বিগঞ্জের বাহুবলে আলোচিত চার শিশু হত্যা মামলায় আইনজীবী নিয়োগের জটিলতার অবসান হয়েছে। বাদিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন আইনজীবী নিয়োগ করেছেন জেলা প্রশাসক।
রবিবার (০৯ অক্টোবর) জেলা প্রশাসকের এক আদেশে হবিগঞ্জের সিনিয়র আইনজীবী ত্রিলোককান্তি চৌধুরী বিজনকে এ হত্যা মামলা পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।
এর আগে মামলার বাদী আব্দাল মিয়া জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেন, মামলাটি চাঞ্চল্যকর হওয়ায় এটি রাষ্ট্রপক্ষের নিয়োজিত স্পেশাল পিপি আবুল কাসেম মোল্লা মাসুমের একার পক্ষে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তিনি একা মামলা পরিচালনা করলে বাদি ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাবিনা আলম রবিবার এ আদেশ দেন।
এদিকে মামলার নির্ধারিত তারিখে এ বিষয়টি উত্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষের পূর্ববর্তী আইনজীবী স্পেশাল পিপি আবুল হাশেম মোল্লা মাসুমের পরিবর্তে আইনজীবী ত্রিলোককান্তি চৌধুরীকে পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ত্রিলোককান্তি চৌধুরী বিজন আগামী ধার্য তারিখ থেকে মামলা পরিচালনা করবেন।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশে বলা হয়, আগামী ধার্য তারিখের আগে মামলার সিডিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি ত্রিলোকান্তি চৌধুরী বিজনের নিকট হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়।
রবিবার দুপুরে এ মামলার নির্ধারিত তারিখ থাকায় আসামি আব্দুল আলী বাঘাল, তার ছেলে জুয়েল, রুবেল, হাবিবুর রহমান আরজু, ছায়েদ ওরফে সাহেদেক জেলা দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার প্রধান আসামি আব্দুল আলী বাঘালের জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। আদালত শুনানি শেষে তার জামিন নামঞ্জুর করে আগামী ১৬ অক্টোবর মামলায় সাক্ষীগ্রহণের তারিখ ধার্য করেন।
এদিকে ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে ঘটনার দায় স্বীকার করা নিয়ে কোর্ট হাজতে আসামি আরজু ও সাহেদের মাঝে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এক পর্যায়ে সাহেদ ক্ষিপ্ত হয়ে আরজুর উপর হামলা চালায়। এতে আরজু গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ প্রহরায় হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আরজুর স্ত্রী জামিনা আক্তার জান্নাত আদালতে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
এর আগে এ মামলায় হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. আতাবুল্লাহর আদালতে আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় উস্তার মিয়া, বেলাল মিয়া এবং বাবুল মিয়া পলাতক রয়েছেন।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকেলে মাঠে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় সুন্দ্রাটিকি গ্রামের মো. ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), তার চাচাত ভাই আব্দুল আজিজের ছেলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তাজেল মিয়া (১০), আবদাল মিয়ার ছেলে প্রথম শ্রেণির ছাত্র মনির মিয়া (৭) এবং তাদের প্রতিবেশি আব্দুল কাদিরের ছেলে ইসমাইল হোসেন (১০)। পরে নিখোঁজের ৫ দিন পর সকালে উপজেলার সুন্দ্রাটিকি এলাকা থেকে ১ কিলেমিটার দূরে ইছাবিলে তাদের বালিচাপা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ মামলায় গত ৪ এপ্রিল তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকতাদির হোসেন ৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। তাদের মধ্যে বাচ্চু মিয়া নামের একজন র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।
Discussion about this post