৬ সালের প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের শেয়ার জালিয়াতি মামলা আসামিপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত গত ১৭ এপ্রিল ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দেয়। ফলে ট্রাইব্যুনালে মামলাটির কার্যক্রম ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত থাকছে। এরপর থেকে চার মাস ধরে ট্রাইব্যুনালে কোনো বিচারিক মামলা নেই।
মামলা সংকট সম্পর্কে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, এই স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে কেবল পুঁজিবাজারের কারসাজি মামলাগুলোর বিচার করা হয়। এতে দেওয়ানি কিংবা সিভিল মামলার বিচার হয় না। শত শত মামলা থাকলেও নতুন কোনো মামলা ট্রাইব্যুনালে অন্তর্ভুক্ত করা যাচ্ছে না। তবে ট্রাইব্যুনালের ১৬ মামলা উচ্চ আদালতে স্থগিতাদেশ রয়েছে। ওই মামলাগুলোর কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ট্রাইব্যুনালের বর্তমান বিচারক আকবর আলী শেখ চলতি বছরের ১৪ জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি কুমিল্লায় বিশেষ জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
গত বছরের ২১ জুন ১৭টি মামলা নিয়ে রাজধানীর পুরানা পল্টনে হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন ভবনে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেন বিচারক হুমায়ুন কবির (বিশেষ জজ)। ছয়টি মামলা রায় ঘোষণা করেন তিনি।
এর আগে আদালতের কার্যক্রম চলার সময় প্রসিকিউশন দুর্বলতায় বিচার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে বার বার তাগিদ দিয়েছিলেন তিনি। এর প্রেক্ষিতে একজন সিনিয়র আইনজীবিকে নিয়োগ দেয় বিএসইসি। কিন্তু বেশির ভাগ সময় তিনি অনুপস্থিত থাকায় আদালতে মামলার কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০১০ সালে পুঁজিবাজার ধসের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। সেই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুপারিশ করে। এ ছাড়া এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ ছাড়ের শর্তে এ বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের সুপারিশ ছিল। অন্যদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা অনেক বছর ধরে বলে আসছিল বিএসইসি।
এর প্রেক্ষিতে ১৯৬৯ সালের এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ সংশোধন করে ২০১৪ সালের ৭ জানুয়ারি পুঁজিবাজার সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। পরে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শে বিশেষ জজ হুমায়ুন কবিরকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর ২০১৫ সালের ২১ জুন ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়। সূত্র: জাগোনিউজ।
Discussion about this post